v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চুয়াং জাতি ও আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার
2009-07-07 22:01:26

আঠালো চাল দিয়ে তৈরী নানা ধরন ও নানা রঙের খাবার চীনের কুয়াং শি চুয়াং জাতি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের লোকজনের জনপ্রিয় খাবার । এ ধরনের রঙবেরঙের খাবার সাধারণতঃ কালো , লাল , হলুদ , বেগুণী ও সাদা রঙ দিয়ে তৈরী করা হয়। চীনের চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে চুয়াং জাতির লোকজনের বাড়িতে বাড়িতে আঠালো চাল দিয়ে রঙবেরঙের খাবার তৈরী করা হয় । চুয়াং জাতির লোকজনের মধ্যে আঠালো চাল দিয়ে তৈরী রঙবেরঙের খাবার খুবই জনপ্রিয় । তাতে যে সবাই এ ধরনের খাবার তৈরী করে , তাদের মধ্যে তৈরীর কৌশল , রঙ এবং স্বাদের ক্ষেত্রেও একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবচেয়ে দক্ষ গৃহিণীও নির্বাচন করা হয় । আজ এ অনুষ্ঠানে চুয়াং জাতির লোকজনের আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাচ্ছি আমি...

চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন ভোর হতে না হতেই চুয়াং জাতির গৃহিণীরা ঘুম থেকে ওঠে । তারা পাঁচ রঙের আঠালো চাল দিয়ে খাবার তৈরী শুরু করে । চুয়াং জাতির গ্রামে সর্বত্র খাবারে সুস্বাদ ও ঘ্রাণ তৈরি করা হয় । সকালে ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে উঠে আঠালো চালের তৈরী খাবার খেতে পারে । খেতে খেতে তারা সবাই আনন্দিত হয়ে উঠে ।

উত্সবের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে চুয়াং জাতির গ্রামও হৈচৈ ও আনন্দের পরিবেশে মুখরিত হয়ে ওঠে । তরুণ-তরুণীরা উত্সবের সুন্দর পোষাক পরে । তারা হাতে হাত রেখে গান গাওয়ার মাঠে যায় । সংগীতের প্রতিযোগিতা শুরু হয় ।

চুয়াং জাতির লোকজন কেন রঙবেরঙের আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার খেতে পছন্দ করে ? এ প্রসঙ্গে চুয়াং জাতির আচার ব্যবহার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কে সিয়াং বলেন ,

প্রাচীনকালে তে নুং নামে চুয়াং জাতির এক যুবক ছিল । ছোট বেলায় তার বাবা মারা যায় । মা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত এবং সারা বছর বিছানায় শুয়ে থাকেন । তে নুং তার মাকে খুব যত্ন করতো । সে যেমন কৃষি কাজ করতো তেমনি কাঠ কাটতো । মা বাড়িতে একা থাকার চিন্তা তাই বাইরে যাওয়ার সময় সে মাকে পিঠে বয়ে নিয়ে যেতো । মাকে খাবার দেয়ার সুবিধার জন্যে যখন সে বাইরে যেতো , তখন সে সঙ্গে সঙ্গে আঠালো চাল দিয়ে তৈরী কিছু খাবার নিয়ে যেতো , যাতে তার মা যে কোনো সময় খাবার খেতে পারেন ।

পাহাড়ে একটি দুষ্টু ও লোভী বানর ছিল । সে তে নুংয়ের ব্যস্ততা দেখে তার বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে আটালো চালের খাবার নিয়ে যেতো । বৃদ্ধা নিরুপায় হয়ে পড়েন । তিনি বানরের খাবার চুরি কিছুতেই রোধ করতে পারলেন না । মায়ের অনাহার দেখে তে নুং খুব হতাশ হল । কিন্তু মাকে সাহায্য করার কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারলো না । নিরুপায় সে হাতে জোরে কাছের একটি গাছের শাখা থেকে একটি পাতা তুলে ধরলো ।

হঠাত্ সে আবিষ্কার করলো তার হাত কালো হয়ে গেছে । আসলে হাত গাছের পাতার কালো রসে রঙীন হয়েছে । তে নুংয়ের এ অসাবধানতা বসত আবিষ্কার প্রসঙ্গে চুয়াং জাতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কে সিয়াং বলেন ,

