বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার শ্রোতা নোমান চৌধুরী তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে প্রতিবন্ধকদের জন্য কি কি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়? উত্তরে বলছি, চীনের বিভিন্ন বড় বড় শহর ও নগরে বধির, মুক ও অন্ধ শিশুদের জন্য ৫শোরও বেশীটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এসব স্কুলে ৮ হাজারেরও বেশী ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এই ধরনের স্কুলে শিক্ষার বিষয়বস্তু সাধারণ স্কুলের সঙ্গে মোটামুটি একই, ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক অবস্থা অনুসারে বিশেষ ধরনের পাঠ্য বিষয় এবং পেশাগতবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। স্কুলের পাঠ শেষ হওয়ার পর গণ সংস্থাগুলো এই সব ছাত্রছাত্রীদের শহরে কাজকর্মের ব্যবস্থা করে অথবা গ্রামে কৃষিকার্যের জন্য পাঠায়। মানসিক বিকারগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে চীন এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। পেইচিং, সাংহাই, নানচিং এবং অন্যান্য কয়েকটি বড় শহরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন সব শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুশীলনের ফলে এই সব স্কুল অনেক উন্নতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশের ফুরিদপু জেলার শ্রোতা গৌরাঙ্গ মন্দী তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞাস করেছেন, চীনের জাতীয় ফুল কি?
প্রিয় বন্ধু, এর আগে বেশ কয়েকজন শ্রোতা এই প্রশ্ন করেছেন। আমারা অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আসলে এই প্রশ্নের্উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। কেননা, কয়েক বছর আগে চীনের জাতীয় ফুল নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরে কোন ফলাফল বের হয়নি। আপনি জানেন, চীন একটি বিশাল দেশ। বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন ফুল চাষ করা হয়। সুতরাং একটি জাতীয় ফুল নিধারর্ণ করা সহজ কাজ নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কোন পযার্য়ে জাতীয় ফুল নিয়ে নিবার্চন করা হয়নি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে, অধিকাংশ চীনা মানুষ এ ব্যাপারের মাথা ঘামাতে চায় না। আপনার এই প্রশ্নের সঠিকভাবে উত্তর না পারায় দু:খিত।
চট্টগ্রামের শ্রোতা তানিয়া আক্তার তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন , চীনে কি হরতাল পালিত হয়?
উত্তরে বলছি, চীনে কখনও হরতাল পালিত হয় না। জনসাধারণ যদি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে চায় তাহলে তারা সরাসরি কতৃর্পক্ষের কাছে অবথা সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে উধ্বর্তন নেতৃস্থালীয় মহলের কাছে ব্যক্ত করতে পারেন। অবশ্যই চীনের সংবিধান অনুযায়ী, চীনের নাগরিকদের আছে বাক স্বাধীনতা, জনসমাবেশ ও জনসভার স্বাধীনতা, সংঘ গঠনের স্বাধীনতা, মিছিলের স্বাধীনতা, বিক্ষোভ প্রদশর্নের স্বাধীনতা ও ধমঘর্টের স্বাধীনতা।
পাবনা জেলার শ্রোতা সৈকত সাদিক তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি ঋতু আছে? শীতকালে কি খুব ঠান্ডা? শ্রোতা বন্ধুরা , এর আগে কয়েকজন শ্রোতাও একই প্রশ্ন করেছেন। আমরা এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এথন আবার এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি , চীনে মোট চাঁরটি ঋতু আছে। বসন্তকাল, গ্রীষ্মকাল, শরত্কাল এবং শীতকাল। আপনি জানেন যে, চীন একটি বিশাল দেশ। সুতারাং, একই ঋতুতে তলেও দক্ষিণ ও উত্তর চীনের মধ্যে তাপমাত্রায় বেশ পাথর্ক্য আছে। শীতকালে উত্তর চীনে শীত বেশী পড়ে। তবু বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা উঠার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর চীনে অতীতের চাইতে কম শীত পড়ে। যেমন ধুরন. গত বিশ ত্রিশ বছর আগে চীনের হেইলোংচিয়াং অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪০ ডিগ্রি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে তাপমাত্রা মাত্র মাইনাস বিশের কাছাকাছি। কিন্তু এখানে উল্লেখ করতে হবে। উত্তর চীনে শীতকালে ঠান্ডা হলেও ঘরে গরম, কারণ ঘরে হিতার ব্যবস্থা আছে। আবার দক্ষিণ চীনে শীতকালে বেশী শীত না পড়লেও ঘরে খুব ঠান্ডা লাগে, কারণ ঘরে হিতার ব্যবস্থা নেই।