v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের নামকরা বাঁশিবাদক ওয়াং ছি হেন
2009-07-09 09:31:11

বাঁশি চীনের একটি জনপ্রিয় লোকসংগীতের বাদ্যযন্ত্র । চীনে বাঁশি বাজানোর ইতিহাস সাত হাজার বছরেরও বেশি । বাঁশি দেখতে একটি ফাঁপা বাঁশের নলের মত , তার রয়েছে বেশ কয়েকটি ছিদ্র । তবে এই সহজ বাদযন্ত্রটি দিয়ে যন্ত্রশিল্পীরা জটিল সুর বাজাতে পারেন এবং নানা ধরনের আবেগময় অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন । আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন নামকরা বাঁশিবাদকের কাহিনী এখন আপনাদের বলবো আমি ফোং সিউ ছিয়েন । এ বাঁশিবাদকের নাম ওয়াং ছি হেন ।

ওয়াং ছি হেন চীনের কেন্দ্রীয লোকসংগীত দলের শীর্ষ বাঁশিবাদক । তিনি চীনের সংগীত প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছেন । ১৯৮৭ সালে চীনের প্রথম কুয়াং তুং প্রদেশের লোকসংগীত প্রতিযোগিতায় ওয়াং ছি হেন পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার , ১৯৮৯ সালে জাতীয় লোক বাদযন্ত্র প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার এবং একই বছর ত্রয়োদশ বিশ্ব যুব মহাসম্মীলনীতে পেয়েছে স্বর্ণপদক ও শ্রেষ্ঠ শিল্পীর প্রমাণপত্র । ১৯৯১ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংগীত প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরষ্কার পান । ওয়াং ছি হেন ১৯৯৪ সালে চীনের তৃতীয় অর্কেস্ট্রার সুর প্রতিযোগিতা ও ১৯৯৯ সালে চীনের ৫০তম জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানেও পুরস্কার পেয়েছে । ২০০০সালে ওয়াং ছি হেন চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ সংগীত বিশেষজ্ঞ হিসেবে নির্বাচিত হন ।

এবছর ওয়াং ছি হেনের বয়স ৫০ বছর । পূর্ব চীনের চেচিয়ান প্রদেশে তার জন্ম । তিনি ছোট বেলা থেকেই বাদকযন্ত্র শিখতে শুরু করেন । তিনি পিয়ানো , বেহালা , বাঁশি ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ধরনের বাঁশি বাদন শিখেছেন , তবে বাদযন্ত্রগুলোর মধ্যে তিনি বাঁশিকে সবচেয়ে পছন্দ করেন । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন , বাঁশি দেখতে সহজ ধরনের বাদযন্ত্র । নিজের সহপাঠী ও বন্ধুরা বাঁশি বাজানো শিখছে দেখে আমিও বাঁশির বাদন শিখতে শুরু করি । যতই শিখি , আমি ততই বাঁশি বাজানো আরো বেশি পছন্দ করতে শুরু করি । সংগীত ইন্সটিটিউটেও আমি বাঁশি বাদন শিখেছি । বাঁশি ছাড়া আমি অন্য বাদযন্ত্র বাজানোও শিখেছি , তবে আমার বাঁশি শেখার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি । বিশ্বে বাঁশির প্রকার সংখ্যা বেশি , তবে শুধু চীনের বাঁশির ছিদ্রের উপর এক ধরনের পাতলা পরদা থাকে । তাই চীনা বাঁশির স্বর অন্য বাঁশির চেয়ে বেশি শ্রুতিমধুর।

১৯৮০ সালে ওয়াং ছি হেন পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন , তার বাঁশি বাজনার শিক্ষক হলেন চীনের নামকরা বাঁশিবাদক চেন ইয়োং ছিং । তা ছাড়া চীনের লোকসংগীতের বাদযন্ত্রের শিক্ষক লান ইউ সোন , উত্তর চীনের নামকরা বাঁশিবাদক ওয়াং থিয়ে ছুই ও দক্ষিণ চীনের নামকরা বাঁশিবাদক লু ছুন লিন তাকে অনেক সাহায্য করেছেন ।

