আপনারা পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। প্রিয় বন্ধুরা, আজ থেকে " চীনকে জানুন" শীর্ষক সীমান্ত অঞ্চলে সি আর আই সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্কার অভিযান সংক্রান্ত প্রতিবেদন শুনতে পাবেন । বন্ধুরা, আজকের " চীনকে জানুন" অনুষ্ঠানে আমরা চীনের চি লিন প্রদেশের গভর্নরের সাক্ষাত্কার ও চীনের ছাং ছুন আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী দু' গল্প নিয়ে আপনাদেরকে পরিচয় দেবো। প্রথমে শুনুন চীনের চি লিন প্রদেশের গভর্নরের সাক্ষাত্কার সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন।

চি লিন প্রদেশের গভর্নার হান ছাং পিন বলেন, ২০০৩ সালে প্রথম চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে তেজীয়ান করে তোলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন গেলো। ৬ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে চি লিনের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়ন এখন ৬ বছর আগের চেয়ে ২.৪ গুণ বেশি। এ বছরের প্রথম ছ'মাসে চি লিন প্রদেশের জি ডি পি'র প্রবৃদ্ধির হার ১১.৫ শতাংশ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৪ শতাংশ বেশি। খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমানের দিক থেকে চীনের একটি সবচে' বড় প্রদেশ হিসেবে ২০০৮ সালে চি লিন প্রদেশের খাদ্যশস্যের মোট পরিমান ছিল ২৮.৪ বিলিয়ন কিলোগ্রাম। একই সঙ্গে চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদনের পরিমান অব্যাহতভাবে বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে চি লিন প্রদেশ আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে ৫ বিলিয়ন কিলোগ্রামের খাদ্যশস্য অতিরিক্ত উত্পাদনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। হান ছাং পিন বলেন, চীনের খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর বেশ গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" চি লিনের উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় কৃষির ভিত্তিকে আরো জোরদার এবং খাদ্যশস্যের উত্পাদনের শক্তি বাড়ানো অতি জরুরি। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের খাদ্যশস্য উন্নয়নের এক কর্মসূচী অনুযায়ী আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে ২৬ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ে মোট ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ বৃহত্ততম প্রকল্প প্রতিষ্ঠার এখন চলছে। এটি সারা দেশের খাদ্যশস্য মজুদের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে"।

এ ছাড়াও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চি লিন প্রদেশ অব্যাহতভাবে শিল্পের পূর্ণাঙ্গ মান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। গাড়ি, রাসায়নিক, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ, ইলেকট্রোনিক পণ্য, চিকিত্সা, জীব-বিদ্যা এবং ঔষধ তৈরীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিল্প কাঠামোর মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চি লিন প্রদেশ আরও অর্থ বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে হান ছাং পিন বলেন:
" চি লিন প্রদেশ দেশি-বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চি লিনে পুঁজি বিনিয়োগে স্বাগত জানায়। এ জন্য আমরা পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েছি। স্থানীয় সরকার পুঁজি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় ধারাবাহিক সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করেছে।"

চি লিন প্রদেশে কোরিয়া, মান , মঙ্গোলীয় এবং হুই জাতিসহ ৩৫টি সংখ্যালঘু জাতি রয়েছে। সংখ্যালঘু জাতির লোকের সংখ্যা সারা প্রদেশের মোট লোকংসখ্যার ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় চি লিন প্রদেশ সবসময় বিভিন্ন জাতির যৌথ সংহতি ও উন্নয়নের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে এসেছে। তারা সংখ্যালঘু জাতির অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং অবকাঠামো স্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করেছে। এ সম্পর্কে গভর্ণার হান ছাং পিন বলেন:
" আমরা সংখ্যালঘু জাতির উন্নয়নের ওপর বেশি দৃষ্টি দিয়েছি এবং তাদেরকেও বেশ সহায়তা প্রদান করেছি। উল্লেখ্য যে, চি লিন প্রদেশের অনেক সংখ্যালঘু জাতি সীমান্ত অঞ্চলে থাকার কারণে, আমরা বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলের ওপর বেশি নজর দিয়েছি। সেখানে সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগ , শিক্ষাদানের সাজ-সরঞ্জাম এবং চিকিত্সাসহ অনেক ক্ষেত্রের মান এখন আধুনি পর্যায়ে এসেছে।"।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চি লিন প্রদেশ কর্তৃপক্ষের একটি সবচে' যত্নবান ব্যাপার হচ্ছে জীবিকার বিষয়। ২০০৭ সাল থেকে চি লিন প্রদেশ প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, প্রতি বছর জনসাধারণের ৮টি প্রয়োজনীয় বিষয়ের সমাধান করবে। এর মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থান, ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি, চিকিত্সা , সাংস্কৃতিক জীবন, বিশ্লদ্ধ পানি এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিষয়। এর ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের বেশ উপকৃত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" ২০০৮ সাল থেকে চি লিন প্রদেশ বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থের ৭০ শতাংশ জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যবহার করে। জীবিকার একটি মৌলিক বিষয় হচ্ছে কর্মসংস্থান। সেজন্য এর ওপর আমরা সবচে' বেশ গুরুত্ব আরোপ করেছি। এ বছরের প্রথমার্ধে আর্থিক সংকটের প্রভাব পড়লেও আরও ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে"।

