v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ওয়াং ইউতিনের কাহিনী
2009-07-21 21:01:18
যুগযুগ ধরে তাইওয়ান প্রণালী দুপারের স্বদেশবাসীদের মধ্যে বিনিময় করার একটি সামুদ্রিক পথ ছিল । কিন্তু এক সময় এ প্রণালী দুপারের মধ্যে আসা-যাওয়ার এক বাধা ছিল । গত শতাব্দীর ১৯৭৯ সালের পয়লা জানুয়ারী আইওয়ান সম্পর্কে চীন সরকারের নীতিতে পরিবর্তন হয়েছে । এদিন চীন সরকার তাইওয়ানবাসীদের উদ্দেশ্যে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ।এদিন ছিল একটি আবেগপূর্ণ দিন । তাইওয়ানবাসীদের পক্ষে এটি একটি স্মরণীয় রাত । চীনের কেন্দ্রীয় গণ বেতারের মাধ্যমে চীন সরকারের বিজ্ঞপ্তি শোনার পর অনেক তাইওয়ানবাসী বলেছেন ,আমি খুব উত্তেজিত হলাম । আমি এখন নিজের বাড়ি ফিরে যেতে পারছি ! আমি নিজের দেশে ফিরে যেতে পারছি !ওয়াং ইউতিন তাদের মধ্যে একজন ।

ওয়াং ইউতিন মূলভূভাগের চিয়েনচিয়াং প্রদেশের হুয়াং ইয়েন জেলার লোক। ১৯২৭ সালে তার জন্ম । ১৯৪৯ সালে তিনি ছুংছিং কুওমিনতাং বিমানবাহিনীর আবহাওয়া স্কুলের সঙ্গে তাইওয়াং যান । তাইওয়ানে তিনি চাকরি করেন , বিয়ে করেন এবং স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে জীবনযাপন শুরু করেন । কিন্তু বৃদ্ধ মা ও জন্মস্থানের কথা সবসময় তার মনে পড়ে ।

এ সম্পর্কে চীনের কেন্দ্রীয় গণ বেতারের একজন প্রবীণ কর্মী বলেছেন,---১---আমরা এক শ্রোতা চিঠি পেয়েছি । চিঠিতে বলা হয়েছে,আমি ১৯৪৯ সালে ছুংছিং থেকে তাইওয়ানে আসি । যাওয়ার সময় মার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি । এখন আমি একজন মধ্যবয়সী মানুষ । সবসময় আমার বৃদ্ধ মার কথা মনে পড়ে । আমি মাকে দেখতে বাড়ি যেতে চাই । এ চিঠি লিখেছেন ওয়াং ইউতিন ।

ওয়াং ইউতিন বলেন, মা ও জন্মস্থানের কথা সবসময় আমার মনে পড়ত । সুযোগ হলে যখন কেউ যুক্তরাষ্ট্রে বা জাপানে যান তাদের মাধ্যমে আমি চিঠি পাঠাতাম । সুযোগ পেলে মাকে কিছু টাকা পাঠাতাম । ১৯৭৮ সালে আমি হংকংয়ে বিশেষভাবে মাকে ১ হাজার হংকং ডলার পাঠালাম । মা পেয়ে খুব খুশি হলেন ।

তাইওয়ানে যাওয়ার ৩০বছর পর ওয়াং ইউতিন এক তরুণ থেকে মধ্যবয়সী মানুষে পরিণত হয়েছেন । তার মা-ও ক্রমাগত বুড়ো হয়েছেন কথাটা ভেবে ওয়াং ইউতিনের মনে খুব ব্যথা ও দুঃখ লাগে । তিনি বলেন, আমি পরিবারের সকলের কথা মনে করি । আমি তাদেরকে দেখতে ফিরে যাব । কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তিটি তাইওয়ানবাসীদের মুগ্ধ করেছে । বিজ্ঞপ্তিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে,কতিপয় স্বার্থপর মানুষের কারণে সৃষ্ট বর্তমানের এ বিচ্ছিন্নতা জাতি ও জনগণের স্বার্থ ও ইচ্ছার পরিপন্থী । চীনা মানুষ হিসেবে তাইওয়ানে হোক মূলভূভাগে হোক আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে , এক সঙ্গে দুপারের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটানোর ।

১৯৭৯ সালের জুন মাস ওয়াং ইউতিন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে হংকং বেড়াতে যান । তার আসল উদ্দেশ্য হলো স্বদেশে পরিবারপরিজনদের সাথে দেখা করার সুযোগ খুঁজে বের করা । হংকংস্থ চীনা পর্যটন সার্ভিসের সাহায্যে তিনি মূলভূভাগের আমন্ত্রণ পান । বাড়ি ফিরে মাকে দেখতে যাওয়া তার ৩০ বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে ওয়াং ইউতিনের মনে আবেগে ভরপুর । কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে তিনি স্পষ্টই জানেন যে,এবারের মূলভূভাগ সফরের ফলে তিনি আর

