v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পেইচিংয়ের একটি বড় আন্তর্জাতিক পরিবার
2009-07-16 21:19:05

     পেইচিংয়ে এমন একটি বড় আন্তর্জাতিক পরিবার আছে। দাদা একজন চীনা। দাদী মার্কিনী। তাঁদের সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন। তিনি পেইচিংয়ে তাঁর জার্মান স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তাঁদের চারটি সন্তানের সবার জন্মই চীনে।

    ১৪ জুন দাদি এলেনোর ই.লিউ'র ৯০ বছর জন্মদিন পালিত হয়। তাঁদের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের অতিথি সম্মিলিত হয়ে এখনো সুন্দর ও প্রাণচঞ্চল ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। দরজার দু'পাশ অতিথিদের দেয়া উপহার ও ফুলে ভরে গেছে। জার্মান বন্ধুরা দাদীর জন্য এক একটি গান উপহার দেন।

    ৬০ বছর আগে দাদা ও দাদীর যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয় হয় এবং ১৯৫০ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের ২৮ বছর পর অর্থাত্ ১৯৭৮ সালে মাদাম লিউ প্রথমবারের মতো তাঁর স্বামীর মাতৃভূমি – চীনে এসেছেন।

  'আমার স্বামীর বাড়ি হুনান প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে। আমি প্রথমবার সেখানে যাওয়ার সময় তাঁর পরিবারপরিজন আমাদের জন্য বাসর ঘর সাজিয়েছেন এবং ঘরে লাল মোমবাতি জ্বালিয়েছেন। তাঁদের আতিথেয়তা ও বন্ধুত্ব আমাকে সত্যি মুগ্ধ করেছে।

     সে বছর আমরা পেইচিংয়ে এসেছি এবং চীনের আরও ১৫টি শহর ভ্রমণ করেছি। তখন পেইচিংয়ে খুব উচ্চ ভবন ছিল না। সর্বচ্চ ভবন হচ্ছে আট তলার পেইচিং হোটেল। আমি নির্মিত ছয় তলার একটি আবাসিক ভবন দেখতে গিয়েছি। আমরা কারখানা ও লোকশিল্পের কর্মশালাও দেখতে গিয়েছি। তখন সংগীতানুষ্ঠান ছিল খুব কম। দরাবাজির খেলা ছিলো তখনকাল প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

    আমি একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। ফলে আমি যে কোন একটি শহরে গেলে গির্জা খুঁজি। পেইচিং, কুয়াংচৌ ও ছাংশানের মতো বড় শহরে একাধিক গির্জা আছে। তখন কেবল বয়স্ক লোকেরা গির্জায় যেতেন। কিন্তু এখন অধিক থেকে অধিকতর যুবকযুবতীও গির্জায় যান।

    ১৯৮৪ সাল থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে পেইচিংয়ে থেকেছি। আমি প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দশ বারো বছর ধরে ইংরেজী ভাষা শিক্ষাদান করেছি। দশ বারো বছর আগে আমি থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ শেখা শুরু করি। এখন প্রতি সপ্তাহে আমি কয়েক বার থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ চর্চা করি। আমার বাড়ির আশেপাশে অনেক বন্ধু আছে, তাঁরাও থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ পছন্দ করেন। তা ছাড়া আমি প্রতি সপ্তাহে সাঁতার কাটি, প্রতি রবিবার গির্জায় যাই। ফলে আমি খুব স্বাস্থ্যবান।

    ৩০ বছর আগে আমি পেইচিংয়ে আসার সময় এখানকার সবুজ রং খুব কম ছিল। এখন এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে। যদিও মোটর গাড়ি বৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি তেল গ্যাস দূষণও বেড়েছে। তবু কারখানাগুলো শহরের বাইরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর শহরাঞ্চলের জলবায়ু আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে, ফুল ও ঘাস বেশি হয়েছে। পেইচিং শহরের সবুজায়ন কাজের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন আমার ছেলে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ করে।'

    মাদাম লিউ'র ছেলে লিউ ডে লি'র যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হয়েছে এবং সেখানেই বড় হয়েছেন। ১৯৭৯ সালে তিনি ২৬ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো তাঁর বাবার স্বদেশের মাটিতে পা দিয়েছেন। তিনি পেইচিং ভাষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। চীনা ভাষা শেখার পর তিনি কলম্বিয়া বেতার কোম্পানির পেইচিং শাখা অফিসে দশ বছর কাজ করেছেন। বিংশ শতাব্দীর ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি পরিবেশ সুরক্ষা কাজে মনোযোগ দেন।