প্রিয় বন্ধুরা, এখন আমরা চীনের ছাং ছুনের আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন শুনুন ।
চীনের ছাং ছুনের আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনীর সাংগঠনিক কমিটির একজন কর্মকর্তা চাং চিং ১৭ জুলাই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সীমান্ত অঞ্চল সফররত একটি সাক্ষাত্কার প্রতিনিধি দলকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, আর্থিক সংকটের পটভূমিতে চীনের ছাং ছুনের আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী এর প্রভাবে মোটেও প্রভাবিত হয়নি। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ইতিহাসের একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
ছাং ছুন শহর হচ্ছে চীনের গাড়ি শিল্প শহরগুলোর মধ্যে সবচে' বড় একটি শহর। তাকে চীনের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুতিকাগার বলে অভিহিত করা হয়। এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩০। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স এবং ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চাং চিং বলেন, আর্থিক সংকট চীনের গাড়ি বাজারে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি। জনসাধারণ গাড়ি কেনার উত্সাহ আরও অনেক বেশি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" আর্থিক সংকট হলেও গাড়ি বিক্রীর পরিমান গত কয়েক বছরের চেয়ে আরও বেশি বেড়েছে। এবারের গাড়ি প্রদর্শনীর আওতা এবং নতুন আকারের গাড়ির সংখ্যা ইতিহাসে একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে"।
গাড়ি প্রদর্শনীতে বিশ্ব পর্যায়ের বিখ্যাত গাড়ি অনেক অধিবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তবে গাড়ির তেল সাশ্রয় করতে পারে এমন অর্থনৈতিক আকারের গাড়ি স্টেডিয়ামে অধিবাসীদের সবচে' বেশি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। এ সম্পর্কে পেইচিং আধুনিক গাড়ি লিমিটেড কোম্পানির বাজার বিভাগের একজন কর্মকর্তা চাং ইয়ু সিন বলেন:
" দু'দিনের মধ্যে আমরা ৬০টিরও বেশি গাড়ি বিক্রী করেছি। চলতি বছরের গাড়ি বিক্রীর পরিমান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে আমরা বিভিন্ন আকারের গাড়ির ওপর সুবিধাজনক নীতি প্রদান করেছি। এতে সবচে' বেশি সাশ্রয়ের পরিমান দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ইউয়ান"।
ছাং ছুন শহরের নাগরিক সিন ছিং বলেন, এখন তাঁর পরিবারের অবস্থা বেশ উন্নত হয়েছে। সুতরাং, তাঁর পরিবারের জন্য একটি গাড়ি কেনা দরকার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" এখন আমাদের বেতন বেড়েছে এবং জীবন-যাত্রার মানেরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সুতরাং, আমার পরিবারের জন্য একটি গাড়ি কেনা খুব জরুরি । আমি একটি ১ লাখ ইউয়ানের গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি"।
১৯৯৯ সালে চীনের ছাং ছুনের আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী শুরু হয়। ১৫ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত এবারের ষষ্ঠ গাড়ি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।–ওয়াং হাইমান
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের " চীনকে জানুন" এখানেই শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শ্রোতাবন্ধুরা, " তিব্বতের কথকতা " অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত আমাদের অনুষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ করবে। বন্ধুরা, " চীনকে জানুন" অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন আমার সহকর্মী ওয়াং হাইমান। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, পরবর্তী আসরে আবার কথা হবে। |