উত্তর চীনের অধিবাসিরা যদি শীতকালে ঘরে থাকে তাহলে খুব আরাম লাগে। বাংলা বিভাগের বতর্মান দু'জন বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এবং ইলিয়াসখান সাহেবের কথা ধরা যাক। তারা দুজনই প্রথম বার পেইচিংএ শীতের দিন কাটান। গত বছর যখন শীত আসেনি তখন তাঁদের মনে মনে ভয় পেল। মাঝে মাঝে তাঁরা এভাবে বলতেন, ' শীতের দিনে পেইচিংএ এত ঠান্ডা, কি বাঁচবো?' শীত আসার পর তাঁরা টের পেলেন চীনের শীতকাল খুব ভয়ংকর নয়। প্রথম কয়েক দিন মনে হয় একটু তাঁদের পক্ষে কিছু অসুবিধায় হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁরা এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়েছেন। সালাউদ্দিন সাহেব মাঝে মাঝে বলেন, পেইচিংএর শীতকাল তাঁর খুব ভাল লাগে। তিনি শীতের দিনে বাইরে হাঁটতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি বরফের উপর দিয়ে হাঁটেন তখন খুব মজা লাগে। দক্ষিণ চীনের কয়েকটি জায়গায় শীতকালে তাপমাত্রা প্রায় বাংলাদেশের মত। যেমন গুয়াংডোং ও গুয়াংসী অঞ্চল। বাংলাদেশে যে সব ফুলমুল পাওয়া যায় সে সব ফুলমুল এ দু'টো অঞ্চলেও পাওয়া যায়।
ভারতের পশ্চিম বাংলার শ্রোতা পরিতেষ সেন তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনাদের জনপ্রিয় খেলা কি? চীনে কি ক্রিকিট জনপ্রিয়?
প্রিয় বন্ধু, এর আগে অনেক শ্রোতা বন্ধু একই প্রশ্ন করেছেন। যদি চীনে কোন খেলা সবচেয়ে জনপ্রিয় বলতে হয় তাহলে টেবিলটেনিস চীনাদের জনপ্রিয় খেলা বলে গণ্য করা হয়। টেবিলটেনিস চীনের জাতীয় বলকে বলে গণ্য করা হয়। ষাট দশের শেষ দিক থেকে এখন পযর্ন্ত চীনের জাতীয় টেবিলটিনিস দল সবর্দাই বিশ্বের চ্যাপীয়ন দল । চীনের টেবিলটেনিস খেয়াড়ারা আন্তর্জিতিক প্রতিযোগিতায় অজস্র চ্যাপীয়ন অজর্ন করেছেন। বিশ্বের টেবিলটেনিস খেলার মান উন্নত করার জন্যে চীন অনেক কোর্চকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে। তা ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের অনেক দেশে চীনের টেবিলটেনিস খেয়াড়াকে দেখা যায়। তাঁরা অনেক দেশের টেবিলটেনিস ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। চীনে অধিকাংশ লোক টেবিলটেনিস খেলতে পারেন। অসম্পূর্ণ এক পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী, সারা চীনে টেবিলটেনিসের অনোরাগীদের সংখ্যা কয়েক কোটি। চীনের ছোট-বড় শহরগুলোতে টেবিলটেনিস ক্লাব আছে। প্রত্যেক দিন বিশেষ করে ছুটির দিনে অনেক অনোরাগী সাখানে চর্চা করে বা প্রশিক্ষণ নেয়। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যায় পযর্ন্ত টেবিলটেনিস খেলার প্রশিক্ষণ কোস আছে। অনেক মাধ্যমিক স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ টেবিলটেনিস দল আছে। উল্লেখযোগ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শহরের পার্কগুলোতে টেবিলটেনিস ডেস্কও স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যেক দিন লোকেদের পার্কে টেবিলটেনিস খেলতে দেখা যায়। এক কথায় চীনে জনসাধারণের মধ্যে টেবিলটেনিস একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এটা হল টেনিলটেনিস খেলা এত শক্তিশালী বজায় রাখার একটি প্রধান কারণ। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীনে ক্রিকিট মোটেই জনপ্রিয় নয়। দু:খের ব্যাপার হল অনেকেই ক্রিকিট খেলার নিয়মও জানে না। বতর্মানে চীনে কোন ক্রিকিট দলও নেই। আশা করি, ভবিষ্যতে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক চীনা লোক এই খেলা পছন্দ করবেন।
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ মুখোমুখি শুনলেন। মুখোমুখি অনুষ্ঠান শ্রোতাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। চীন সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আপনাদের যে প্রশ্নের উত্তর আমাদের এই মুখোমুখি অনুষ্ঠানে দেয়া হবে। আশা করি আমাদের এই অনুষ্ঠান আপনাদের পছন্দ হয়েছে। আমাদের এই অনুষ্ঠান আরও সুন্দর করার জন্য আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন । আশা করি আগের মতো ভবিষ্যতেও আমাদের এই অনুষ্ঠানের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। আজকের এই অনুষ্ঠান এখানে শেষ হল।
|