   'আমি আসার সময় চীন খুব দরিদ্র ছিল। তখন পেইচিংয়ে সবুজ রংও কম দেখা যেতো। কিন্তু সে সময় দূষণও ছিলনা। কারণ তত্কালীন ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ এবং গাড়ির তেল গ্যাসও কম ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পরিবেশ দূষিত হয়। চীনের আকাশ পাতাল পরিবর্তন ঘটার সাথে সাথে চীন পরিকল্পনা অর্থনীতি থেকে পুরোপুরি বাজার অর্থনীতির দিকে রূপান্তরিত হয়। এখন চীনের মুক্তির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। উন্মুক্তকরণের পর ৩০ বছরে চীনে শান্তি ও সমৃদ্ধি পূর্ণ।

    এক সময় চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সৃষ্ট দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি বিপুল পরিমান দূষণও সৃষ্টি হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছি যে, পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় আমাকে কিছু কাজ করতে হবে। এটা হচ্ছে আমার দায়িত্ব। ১৯৯৫ সালে আমি তথ্য মাধ্যমে বহু বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে 'পরিবেশ দিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে শিক্ষাদান প্রকল্প' চালু করি। অর্থাত্ আমি বিদেশ থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন চলচ্চিত্র চীনে আমদানি করি এবং চীনের জনগণকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সচেতনতা জাগিয়ে তুলি। এরপর আমরা চীনের জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা সাধারণ ব্যুরোর সাহায্যে 'চীন-জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা কেন্দ্রে' চীনের সবচেয়ে বড় পরিবেশ বিষয়ক তথ্য ভান্ডার স্থাপন করেছি। এ ছাড়াও আমরা চলচ্চিত্র শুটিং, পানি, জলাভূমি ও তৃণভূমিসহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজও করেছি।'

    ১৯৯৫ সালে লিউ ডে লি পশ্চিম চীনের পরিবেশের ওপর দৃষ্টি দেন। তিনি ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে পীত-মাটির মালভূমি সংক্রান্ত ছবি তুলেছেন এবং সেখানকার বিনষ্ট প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য কল্যাণকর কাজ করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, 'বিংশ শতাব্দীর ৬০ ও ৭০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রর পরিবেশ ভীষণ দূষিত ছিল। তখন সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায় নানা ধরনের কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। এখন চীনের জনগণের পরিবেশ সুরক্ষার সচেতনতাও অনেক বেড়েছে। প্রথম দিকে আমরা একটি জরীপ করেছিলাম। জরীপে অনেকে বলেছেন, পরিবেশের সমস্যার সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু এখন যদি আপনি এ ধরনের জরীপ করেন, তাহলে তারা আপনাদের বলবেন, একটি পরিষ্কার পরিবেশ জীবনের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।'

    পীত-মাটির মালভূমির পরিবর্তন দেখে লিউ ডে লি আনন্দ বোধ করেন। কারণ তিনি মনে করেন, পীতমাটিকে সবুজায়ন করার পর স্থানীয় জনসাধারণ একটি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, 'এখন চীনারা একটি সঠিক দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রাকৃতিক গ্রাম ও শিল্প উদ্যানের নির্মাণকাজ নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করেন এবং তা কার্যকর করেন। আবাদি জমির পরিবর্তে বনাঞ্চল গড়ে তোলা এবং পশুপালনের পরিবর্তে আবার তৃণভূমি গড়ে তোলাসহ নানা ব্যবস্থা খুব ভালো। এখন পেইচিংয়ের পরিবেশ খুব ভাল। চীন হচ্ছে পূর্ব এশিয়ার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। চীনের গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা আছে। এমন একটি প্রাকৃতিক নেতৃত্ব মর্যাদায় থাকার কারণে চীনকে নিজের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতেই হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা আস্থাবান।'

    মিঃ লিউ ডে লির স্ত্রী একজন জার্মান। ৩০ বছর আগে পেইচিং ভাষা ইনস্টিটিউটে তাঁদের পরিচয়। তাঁদের চারটি সন্তান সবাই জার্মানীতে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এখন তাঁর বড় ছেলে স্নাতক হওয়ার পর পেইচিংয়ে ফিরে এসে চাকরি করেন। মিঃ লিউ নিজের এ বড় আন্তর্জাতিক পরিবারে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তিনি মনে করেন, পৃথিবী একটি গ্রামের মতো। পেইচিং একটি বড় পরিবার। তিনি আশা করেন, পৃথিবীতে সব মানুষ সহাবস্থানে বসবাস করবেন এবং যৌথভাবে একটি সুন্দর বিশ্ব নির্মাণের জন্য নিজের অবদান রাখবেন। মিঃ লিউ বলেন, তাঁর আরেকটি আশা আছে। তা হলো আগামী বছর হচ্ছে তাঁর বাবামার ৬০তম বিয়ে বার্ষিকী। তিনি তাঁদের বিয়ের হীরক জয়ন্তির জন্য একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। তিনি আশা করেন, পেইচিংয়ে তাঁরা সুখী ও শান্ত জীবন উপভোগ করবেন। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China