চীনের সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উরুমুচির ৫ জুলাই'র প্রকৃত ঘটনা অব্যাহতভাবে উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের বিভিন্ন মহল সম্প্রতি এ ঘটনার আবারও নিন্দা করেছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলও এ ব্যাপারে চীনের জাতীয় নীতির ভূয়ষী প্রশংসা করেছে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি হচ্ছেন চীনাদের বন্ধু। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে দু'বার চীন সফর করেছেন। ২২ জুলাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জারদারি ইসলামাবাদে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লুও চাও হুইর সঙ্গে সাক্ষাত্কালে ৫ জুলাই'র ঘটনায় নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, উরুমুচির ৫ জুলাই'র ঘটনায় সিন চিয়াংয়ের অর্থনীতি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীন এ ঘটনার প্রেক্ষিতে যে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে, জারদারি তার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বলেন, ৫ জুলাই'র ঘটনা চীনের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। অন্যান্য দেশের এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের কোন সুযোগ।
চীনের জাতীয় নীতি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখার সময় জারদারি বলেন, চীনের মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসসহ বিভিন্ন ক্ষমতা বরাবরই ফলপ্রসূভাবে সুরক্ষা পেয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিন চিয়াংয়ের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন পাকিস্তানীদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, চীন সরকার ও জনগণ সমাজের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সুরক্ষা করতে সক্ষম।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রহমান মালিক হচ্ছেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তি। ২৩ জুলাই পাকিস্তানে চীনের দূতাবাসের সঙ্গে পাকিস্তানে বসবাসরত চীনাদের নিরাপত্তা জোরদার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার সময় মালিক ৫ জুলাই'র ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছেন। এর পাশাপাশি সমাজের স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য জোরদারের লক্ষ্যে চীন সরকার যে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে ,তিনি তারও প্রশংসা করেছেন।
৫ জুলাই'র ঘটনার ওপর পাকিস্তানের ধর্মীয় মহলের ব্যক্তিবর্গও গুরুত্ব দেন। ২৪ জুলাই পাকিস্তানের শিয়া সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত নেতা, তেহরিক–ই-আখুওয়ার্ত-ই-ইসলামি'র (টিএআই) চেয়ারম্যান ইনায়েত আলি শাকির ইসলামাবাদে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিশেষভাবে সাক্ষাত্ করেছেন। সাক্ষাত্কালে শাকির ৫ জুলাই'র ঘটনায় আরেক বার নিন্দা করেন। তিনি জাতীয় বিভেদ সৃষ্টিকারী, ধর্মীয় উগ্রপন্থী , আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী এ তিনটি অপশক্তির দেশের বিচ্ছিন্নতার অপচেষ্টা দৃঢ়ভাবে বিরোধীতার কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা হচ্ছে 'তিনটি অপশক্তির' পরিকল্পিত ও সংগঠিত একটি সহিংস ঘটনা। এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।
চীন সরকার ও জনগণ দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও সুষম সমাজ ত্বরান্বিত করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, শাকির পাকিস্তানের মুসলমান ও বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিবর্গে পক্ষ থেকে তার প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। সাক্ষাত্কালে শাকির চীনকে বিচ্ছিন্ন করার যে কোন অপতত্পরতার বিরোধীতার কথা আরেক বার ঘোষণা করেছেন। তিনি মনে করেন, সিন চিয়াং চীনের ভূভাগের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ৫ জুলাই'র ঘটনা হচ্ছে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। তিনি আরো বলেন, ৬০ বছর ধরে সিন চিয়াং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেয়েছে।
পাকিস্তানে বসবাসকারী উইগুর জাতির প্রবাসী চীনা ও চীনা বংশোদ্ভুত বিদেশীরাও ৫ জুলাই'র ঘটনায় বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে নিন্দার কথা প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে উইগুর প্রবাসী চীনা সমিতির চেয়ারম্যান রাজা খান ৫ জুলাই'র ঘটনার পর পাকিস্তানে চীনের দূতাবাসে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনাকারীদের ওপর তীব্র নিন্দা করেছেন। ২২ জুলাই রাজা খান সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চেয়ারম্যান নুর বাইকেলি ও পাকিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূত লুও চাও হুই' কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি ৫ জুলাই'র ঘটনায় আরো এক বার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি রাবিয়া কাদিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী তত্পরতা দৃঢ়ভাবে বিরোধীতার কথা প্রকাশ করেছেন।(লিলু) |