তে নুং অসাবধানতাবসত এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছে । আঠালো চাল গাছের পাতার কালো রঙের রসে মিশানো হলে তা আরো সুগন্ধী ও সুস্বাদু হয়ে ওঠে ।

পরের দিন তে নুংয়ের বাড়ি ভীষণ সুগন্ধে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে । তে নুং দেখলো ব্যাপক সুগন্ধ কালো আঠালো চাল দিয়ে খাবার তৈরী করা হয়েছে । এ দিন চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন ।

বানরটি কালো আঠালো চাল দিয়ে খাবার দেখে ভয় পায় । সে এটাকে বিষাক্ত খাবার বলে মনে করলো । সে কিছু না খেয়ে চলে গেল । তে নুং-এর কালো আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার খেয়ে গায়ের শক্তি আরো বেড়ে যায় । এর পর সে আরো বেশি কাঠ কাটতো । এর পর যখন তে নুং ও তার মা কাঠ কাটার জন্য পাহাড়ে উঠতো , তখন তারা সবসময় কালো আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার নিয়ে যেতো ।

এর পর চুয়াং জাতির লোকজন বাড়িতে বাড়িতে তে নুংয়ের মতো কালো আঠালো চাল দিয়ে খাবার তৈরি শুরু করে । পরে কালো রঙ ছাড়া হলুদ , লাল ও বেগুণী রঙের চাল দিয়ে নানা রকম খাবারও তৈরি করতো । পূর্ব চীনের আন হুই প্রদেশের পর্যটক সুং তাওয়ের চুয়াং জাতির আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার খুব ভাল লেগেছে । তিনি বলেন ,

আঠালো চাল দিয়ে তৈরি সিদ্ধ খাবার কয়েকটি রঙে রঙ করা হয় । এ খাবার দেখতে সুন্দর এবং খেতে সুস্বাদু । এ ধরনের খাবার সুস্বাদু , আকর্ষণীয় । খেয়ে মানুষ কয়েক দিনেও তা ভুলে যাবে না ।

চুয়াং জাতির আঠালো চাল দিয়ে তৈরি খাবারের সঙ্গে সিদ্ধ চীনা বাদাম ও তিলের গুঁড়োও সংযুক্ত করা হয় ।

নানা ধরনের রঙ ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন আঠালো চাল দিয়ে খাবারও তৈরি করা যায় । এ থেকে পৃথকভাবে লাল , হলুদ ও বেগুণী রঙের চালের খাবারো তৈরী করা হয় । চুয়াং জাতির গ্রামবাসী মাদাম হোয়াং সিয়াও বলেন ,

রঙবেরঙের আঠালো চালের খাবার মানুষের খাওয়ার আগ্রহ খুব আকর্ষণীয় । এটা দেখতে স্বচ্ছ , বিচিত্র । খেলে পাকস্থলী খুব নরম ও আরামদায়ক বোধ হয় । এ সুগন্ধী ও সুস্বাদু খাবার উদ্ভিদের প্রাকৃতিক গন্ধও পাওয়া যায় । স্থানীয় বাসিন্দারা সংবাদদাতাকে বলেন , রঙবেরঙের আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও অনুকূল । চুয়াং জাতির স্বকীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ থান হোং বলেন ,

রঙবেরঙের আঠালো চাল দিয়ে তৈরী খাবার মানুষের দেহের শক্তি বৃদ্ধি , পাকস্থলী এবং পুষ্টি পূরণের জন্য উপকারী ।

চুয়াং জাতির লোকজন যে এত রঙবেরঙের আঠালো চাল দিয়ে খাবার পছন্দ করে , তার মূলে রয়েছে এ ধরনের খাবার মানুষের সুখ ও নিরাপত্তার পরিচায়ক । চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন ছাড়া চুয়াং জাতির অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী উত্সবেও এ ধরনের খাবার তৈরি করা হয় । আঠালো চাল দিয়ে তৈরি খাবার চুয়াং জাতির লোকজনের জন্য নিরাপত্তা ও সুখ বয়ে আনে ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China