v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সি.ই.পি.এ-এর কারণে হংকংয়ের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে
2009-07-23 13:53:02
গত পয়লা জুলাই ছিল চীনের কোলে হংকংয়ের ফিরে আসার ১২তম বার্ষিকী। গত ১২ বছরে হংকং বহু কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও মুলভূভাগের সার্বিক সমর্থনে হংকংয়ের অধিবাসীরা বিভিন্ন কষ্টকর দিকগুলো অতিক্রম করে আজ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। হংকংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে 'চীনের মুলভূভাগ ও হংকংয়ের মধ্যে আরও নিবিড় আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কর্মসূচী' বা সি.ই.পি.এ'র ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

২০০৩ সাল জুন মাসে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও হংকংয়ের মধ্যে চীনের মুলভূভাগ ও হংকংয়ের সম্পর্ক আরও নিবিড় আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কর্মসূচী বা সি.ই.পি.এ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী মালামাল পরিবহন বাণিজ্য, সেবা বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হংকংকে প্রয়োজন অনুযায়ী সবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৪ সালের পয়লা জানুয়ারী এ চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। তারপর দু'পক্ষ অতিরিক্ত চুক্তি আরও ৬টি স্বাক্ষর করেছে। সি.ই.পি.এ সম্প্রসারণের পর হংকংয়ের বিভিন্ন শিল্পের সুযোগ সুবিধাও বেড়েছে। বর্তমানে হংকংয়ের মালামাল মুলভূভাগে প্রবেশের জন্য কোনো শুল্ক লাগে না।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সি.ই.পি.এ স্বাক্ষরের ছ'বছরে হংকংয়ের জি.ডি.পি'র বৃদ্ধির হার এখন ৬ শতাংশ। খুচরা পণ্য বিক্রির বার্ষিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ। মুলভূভাগের সঙ্গে হংকংয়ের আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধির হার হয়েছে ২০ শতাংশ। হংকংয়ের মালামালের ওপর কোনো শুল্ক না নেয়ার কারণে হংকংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ১৩০ কোটি ইউয়ান সাশ্রয় হয়েছে।

হংকংয়ের স্থানীয় সরকার একটি প্রাথমিক হিসেবে জানিয়েছে, গত ৫ বছর সি.ই.পি.এ-র বিভিন্ন সুবিধাজনক ব্যবস্থার জন্য হংকংয়ে প্রায় ৪০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে হংকংয়ে মুলভূভাগের অধিবাসীদের ব্যক্তগত পর্যটন ব্যবস্থা গ্রহণের পর থেকে হংকংয়ে ৬০ বিলিয়ন হংকং ডলার অতিরিক্ত ব্যয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

হংকংয়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও মুলভূভাগ বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক লি রুই লিন মনে করেন যে, সি.ই.পি.এ'র সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে হংকংয়ের অর্থনীতির উন্নয়ন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, 'হংকংয়ের পরিসেবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান ৭০ লাখ লোককে সেবা করছে। এর মধ্যে চু হাই বদ্বীপ অঞ্চলে পাঁচ কোটি ও পরে প্যান-চু হাই বদ্বীপ অঞ্চলে ৪০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে আমরা আশা করি। হংকংয়ের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আমরা মুলভূভাগে নতুন বাজার সম্প্রসারণ করছি।

গত মে মাসের প্রথম দিকে সি.ই.পি.এ'র অতিরিক্ত ৬টি চুক্তি হংকংয়ে স্বাক্ষরিত হয়। তাতে সি.ই.পি.এ'র কাঠামোতে হংকংয়ের পরিসেবা শিল্প মুলভূভাগের বাজারে ৪২টি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটন, ব্যাংক, স্টকমার্কেট, প্রদর্শনী, আইন ও পরিবহণ। বর্তমান আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এ ব্যবস্থা হংকংয়ের অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

থমাস প্ল্যাট যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আন্তর্জাতিক নীতিমালা সমিতির গবেষক। তিনি প্রথম ১৯৯৮ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকটের কথা বলেছেন। তিনি চীন ও এশিয়ার উন্নয়নের ওপর নজর রাখছেন। তিনি বলেছেন, হংকংয়ের নীতিমালা ছাড়া, চীনের মুলভূভাগের সঙ্গে হংকংয়ের নিবিড় আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য হংকং আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রথমে ১৯৯৮ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকটের পর হংকংয়ের নীতির ক্ষেত্রে কিছু মাত্রায় সংস্কার করেছে। সেজন্য চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় আগে যে সমস্যাগুলো ছিল তা আর নেই। তাছাড়া মুলভূভাগের সঙ্গে হংকংয়ের যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য তা হংকংকে সহায়তা করেছে।

তাছাড়া হংকংয়ে বৈদেশিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানও হংকংয়ের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ফর্টিস ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সুপারিটেন্ডেন্ট বক্স জন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, ‌চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনে হংকংয়ের অর্থনীতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বলে তিনি আস্থাবান। তিনি বলেন,

'চীনের একটি অংশ হিসেবে হংকংয়ের ওপর এবারের আর্থিক সংকটে প্রভাব অন্য দেশসমুহের মত নয়। চীনে প্রথমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তা হংকংয়ের অর্থনীতির জন্য অনুকূল হবে। সবাই দেখতে পাবে যে, হাং সেং সূচক ভালোর দিকে।

সি.ই.পি.এ চুক্তিতে নির্ধারিত হয়েছে যে, হংকংয়ের শিল্প পণ্য মুলভূভাগে প্রবেশের সময় শুল্ক সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, ইলেক্ট্রনিক পণ্য ছাড়াও অনেক কিছু।

চিয়া চৌ এয়ার কোম্পানি লিমিটেড হংকংয়ের স্থানীয় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এ কোম্পানি ২০ বছর ধরে উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। এ কোম্পানির ব্যবস্থাপক বিলি এন.জি বলেছেন, সি.ই.পি.এ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তাদের কোম্পানির অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

সি.ই.পি.এ আমাদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যেমে হংকংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠান মুলভূভাগের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারছে। মুলভূভাগের কোম্পানিও হংকংয়ের শিল্প্প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করেছে। আমার কোম্পানি বায়ু বিশুদ্ধকরণ বাজার দেখেছে। বর্তমানে আমরা মুলভূভাগে অনেক কার্যালয় স্থাপন করেছি এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেছি।

সি.ই.পি.এ ছাড়া গত পয়লা জুলাই থেকে হংকংয়ে তৈরী করা কৃষি পণ্য ও চিকিত্সা যন্ত্রাংশসহ ২৮টি পণ্য মুলভূভাগে রপ্তানির শুল্ক দিতে হবে না। (ওয়াং তান হোং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China