তাইওয়ানে ফিরতে পারবেন না । ওয়াং ইউতিন বলেন, তাইওয়ানে আমার বড় বাড়ি আছে । আমার কারখানা আছে । আমি জানি,মুলভূভাগে গেলে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ আমাকে তাইওয়ানে ফিরতে অনুমতি দেবে না । অনুমতি দিলেও আমার ফিরে যাওয়ার সাহস নেই ।

১৯৭৯ সালের ২৮ জুন বাড়ি ত্যাগের ৩০ বছর পর ওয়াং ইউতিন জাহাজে করে চিয়েচিয়াং প্রদেশের হুয়াংইয়েন জেলায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন । তিনি বলেন, আমি ভাবতে পারিনি যে,এত বেশি লোক আমাকে আদর যত্ন করছেন । ইয়ুছুন আমার গ্রামের নাম । গ্রামের সবাই আমাদের দেখতে আসেন ।

কিন্তু দুঃখের বিষয়,ওয়াং ইউতিনের মা দেড় বছর আগেই মারা গেছেন । তিনি বলেন,আমি দেরিতে ফিরে এসেছি । আমি ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে ফিরে আসি । মা ১৯৭৮ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারী মারা যান । আমি সত্যিই দেরিতে ফিরে এসেছি । আমি মার ভাল সন্তান নই । ওয়াং ইউতিন বলেন, মায়ের কথা স্বরণ হলে তার চোখ দুটো এখনো অশ্রু সজল হয়ে ওঠে । মা জীবিত থাকাকালে তার জন্য কিছু করতে না পারাই ওয়াং ইউতিনের সারা জীবনের এক বড় দুঃখ হয়ে দাঁড়াবে ।

জন্মস্থানে ফিরে আসার পর ওয়াং ইউতিন গ্রামবাসীদের আন্তরিক অভ্যর্থনা পেয়েছেন । স্থানীয় সরকার লোক পাঠিয়ে তাদের নিয়ে এখানেসেখানে ঘুরে বেড়ায় । আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীদের আদর যত্নে ঘরে ফিরে আসা সন্তানের মন ধীরেধীরে শান্ত ও নরম হয়ে ওঠে । এ সম্পর্কে মিষ্টার থাং যিনি সে সময় ওয়াং ইউতিনকে প্রথম অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তিনি বলেন,"তাইওয়ানবাসীদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি"প্রকাশের পর ওয়াং ইউতিন ও তার পরিবার সবার আগে মূলভূভাগে ফিরে আসেন । আমি প্রথমবার তার পরিবারের সবাই ,তার স্ত্রী ও তার সন্তানকে দেখেছি ।সবেমাত্র স্বদেশে ফিরে এসেছেন বলে তারা আমাদের এখানকার সবকিছু বেশি জানেন না । আমরা তাদেরকে হাংচৌয়ের সর্বত্রই ঘুরে বেড়াই । জীবনযাপনের নানা দিক থেকে স্থানীয় সরকার তাদের সাহায্য করেছে এবং বিশেষ করে তাদের জন্য একটি নতুন বাড়ি তৈরী করে দেয় ।

ওয়াং ইউতিন মূলভূভাগে প্রায় ৩০ বছর কাটিয়েছেন । ৮০ বছর বয়সী বুড়ো মানুষ হিসেবে তিনি এখন সুখী জীবনযাপন করছেন । অবসর সময়ে ৩০ বছর আগের কথা প্রায়ই তার মনে পড়ে । তিনি বলেন,৩০ বছর আগে আমি পরিবার নিয়ে তাইওয়ান থেকে মূলভূভাগে ফিরে এসেছি । এ ব্যাপারে আমি কখনো অনুতপ্ত হয়নি । আমার ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাত্তক ছাত্রছাত্রী । আমার মেয়ে স্নাত্তকত্তোর শ্রেণীতে পড়ছে । তারাও কখনো অনুতপ্ত বোধ করেনি ।

৩০ বছর আগে পরিবার নিয়ে তাইওয়ান থেকে মূলভূভাগে ফিরে আসা--নিজের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্মরণ করলে ওয়াং ইউতিন এখনো আবেগপ্লুত হয়ে পড়েন । তিনি প্রায়ই একই কথা বলেন, আমি কিছুতেই অনুতপ্ত বোধ করি না ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China