বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ জেলার শ্রোতা এইচ, এম, তারেক তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কি আঞ্চলিক মেলার প্রচলন আছে? উত্তরে বলছি, প্রতি বছর চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের মেলা আয়োজন করা হয়। যেমন চীনের কুয়াংযৌ শহরে প্রতি বছর বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ মেলায় অংশ নেয়। প্রতি বছরে এ মেলায় ব্যাপক অঙ্কের বাণিজ্য লেদেন বাস্তবায়িত হয়। তা ছাড়া, রাজধানী বেইচিং ও চীনের বৃহত্তম মহানগর সাংহাইয়ে প্রতি বছর পোষাক মেলা আয়োজন করা হয়। রাজধানী পেইচিংয়ে বছরে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন মেলা আয়োজন করা হয়। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মেলাও বেশ কয়েক বার পেইচিংয়ে আয়োজন করা হয। যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছরে পেইচিংয়ে পযর্টন মেলা আয়োজন করা হয় । বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল প্রত্যেক বার এই মেলায় অংশ নেয়। চীনের অন্যান্য শহরেও নানা ধরনের মেলা আয়োজন করা হয়। চীন একটি বিশাল দেশ । কারণ বছরে সারা দেশে কত ধরনের মেলা আয়োজন করা হয় তা বলা খুব মুশকিল।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শ্রোতা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ তার চিঠিতে চীনের পরিবার পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছেন।এখন এ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করবো। পরিবার পরিকল্পনা চীনের একটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। সত্তরের দশক থেকে, বিশেষ করে ১৯৭৯ সালের পর থেকে পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। ১৯৭০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক হার ছিল প্রতি হাজারে ২৬জন, ১৯৮১ সালে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় প্রতি হাজারে ১৮.৫৫ । অর্থাত এই দশ বছরে চীনে সাত কোটি লোক কম জন্ম গ্রহণ করে। চীন সরকার " এক সম্পতি এক সন্তান"---এ পরিবার পরিকল্পনার নীতি জনপ্রিয় করার জন্য উত্সাহ দেন। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকায় স্বায়ত্তশাসিত সরকার স্ব স্ব জাতির বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনার নীতি প্রণয়ন করতে পারে।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার শ্রোতা সেকেন্দার আলী শিকদার তার চিঠিতে চীনের সংখ্যালঘু জাতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
প্রিয় বন্ধু, এখন এ সম্পর্কে কিছু বলবো। চীন একটি বহুজাতি অধ্যুষিত দেশ। ৫৬ লাখ বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট এই বিশাল ভূখন্ডে বাস করে ৫৬টি জাতি। চীনের সুদীর্ঘ ইতহাসে তাদের অবদান হল, এক ঐক্যবদ্ধ চীন প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সংখ্যালগরিষ্ঠ হান জাতির সঙ্গে একযোগে চীনের সীমান্ত অঞ্চলের রুপ দিয়েছে, চীনের অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়েছে এবং সৃষ্টি করেছে চীনের ইতিহাস ও চীনা সংস্কৃতি। জাতীয় ঐক্য সাধানের জন্য ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল জাতিসত্তাই যে সমান চীন সরকার সবর্দাই এই নীতিতে অবিচল থাকেন।এই মূলনীতির ভিত্তিতে সরকার জাতিসত্তার সমতা নিশ্চিত করার জন্য একের পর এক বিভিন্ন কর্মনীতি, আইন ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চীনের সংখ্যালঘু জাতিদের লোকসংখ্যা কম হলেও তাদের বাসভূমিক আয়তন বিশাল।সারা দেশের শত করা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। তাঁরা প্রধানত অন্তর্মঙ্গোলিয়া, সিনচিয়াং, তিব্বত , কুয়াংসি, নিসিয়া, হেইলোচিয়াং, চিনিন, লিয়াওনিং , কানসু, ছিংহাই, সিছুয়ান, ইয়ুন্নান , কুইচৌ, ফুচিয়ান ও থাওয়ান প্রভৃতি প্রদেশ বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাস করেন।
