v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনে ধান চাষ করা বিদেশী কৃষক
2009-07-16 21:19:05

 

সিনইয়াং শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের সিনসিয়েন জেলার স্যুই ওয়ান থানার ইউওয়েইচি গ্রামে " সবুজ কৃষি উদ্যান"নামে একটি বিরাট কৃষিজমি আছে । পাতলা এবং শ্যামলা রঙের একজন পুরুষ ট্রাক্টর চালিয়ে জমি সমতল করছিলেন । তার মাথায় টুপি এবং শরীরে পোশাক পরিচ্ছদপরার পাশাপাশি তিনি পায়ে পরেছেন রবারের লম্বা জুতাও । তিনিই হলেন জাপান থেকে ধান চাষ করতে আসা "বিদেশী কৃষক থাচিমাচি ।

৫৩ বছর বয়সী থাচিমাচি জাপানের একটি কৃষি খামারের মালিক । ২০০৮ সালের শেষ দিকে তিনি হোনান প্রদেশের সিনসিয়েন জেলায় এসে ঠিকার ভিত্তিতে জমি চাষ শুরু করেন । তিনি বলেন, চীনের কৃষি সহায়তা নীতির আকর্ষণে তিনি চীনে জমি চাষ করতে এসেছেন । তিনি বলেন, জাপান চীনে যে অর্থবিনিয়োগ করেছে তা শুধু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ শিল্পজাত দ্রব্য । কৃষিতে কোনো অর্থবিনিয়োগ নেই । আমি লক্ষ্য করেছি যে, চীন এখন কৃষির ওপর খুব গুরুত্ব দিচ্ছে এবং জমি সম্পর্কিত নীতিও খুব ভাল । যদি জমি ভাড়া দেয়া বা নেয়া যায় তাহলে অনেকে চীনে কৃষিতে অর্থবিনিয়োগ করতে আসবেন ।

সিনসিয়েন জেলার ল্যু ছুনসিয়া নামে একজন কৃষকের পরামর্শে থাচিমাচি চীনে এসেছেন । ২০০৫ সালে ল্যু ছুনসিয়া সিনসিয়েন জেলার শ্রম ব্যুরোর মাধ্যমে জাপানে মজুরী করতে যান । তিনি থাচিমাচির কৃষি খামারে তিন বছর ধরে শিখার্থী হিসেবে কাজ করেছেন । পরিশ্রমী এবং সরল ল্যু ছুনসিয়ার মাধ্যমে থাচিমাচি ও তার পরিবার নতুন করে চীনকে জানতে পেরেছেন । এ তিন বছরে ল্যু ছুনসিয়া মাঝেমাঝে তাঁকে চীনের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষকের সমস্যা এবং কৃষি-জমি সম্পর্কে চীনের নতুনতম নীতি ও পরিবারের ঠিকার ভিত্তিতে বন্টন ব্যবস্থার কথা বলতেন । চীনের গ্রামাঞ্চলের কথা শুনে থাচিমাচি খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেন । গত বছরের শেষ দিকে কার্যমেয়াদ শেষে ল্যু ছুনসিয়া স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন । থাচিমাচিও তার সঙ্গে চীনে এসে ঠিকার ভিত্তিতে জমি চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন । এ সম্পর্কে ল্যু ছুনসিয়া বলেন, আমি তাদেরকে জানিয়েছি ,জাপানে যন্ত্রায়ন হয়েছে । কিন্তু আমাদের ওখানে কৃষি যন্ত্রপাতি নেই বলে মানুষরা খালি হাতে জমি চাষ করতে থাকে । আমার কথা শুনে তিনি বললেন,আমি আপনাদের ও খানে গিয়ে অর্থবিনিয়োগ করতে চাই কেমন ?তার পর তিনি আমাদের সঙ্গে চীনে চলে আসেন ।

২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে চীন সরকার প্রাসঙ্গিক নীতি সংশোধন করে কৃষকদের নানা পদ্ধতিতে সরকারের বন্টন করা কৃষিজমি ভাড়ায় দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে । তবে এর আগে থেকেই সিনসিয়েন জেলায় জমি ভাড়া দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে । ইউওয়েইচি গ্রামে ৪০ হেক্টর জমি রয়েছে । গত কয়েক বছরে শুয়োর লালনপালন ও মাসরুম চাষে এ গ্রামের প্রায় অর্ধেক জমি ভাড়া দেয়া হয়েছে । তবে একজন জাপানীকে ধান চাষে জমি ভাড়া দেয়া সিনইয়াং শহর তথা হোনান প্রদেশে প্রথম এমন কি গোটা চীনে খুব কম দেখা যায় । সে সময়কালের চিন্তার কথা বলতে গিয়ে ইউওয়েইচি গ্রাম কমিটির প্রধান ইউ হুয়াচিন বলেন, সত্যি বলতে কি, আমাদের ভয় ছিল । বিশেষ করে গ্রামবাসীদের ভয় ছিল যে, যদি জমি ভাড়া নেয়ার পর তারা চুপি চুপি চলে যায়,তাহলে জাপানে কোথায় তাদের পাওয়া যাবে ?

