v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
হিলারি ক্লিন্টনের ভারত সফর
2009-07-21 16:10:17

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২০ জুলাই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতিরক্ষা ও পরমাণু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে দু'দেশের প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতার পথ সুগম হয়েছে। তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের এবারের ভারত সফরে সর্বাধিক সাফল্যের সঙ্গে শেষ হওয়ার প্রতীক।

হিলারি ক্লিন্টন ১৭ জুলাই থেকে পাঁচ দিন ভারত সফর করেছেন। তিনি হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত সফরে আসা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিবিদ। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ওবামা সরকার ভারতকে অগ্রাহ্য করেছে বলে ভারত মনে করে। সেজন্য ভারতের অনেক সংবাদ মাধ্যম হিলারি ক্লিন্টনের এবারের সফরকে সন্দেহের অবসান ও সান্ত্বনার সফর হিসেবে দেখছে।

২১ জুলাই হিলারি ক্লিন্টন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশনা'র সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেছেন এবং প্রতিরক্ষা ও পরমাণু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে ভারত সরকারের হৃদয়ের চেপে থাকা একটি ভারি পাথর যেন নেমে গেল। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে অস্ত্র ও পরমাণু প্রযুক্তি বিক্রি করবে এবং এসব অস্ত্র ও পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্র তারা তত্ত্বাবধান করবে। যাতে অস্ত্র ও পরমাণু প্রযুক্তি অন্য দেশের হাতে না যায় বা চুক্তিতে নির্ধারিত হয় নি এমন কোন বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকা যায়। চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর থেকে অস্ত্র রপ্তানির সব আইনগত বাধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভারতের কাছে স্পর্শকাতর অস্ত্র ও প্রযুক্তি বিক্রির পথ সুগম হয়েছে। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্মিত পরমাণু রিয়্যাক্টর সংক্রান্ত তথ্যাবলি জানিয়েছে বলে হিলারি ক্লিন্টন জানিয়েছেন। তার মানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হলো।

একই সঙ্গে হিলারি ক্লিন্টন আবারও ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে তার বেসামরিক পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতামূলক চুক্তি অব্যাহতভাবে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পালন করবে এবং সহযোগিতার ধারায় আইনগত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক পরমাণু শক্তির ব্যবহারে ভারতকে অব্যাহতভাবে সাহায্য দিয়ে যাবে। হিলারি ক্লিন্টনের খোলামেলা বক্তৃতার ফলে ভারত তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তিকে জি.৮-এর নতুন নীতিগত বাধার সম্মুখীন হবে না বলে চিন্তা মুক্ত হয়েছে।

তাছাড়া এবারের হিলারি ক্লিন্টনের সফর থেকে ভারত সন্ত্রাস দমন এবং ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকেও জানতে চেয়েছিল। আসলে ভারত সফরের সময় হিলারি ক্লিন্টন বিভিন্ন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের সমন্বয় করেন। মুম্বাই সফরের সময় তিনি গত বছর সন্ত্রাসী হামলা হওয়া তাজমহল হোটেলে উঠেন এবং সন্ত্রাস দমনে ভারতকে সাহায্য দেয়ার জন্য সেখানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মৃতি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাছাড়া ভারতে বাণিজ্য ও শিক্ষা মহলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় হিলারি ক্লিন্টন বারবার বলেছেন যে, সম্প্রতি পাকিস্তান দেশের সন্ত্রাস দমনের জন্য যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলাকারীকে অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে। ভারত ও পাকিস্তান পূর্বের মতোই দু'দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন করবে বলে তিনি আশা করেন। কিন্তু হিলারি ক্লিন্টনের চেষ্টার পরেও তেমন একটা সাফল্য দেখা যায় নি। ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে তিনি বহুবার উত্সাহ দিয়েছেন। তবুও পাকিস্তান সরকারের দু'দেশের শান্তিপূর্ণ বৈঠক পুনরায় শুরু করার আগে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব উত্থাপন করা উচিত হবে বলে ভারত সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি অবস্থানে অটল রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের সমন্বয়ে সফল না হওয়া সত্ত্বেও হিলারি ক্লিন্টনের এবারের ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্যের ওপর ততটা প্রভাব পড়ে নি। ভারত সফরকালে হিলারি ক্লিন্টন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ সরকারের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কিছু প্রধান পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা পরমাণু সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমন বিশ্বের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেছেন।

২০ জুলাই সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিন্টন জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ অংশিদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করতে ইচ্ছুক। তিনি মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটি হচ্ছে ওবামা সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিদেশী নেতাদের প্রথম আমন্ত্রণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈদেশিক কৌশলের প্রাথমিক সংস্কারের পর থেকে ওবামা সরকার ভারতের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন করতে যাচ্ছে। যাতে ভারত এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্ত ভিত্তিতে পরিণত হতে পারে। (ওয়াং তান হোং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China