বাংলাদেশের কুমিলা জেলার শ্রোতা গালীপ পাশা তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি ঐতিহ্যিক উত্সব আছে? প্রিয় শ্রোতা বন্ধু, এখন এ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করবো। চীন একটি বহুজাতি-অধ্যুষিত দেশ। এর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঐতিহ্যিক উত্সব আছে। এই উত্সবের দিনে তারা নতুন বেশভূষা পরে, ভালো খাবার খায় এবং নৃত্য-গীত অনুষ্ঠান করে। চীনের প্রধান কয়েকটি উত্সব হল: বসন্ত উত্সব, লন্ঠন উত্সব, ছিংমিং উত্সব, ড্রাগন-নৌকা উত্সব, মধ্য-শরত উত্সব, লোক-সঙ্গীত উত্সব , জল-নিক্ষেপ উত্সব, তিব্বতীয় নববর্ষ , মশাল উত্সব, তানু উত্সব। এগুলো উত্সবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব হল: বসন্ত উত্সব। এখন চীনের দু'টো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যিক উত্সব --বসন্ত উত্সব ও মধ্য-শরত উত্সব সম্পর্কে কিছু বলবো।প্রথমে বসন্ত উত্সব সর্ম্পকে। প্রতি বছর শীতকাল পেরিয়ে বসন্তকালের মুখে সারা চীনের জনগণ খুব ধুমধামের সঙ্গে তাদের বছরের প্রথম ঐতিহ্যিক উত্সব---বসন্ত উত্সব পালন করেন। অতীতে, এই বসন্ত উত্সবকে নবর্বষ উত্সব বলা হত। বারণ তিন হাজার বছর থেকে চলে আসা চান্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী এটাই হয় বছরের প্রথম দিন। গত শতাব্দীর প্রথম দিকে চীন গ্রেগরি ক্যালেন্ডার গ্রহণ করলে চান্দ্র নববর্ষ চীনের বসন্ত উত্সবরুপে উদযাপিত হতে থাকে। বসন্ত উত্সবের আগের দিন সন্ধ্যা পরিবারের সদস্যদের পুনর্মিলনের এক বিশেষ মুহুত রুপে গণ্য হয়। সবাই একত্রিত হয়ে সুন্দর " নববর্ষের প্রাক্কাল ভোজে" যোগদান করে। তারপর মধ্য রাত পযর্ন্ত তারা এক সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে বা খেলাধুলা করে। কোনো কোনো পরিবারের সদস্যেরা সারা রাত না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন, একে বলা হয়" বছরের শেষ দেখা"। মধ্যরাতে পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবার জন্য বাজি পোড়ানো শুরু হয়। বসন্ত উত্সবের দিনে তিন দিনের ছোটি পালিত হয়।
এখন মধ্য-শরত উত্সব সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করবো। অষ্টম চান্দ্রমাসের পঞ্চদশ দিনে মধ্য-শরত উত্সব উদযাপিত হয়। প্রাচীন কালে চীনের সম্রাটরা বসন্তকালে সূর্য আর শরত্কালে চাঁদের উদ্দেশে অর্ঘ্য অর্পন করতেন। মধ্য-শরত উত্সবের শুরু তখন থেকেই। এই দিনে চাঁদের উদ্দেশেই অর্ঘ্য দেয়া হয়। এই উত্সবের দিনে লোকেরা সুস্বাদু পিঠা তৈরী করে চাঁদদেবতাকে ভোগ দেয়। ভোগ অনুষ্ঠানের পর পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে পিঠা খেতে বসে। এই উত্সব পারিবারিক মিলন ও আনন্দের সুযোগ করে দেয়। এই রীতি ও আচার অনুষ্ঠান প্রাচীন কাল থেকে আজও প্রতি বছর পালিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শ্রোতা মাহবুর উদ্দিন চৌধুরী তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে নারীদের সামাজিক মর্যাদা কি রকমের ? এখন চীনের নারীদের সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে কিছু বলবো। নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অব্যবহিত পরের বছরগুলোতে চীন সরকার কর্মসংস্থানের ব্যাপারে পুরুষ ও নারীদের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করার এবং একই কাজের জন্য একই পারিশ্রমিক দেয়ার নীতি প্রণয়ন করে। এতে নারীদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম ও প্রশস্ত হয় এবং সমাজের নানা কাজে ও শ্রমে অংশ নিতে নারীদের উত্সাহ ও সর্মথন দেয়া হয়, ফলে দেশের উত্পাদন কাজের উন্নতিতেও তা অনেক সহায়ক হয় , এবং সরকারের উত্সাহদানে নারীরা দলে দলে পরিবারের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গৌরবময় সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ কাজে অংশ নিতে থাকেন। বতর্মানে সমাজের নানা কাজে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে নারীরা পরুষদের ওপর নির্ভরশীল না থেকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছেন। চীনে নারীকে" অর্ধেক আকাশ" বলে গণ্য করা হয়। এ কথা বলা যায়, চীনে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে কোন বৈষম্য দেখা যায় না। প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ মিতালী শুনলেন। আমাদের প্রতি শনিবারের " শ্রোতা সন্ধ্যা " আপনাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান । আশা করি, আগের মত ভবিষ্যতেও আমাদের এ অনুষ্ঠানের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। আমাদের এ অনুষ্ঠান আরও সুন্দর করার জন্য আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। |