স্থানীয় সরকার ও গ্রামের ক্যাডারদের সমন্বয়ে গ্রামবাসীদের চিন্তা দূর হয়েছে । থাচিমাচি গ্রামের ১৪০জন কৃষক পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ২০ হেক্টর জমি ভাড়া নিয়েছেন । প্রতি বছর প্রতি হেক্টর জমির ভাড়া হল ৩৭৫০ কেজি ধান অথবা সমান মূল্যের নগদ টাকা । নির্দিষ্ট এক বছর আগে ভাড়া দিতে হবে এবং ভাড়া দেয়ার মেয়াদ হবে ১০ বছর ।

থাচিমাচি ও গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাক্ষরিত জমি ভাড়া চুক্তিতে গ্রামবাসীরা খুব সন্তুষ্ট। গ্রামবাসী ইউ কুয়াংচুং বলেন, বাস্তব অবস্থার কথা বিবেচনা করে বুঝা যাবে যে, নিজে কতৃর্ক জমি চাষের তুলনায় ভাড়া দেয়া অনেক ভাল । তিনি বলেন,সাধারণ এক বছর আমার পরিবার ৫-৬শ কেজি ধান উত্পাদন করত । রাসায়নিক সারসহ নানা ক্ষেত্রের ব্যয় বাদ দিয়ে আমরা বছরে মাত্র ২-৩শ ইউয়ান পেতাম । এর চেয়ে জমি ভাড়া অনেক ভাল । তাছাড়াও আমরা বাইরে গিয়ে মজুরী করে উপার্জন করতে পারি ।

থাচিমাচি জাপানের একজন কৃষি খামার মালিক ছিলেন । জমি চাষ তার প্রধান কাজ ছিল। তার দেড়শ হেক্টর জমি আছে । জমি চাষে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় ।যন্ত্রায়ণের জমিচাষ চীনে আসা এবং উন্নত ও আধুনিক কৃষি উত্পাদন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ঠিকার ভিত্তিতে জমি ভাড়া নিতে এসেছেন । "সবুজ কৃষি উদ্যান"নামে কৃষি খামারের প্রধান ল্যু ছুনসিয়া বলেছেন, যন্ত্রায়নের মাধ্যমে জমিচাষ বাস্তবায়নের জন্য তারা একটি বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছেন । তিনি বলেন, দুটি নতুন ট্রাক্টর, চারা বপন যন্ত্রপাতি এবং জাপান থেকে ১২টি যন্ত্রপাতি কেনায় আমরা ২০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করেছি । টুকরো টুকরো কৃষি জমি বড়বড় জমিতে পরিণত হলে জমিচাষ সুবিধা হয় ।

দ্রুত ৬ মাস পার হয়ে যায় । স্থানীয় লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা"সবুজ কৃষি উদ্যান"বড় আকার নিয়েছে । টুকরো টুকরো জমি বড় বড় জমিতে পরিণত হয়েছে । এর ওপর স্থাপন করা ২০টিরও বেশি গ্রীণ হাউস থেকে নানা টাটকা শাকসব্জি ও ফলের সুগন্ধ ভেসে আসে ।

প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া গেলেও যে ব্যয় হয়েছে তা অল্পসময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় । থাচিমাচি বলেছেন, তিনি আরও ৬০ হেক্টর জমি ভাড়া নিতে চান ।সম্ভবহলে তিনি জাপানের ধানের বীজ আমদানি করবেন । তাছাড়া তিনি এখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চান । যাতে স্থানীয় কৃষকরা প্রগতিশীল কৃষি প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারেন । তিনি বলেন,আমি কোম্পানিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাই । যাতে প্রশিক্ষণকারীরা প্রশিক্ষণ নেয়ার সাথেসাথে জাপানী ভাষা শিখতে পারেন । তারা জাপানে গেলে সহজে কাজ পাবেন । আর যারা জাপানে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে আসবে তারা এখানে কাজ করতে পারবেন । চীন সরকার আরও বেশি সুযোগসুবিধা দেবেন বলে আমি আশা করি । যাতে আমার আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা যায় ।

"বিদেশী কৃষক" থাচিমাচির আশার ওপর স্থানীয় সরকার খুব গুরুত্ব দিয়েছে এবং অনেক সুবিধাজনক নীতি ও সহায়তা দিয়েছে । নীতি অনুযায়ী তার ভাড়া নেয়া প্রতি হেক্টর জমি চীন সরকারের দেড় হাজার ইউয়ান করে ভর্তুকি পায় ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China