v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনে কয়টি কয়লা খনি আছে?
2009-07-03 21:22:25
বাংলাদেশের কুমিলা জেলার শ্রোতা সোহরাব হোসেন তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়টি কয়লা খনি আছে? বছরে কি পরিমাণ আকরিক কয়লা উত্পাদন হয়? বিদেশে কয়লা রপ্তানি করা হয় কি? প্রিয় বন্ধু আপনার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চীনের কয়লা শিল্প সর্ম্পকে কিছু কথা বলবো। চীনেই প্রথম কয়লার আবিস্কার হয়েছিল এবং ব্যবহার শুরু হয়েছিল। খৃষ্টপূর্ব দুশো সালে এখনকার জিয়াংসী প্রদেশের নানছাং শহরের আশেপাশে কয়লা পাওয়া গিয়েছিল বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চীনে ধাতু আকরিক চালাই-কাজে কয়লা ব্যবহার চালু হয়েছিল। পুরনো চীনে কয়লা শিল্প কেন্দ্রীভূত ছিল লায়াওনিং, শানসী ও হোবেই প্রদেশে। বিশাল অভ্যন্তরীণ ভূভাগে কয়লা খনি ছিল খুবই কম। কতকগুলো প্রদেশে কয়লা নিষ্কাশনের আদৌ কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুক্তির পর সারাদেশে বড় ও মাঝারি ধরনের ৯০০টি কয়লা খাদ খাটা হয়েছে। তিব্বতেও কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে এবং বতর্মানে নিষ্কাশনের কাজ চলছে। সিয়াংসু , যেজিয়াং , আনহুই , জিয়াংসী, ফুজিয়ান, হুনান, হুবেই , গুয়াংডোং , গুয়াংসী প্রভৃতি প্রদেশে কয়লা-উত্পাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চীনের সবচেয়ে বেশি কয়লা-উত্পাদন হয় উত্তর চীনে। উত্তরপূর্ব চীন, মধ্য চীন ও পূর্ব চীনেও বিপুল পরিমাণ কয়লা নিস্কাশন হয় । চীনের পুরনো খনি এলাকাগুলোর মধ্যে খাইলুয়ান, ডোথোং, ফুশুন, ফুসিন সহ কয়েকটি খনি আগেই থেকেই প্রসিদ্ধ। আগে চীন বিদেশে কয়লা রপ্তানি করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতির দ্রুত বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বাজারে কয়লার চাহিদা বেড়েছে। কারণ বতর্মানে কয়লা চীনের প্রধান জ্বালানী সম্পদ।

বাংলাদেশের রংপুর জেলার শ্রোতা মো: সোস্তাফিজুর রহমান তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয় বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়? নয়চীনের বতর্মান প্রেসিডেন্ট কততম প্রেসিডেন্ট? প্রিয় বন্ধু এখন আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বৈশিষ্ট্যময়। আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইলে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস সর্ম্পকে কিছু বর্ণনা করতে হয়। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস হচ্ছে রাষ্ট্র-ক্ষমতার উচ্চতর সংস্থা এবং আইনের অধিকার কার্যকরী করার ব্যাপারে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্রা সংস্থা। জাতীয় কংগ্রেস পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হয়। বিশেষ অবস্থায় এর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরবর্তী জাতীয় গণ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে। বছরে একবার করে জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী অধিবেশন নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠিত করা যায় বা স্থগিত রাখা যায়। জাতীয় গণ কংগ্রেসের দায়িত্ব ও ক্ষমতা হল: শাসনতন্ত্র সংশোধন করা, আইন প্রণয়ন করা, শাসনতন্ত্র ও আইনের কার্যকরীকরণ তদারক করা, চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা, রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রীয় পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়োগ করা , সর্বোচ্চ গণ আদালতের প্রধান ও সর্বোচ্চ গণ অভিশংসক সংস্থার প্রধান নিয়োগ করা, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা , রাষ্ট্রীয় বাজেট ও চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় হিসাবনিকাশ পরীক্ষা করা ও অনুমোদন করা ইত্যাদি। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসে চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। প্রেসিডেন্ট কার্যমেয়াদ পাঁচ বছর। চীনের বতর্মান প্রেসিডেন্ট পঞ্চম মেয়াদের প্রেসিডেন্ট। হু চিন থাও চীনের বতর্মান প্রেসিডেন্ট।

বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ জেলার শ্রোতা এইচ, এম, তারেক তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীন বাংদেশ থেকে কি কি সামগ্রী আমদানী করে থাকে? প্রিয় বন্ধু , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে আদান প্রদান ও সহযোগিতা দ্রুতভাবে বেড়েছে। প্রতি বছর চীন বাংলাদেশ থেকে পাট ও চামরা সহ অন্যান্য সামগ্রী আমদানি করে।

বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার শ্রোতা এম এম গোলাম সারোয়ার তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীন আর তাইয়ানে কি একই মুদ্রা চালু আছে? চীনাদের তাইওয়ান ভ্রমনে কি ভিসা লাগে? প্রিয় বন্ধু, এখন বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, যদিও তাইওয়ান মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে নি তবুও তাইওয়ান চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে কেবলমাত্র একটি চীন আছে। যে দেশ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী তাকে থাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্ম্পক ছেদ করতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে যে গণ প্রজাতন্ত্রী চীন সরকারই চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। চীন সরকার " দুই চীন" বা " এক চীন—এক তাইওয়ান"-এর ষড়যন্ত্র চালাতে কোনো সরকারকে অনুমোদন দেবে না , এবং চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত দেশকে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো রকমের সরকারী সর্ম্পক স্থাপন করতে অনুমোদন দেবে না। চীনের মূলভূভাগে প্রচলিত মূদ্রার নাম রেন মিন পি। তাইওয়ান দ্বীপে প্রচলিত মুদ্রার নাম তাইওয়ান ইউয়ান। এখন আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেবো। চলিত বছরের শুরু থেকে চীনের মূলভূভাগ থেকে অধিক থেকে অধিকতর পযর্টক তাইওয়ানে ভ্রমণ করতে যায়। সংশ্লিষ্ট একটি তথ্যে জানা গেছে, এখন প্রতি দিন তাইওয়ানে ভ্রমন করতে যাওয়া চীনের মূলভাগের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকের সংখ্যা গড় ৩ হাজার । এখন এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাইওয়ান ভ্রমণে ভিসা লাগে না, কিন্তু বিশেষ এক ধরনের পরিচয়পত্র দরকার।

বাংলাদেশের পাবনা জেলার শ্রোতা এস এম আবদুল্লাহ রানা তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের অন্তমঙ্গোলীয় অঞ্চলের মানুষদের প্রধান খাদ্য দ্রব্য কী? উত্তরে বলছি, উত্তর চীনের মতো চীনের অন্তমঙ্গোলীয় অঞ্চলের মানুষদের প্রধান খাদ্য দ্রব্য হল চাল ও ময়দা। তাদের মধ্যে অনেকেই পশুপালক বলে চীনের অন্যান্য জয়গার তুলনায় তারা বেশী দুধ বার দুধজাত খাবার খেতে পারেন।

বাংলাদেশের ঝিলাইদহ জেলার শ্রোতা শ্রী সুকদেব কুমার ঘোষ তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোন শ্রেণী পযর্ন্ত লেখাপড়া করানো হয়? প্রিয় শ্রোতা বন্ধু, নয়ান চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিশেষ করে গত ৩০ বছরে মাধ্যমিক শিক্ষায় চীনের বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। চীনের বড় ও মাঝারি শহরে মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আসলে চীনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশের কলেজের সমান।চীনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় দশম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পযর্ন্ত ।এখনে উল্লেখ্য, যদিও চীনের উচ্চ শিক্ষায় বিরাট অগ্রগতি হয়েছে তবুও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাবতীয় স্নাতক ছাত্রছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উত্পাদন শ্রমে অংশ তিনে সক্ষম করে তোলার জন্যে চীন সরকার বৃত্তিমূলক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কারিগরী বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো বাড়াবার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। গ্রামাঞ্চলে আরো বেশী মাধ্যমিক কৃষিবিদ্যালয় খোলা হচ্ছে যাতে আরো বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিপ্রকৌশল-সংক্রান্ত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী অধ্যয়ন করতে পারে।

রাজশাহী জেলা শ্রোতা আব্দুল মান্নান তাঁর চিঠিতে তিনটি প্রশ্নজিজ্ঞেস করেছেন, প্রথমতচীন মোট কতটি উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছে? দ্বিতীয়ত চীনে মোট কতটি উতক্ষেপন কেন্দ্র আছে? তৃতীয়ত কোন সালে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র আবিস্কার করেছে? প্রিয় শ্রোতা বন্ধু, আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেয়া একটু কঠিন , কারণ এ সম্বন্ধে এখন পযর্ন্ত কোন সরকারী তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবু একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, এ পযর্ন্ত চীন মোট পন্চাশটিও বেশী কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছে। এ সব কৃত্রিম উপগ্রহের মধ্যে

২১টি ছিল প্রত্যাবর্তনযোগ্য উপগ্রহ। ১৯৭০ সালের ২৪ এপ্রিল চীন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করে। এতে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, চীনের মহাকাশে প্রবেশ করার যুগ এসে গেছে। তত্কালীণ সৌভিয়েতউনিয়ন , যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সআর জাপানের পর চীন পঞ্চমদেশ যা স্বাধীনভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ উদক্ষেপন করতে সক্ষম হয়। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীনে মোট তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ উদক্ষেপনের ঘাঁটি আছে। এ তিনটি ঘাঁটির নাম হল, গাসু প্রদেশের চিওশুয়েন , সেনসি প্রদেশের থাইইয়ান এবং সিছুয়েন প্রদেশের সিছান । জানা গেছে চীনের হাইনান দ্বীপে অদূর ভবিষ্যতে আরও একটি উদক্ষেপন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, এ কেন্দ্রেথেকে চাঁদ অনুসন্ধ্যান নভোযান উদক্ষেপন করা হবে। ২০২০ সাল নাগাদ চীনের নভচারীরা চাঁদে আরোহন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এখন তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, ১৯৬৪ সালের ১৬ অক্টোবর বিকেল তিনটায় চীনের প্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়। তখন থেকে চীন পরমাণু পরিবারের একটি সদস্য হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র, প্রাক্তন সৌভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন আর ফ্রান্সের পর চীন পঞ্চমটি দেশ যা নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে আণবিক বোমা তৈরী করতে সক্ষম। তবে, চীন বারবার বলেছে, প্রতিরক্ষার জন্য চীন আণবিক বোমা তৈরী করেছে। চীন কোন দিন প্রথমে আণবিক বোমা ব্যবহার করবে না। অবশেষে বিশ্বের সব আণবিক বোমা ধ্বংস করা চীনের আশা-আকাংক্ষা। চীন সব সময় মনে করে, প্রতিরক্ষারজন্য চীন আণবিক বোমা তৈরী করেছে। চীন সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিরোধীতা করে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China