v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীন ও পাকিস্তানের মৈত্রী নগর ---খাশি
2009-07-21 22:46:47

খাশি শহরের পুরোনো রাস্তা

    চীনের সিনচিয়াংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খাশি শহর হচ্ছে চীনের সবচেয়ে পশ্চিমাংশের শহর এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে নিকটবর্তী চীনের নগর। বলা যায় খাশি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রীর সেতু এবং চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্য, বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাশি ও পাকিস্তানের বাণিজ্যিক লেনদেনে বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। প্রতি বছর অনেক পাকিস্তানী ব্যবসায়ী সীমান্ত পার হয়ে খাশি শহরে এসে বাণিজ্য ও পর্যটন করেন। জুন মাসের মাঝামাঝি সময় আমাদের সংবাদদাতা এ মনোরম সীমান্ত শহরে গিয়ে তার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আচার-ব্যবহার অনুভব করেছেন। তিনি জানান, সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি যে, চীন ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী গভীরভাবে খাশির অধিবাসীরা মনে রেখেছে।

    চীন ও পাকিস্তান হচ্ছে নদনদী ও পাহাড় ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দু'দেশের ঐতিহাসিক আদান-প্রদান দু'হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয়। এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী বিশ্ববিখ্যাত প্রাচীন 'রেশমী পথ' প্রাচীনকালের খাশি অঞ্চল পার হয়ে বর্তমানের পাকিস্তান অতিক্রম করে পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে পৌঁছেছে। বর্তমান খাশির রাস্তায় দু'দিকে দেখা যায়, প্রাচীনকাল থেকে চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের নানা চিহ্ন। খাশি শহরের ছোট বড় বাজার ও দোকানে পাকিস্তানের উত্পাদিত হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, পোশাক, অলংকার ও মুক্তা দিয়ে তৈরি নানা পণ্য দেখা যায়। অনেক দোকানে পাকিস্তানের চলচ্চিত্রের গান ও পপ সংগীত প্রচার করে। বিশেষ করে পাকিস্তানের পণ্য বিক্রির দোকান এ শহরের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে।

বিদেশী পর্যটকরা খাশি বিমান বন্দর থেকে বের হচ্ছেন

    গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় চীন ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিশেষ করে সীমান্ত বাণিজ্য দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উন্নয়নের সম্মুখীন হয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষিয় সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি ১৯৬৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে। দু'দেশের সীমান্ত বাণিজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার ও চীন সরকারের মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলে পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীন সরকার এর ওপর খুব গুরুত্ব দিয়েছে। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ অ্যান লাই এর জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন এবং সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করেছেন।

    সিনচিয়াং ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আওতা এবং অঞ্চল অনেক বদলে গেছে। ১৯৮২ সালে খাশির থাশিখুর্দান জেলার হোংছিলাপু বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত হয় এবং সেটি হচ্ছে চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্যের একমাত্র স্থলপথ। ফলে খাশি চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। দু'পক্ষের লোকজনের আসাযাওয়াও বেড়েছে। তখন থেকে খাশি শহর অসংখ্য পাকিস্তানী ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় মাতৃভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে চীন ও পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রীর নতুন অধ্যায় রচিত হয়।

    খাশি শহরের সামাই সড়কে চীন-পাক মৈত্রী ভবন নামে একটি দো'তলা হোটেল আছে। ১৯৯৫ সালে নির্মিত ১৭তলা বিশিষ্ট এ হোটেল হলো চীন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি বিরাট পর্যটন প্রকল্প। অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ পরিসেবা ও সুলভ মূল্যের কারণে চীন ও পাকিস্তানের পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এর অনেক সুনাম রয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা এ হোটেলে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, 'আমরা প্রতি বছর খাশিতে আসি। এটাকে আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি বলা যায়। প্রথম দিকে আমাদের ভাষা ভিন্ন বলে স্থানীয় চীনা বন্ধুদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করা খুব কঠিন ছিল। আস্তে আস্তে আমরা কিছু চীনা ভাষা শিখেছি। কেবল চীনা ভাষা নয়, আমরা উইগুর ভাষাও শিখেছি। এর ফলে আমাদের চীনে থাকা ও ব্যবসা করা অনেক সহজ হয়েছে। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা আমাদেরকে বিদেশী মনে করে না। তাঁদের চোখে আমরা আপন ভাইয়ের মতো। চীনের বাণিজ্য পরিচালনা বিভাগ আমাদের ব্যবসা নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে নানা সুবিধা দিয়েছে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China