ওয়াং ছি হেন চীনের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের বাঁশিবাদনের বৈশিষ্ট্য এবং পাশ্চাত্যের সংগীতের বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে বাঁশি বাদনে তার নিজের বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন । তিনি সুরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে অনেক নতুন সুর রচনা করেছেন এবং বাঁশি বাজানোর নতুন পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন । গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি অনেক বড় বড় সংগীতানুষ্ঠানে বাঁশি বাজিয়েছেন এবং দর্শকদের সমাদর পেয়েছেন । বাঁশি বাজানোর অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ওয়াং ছি হেন বলেন , পাশ্চাত্য সুরের তুলনায় চীনের ঐতিহ্যিক সুরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ভিন্নতর । চীন একটি বহুজাতিক দেশ , চীনের ঐতিহ্যিক সুরে নানা ধরনের মমতা ও অনুভূতি প্রকাশ পায় । অনেকেই মনে করেন , বাঁশির সুর বাদন সাধারণত আনন্দময় পরিবেশ বা মনের আনন্দ প্রকাশ করে । আসলে একথা ঠিক নয় । মানুষের আনন্দ , রাগ ও দুঃখসহ সব অনুভূতি ও মমতা সবই বাঁশিতে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব । বাঁশির প্রকার সংখ্যাও বেশি , তাই বাঁশিবাদকদের লোকসংগীতের অনুভূতি ও মমতা প্রকাশের পদ্ধতি ও নৈপুন্য আরো উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে । চীনের নামকরা সংগীত সমালোচক লুই চি ওয়াং ছি হেনের বাজানো সুরের মূল্যায়ন করে বলেন , ওয়াং ছি হেন চীনের ঐতিহ্যিক বাঁশি বাদন পদ্ধতির ভিত্তিতে নতুন পদ্ধতি অন্বেষণের সাহস দেখিয়েছেন ও চেষ্টা করেছেন । তাই তাকে চীনের শ্রেষ্ঠ বাঁশিবাদক বলা যায় ।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে ওয়াং ছি হেন অষ্ট্রিয়ায়া , ফ্রান্স , জার্মানী , যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে বাঁশি বাজিয়েছেন । তিনি চীনে একাধিকবার একক বাঁশি বাদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং জার্মানীতে তিনবার একক সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন । তার বাঁশি বাদনের নৈপুণ্য জার্মানীর সংগীত মহলের গভীর মূল্যায়ন পেয়েছে । জার্মানীর একজন সংগীত অনুরাগী তার বাঁশি বাদন শোনার জন্য তাকে অনুসরণ করে কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন । বিদেশের সংগীতবিদদের বিনিময় প্রসঙ্গে ওয়াং ছি হেন বলেন ,আমি একাধিকবার বিনিময়ের জন্য ব্রিটেনে গিয়েছি । আমি ব্রিটেনের সংগীতবিদদেরকে বাঁশি বাজানোর কৌশল ব্যাখ্যা করি , তারা বিশ্বাস করেন না যে ছ'টি ছিদ্রের একটি ছোট বাঁশি স্কেলের বারোটি সুর বাজাতে পারে । আসলে এটা বাদকের বাঁশি বাজানোর নৈপুণ্যের উপর নির্ভরশীল । চর্চার মাধ্যমে অর্ধেক ছিদ্র ব্যবহার করে স্কেলের বারোটি সুর নির্ভুলভাবে প্রকাশের কৌশল আমি আয়ত্ত করেছি । বাঁশি বাজানো দেখতে সহজ ব্যাপার , চীনের অনেকেই বাঁশি বাজাতে পারেন , তবে নির্ভুলভাবে স্কেল অনুসারে সুর বাজানো অত সহজ ব্যাপার নয় । তবে নিরলস প্রচেষ্টা চালালে কঠিন কাজ সুসম্পন্ন করা সম্ভব হবে ।

ওয়াং ছি হেন বলেন , সংগীতের কোনো রাষ্ট্রীয় সীমা নেই । বিদেশের সংগীতবিদদের সঙ্গে বিনিময়ের সময় তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন , বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংগীতবিদদের মধ্যে অনেক মিল আছে । তিনি বিদেশের সংগীতবিদদের সঙ্গে সংগীতানুষ্ঠানে বাঁশি বাজিয়েছেন এবং পিয়ানোর সঙ্গেও বাঁশি বাজিয়েছেন , এতে অসামঞ্জস্য কিছু নেই । তাই তিনি মনে করেন , চীনের ঐতিহ্যিক সংগীতের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার ভিত্তিতে চীনের সংগীতবিদদের পাশ্চাত্য দেশগুলোর সংগীতবিদদের সঙ্গে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে ,যাতে চীনের লোকসংগীতের প্রকাশ শক্তি আরো বাড়ানো এবং অন্য দেশের সংগীতের উপাদান চীনের লোকসংগীতে মেশানো যায় ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China