v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সিন চিয়াং পশুপালকের শিশুসন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সমস্যা সমাধানে অনেক আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে
2009-06-29 18:05:48
চীনের সিন চিয়াং উইগুর জাতি স্বয়ত্তশাসিত অঞ্চলে হাসাকো জাতি, মঙ্গোলীয় জাতি, কোর্কোজ জাতি ও তাজিক জাতিসহ অনেক যাযাবর জাতি বসবাস করে। তাদের যাযাবর জীবন ও চলাচলের অসুবিধার কারণে শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে সি চিয়াংয়ের অনেক পশুপালন অঞ্চলে বহু আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এসব বিদ্যালয় পশুপালকের শিশুদের শিক্ষা সমস্যার সমাধান করেছে। শ্রোতা বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে সিন চিয়াং উইগুর জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আলেথাই এলাকার একটি আবাসিক বিদ্যালয়ের কথা আপনাদের শোনাবো আমি আপনাদের বন্ধু লিলু।

সালিথানাচি ১২ বছর বয়সী একজন সুন্দর হাসাকো জাতির মেয়ে। তিন বছর আগে সে আলেথাই এলাকার জিমুর জেলার কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়ে লেখাপড়া করছে। আগে বাবা ও মার সঙ্গে তার যাযাবর জীবন কেটেছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ঋতুতে সে বিভিন্ন পশুপালন অঞ্চলে বসবাস করে। সে ইতোমধ্যেই অনেক বিদ্যালয় পরিবর্তন করেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়েরই শিক্ষাদানের পর্যায় ও শিক্ষকের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ভিন্ন। সুতরাং এ জন্য সে খুব উদ্বিগ্ন ছিল।

তবে বর্তমানে সালি আর উদ্বিগ্ন নয়। সে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে, কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করার পর সে আর কোন বিদ্যালয় পরিবর্তন করেনি, বরং বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অনেক সাহায্য পেয়েছে।

জানা গেছে, কার্জা গ্রামে ৯০ শতাংশ লোক হচ্ছে হাসাকো জাতির লোক। আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে অনেক পশুপালকের ছেলে মেয়ের সালির মতই একটি বিদ্যালয়ে স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক শিক্ষা গ্রহণ করা ছিল খুব কঠিন কাজ। স্থানীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থের অভাব ও পশুপালকদের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে পশুপালকের শিশুসন্তানরা তাঁবু খেড়া অস্থায়ী ক্লাসে শিক্ষা গ্রহণ করছিলো। কার্জা গ্রামের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চৌ লি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠার পাশাপাশি আগের পরিস্থিতির পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, (১)

আগে শিশুরা পশুপালন অঞ্চলে শিক্ষা গ্রহণ করতো। আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার পর শিক্ষাদানের মানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার শর্তেরও উন্নতি হয়েছে।

কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা পাঁচ শ' পঞ্চাশজন । এদের বেশির ভাগই হাসাকো জাতির পশুপালকের ছেলে মেয়ে। এখানে যে কেবল সুন্দর ক্লাস রুমই রয়েছে তাই নয়, বরং মাল্টিমিডিয়া দূর শিক্ষন সংক্রান্ত সাজ-সরজ্ঞামও রয়েছে। তাছাড়া, আবাসিক হল, ডাইনিং হল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক স্থাপনা রয়েছে।

চৌ লি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, আগে বেশির ভাগ পশুপালকের শিশুসন্তানরা ফি বা বেতন দিতে না পারার কারণে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতো না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার গ্রামে বাধ্যতামূলক শিক্ষা সংস্কার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পর কার্জা গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীর সব ধরনের ফি বা বেতন মওকুফ করা হয়েছে। আবাসিক হলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা জীবন-ভাতা পাচ্ছে। বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি বছর পাঁচ শ' ইউয়ান ভাতা পায়, মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতি বছর পায় সাত শ' পঞ্চাশ ইউয়ান করে। চৌ লি আরো বলেন, বর্তমানে পশুপালকের শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোন খরচ বহন করতে হয় নি। তিনি বলেন, (২)

আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কিছু নীতির পরিবর্তনের ফলে পশুপালকদের শিশুসন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের খরচ কমে গেছে। বিশেষ করে, বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণের পর্যায়ে পশুপালকদের শিশুদের কোন টাকা খরচের দরকার নেই।

পশুপালকের শিশুরা আরো ভালো শিক্ষা ও সাহায্য যাতে পেতে পারে সে জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মান উন্নত করার ওপর খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৮০জন। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দলের মধ্যে স্থানীয় শিক্ষক ছাড়া, চীনের অন্যান্য প্রদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র-ছাত্রীরাও এখানে শিক্ষাদান করছেন। ২৬ বছর বয়সী ইয়িং ছিয়াও তাদের মধ্যে একজন।

ইয়িং ছিয়াও আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, ২০০৬ সালে তিনি সিন চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক হবার পর কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া দূর শিক্ষন শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি বিদ্যালয়ের মেরুদন্ড শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন,(৩)

গ্রামের জীবনযাত্রার মান জেলার শহরের তুলনায় ব্যবধান রয়েছে। তবে এখানকার বিদ্যালয়ের নেতারা শিক্ষাদানের ব্যবস্থার প্রতি খুব গুরুত্ব দেন। যা আমাদের জীবনের জন্যও তাত্পর্য পূর্ণ।

শিক্ষাদানের শর্ত স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং শিক্ষকের মান উন্নত করার পাশাপাশি কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ও শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় জাতীয় বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব দেয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে চীনা ভাষা ও হাসাকো জাতির ভাষার মাধ্যমে সাহিত্য, ইংরেজী, গণিতবিদ্যা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে। জিমুর জেলার শিক্ষা ব্যুরোর পরিচালক চাও ইয়োং চুন বলেন,(৪)

আমরা দুটি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করি। এটি ঐতিহ্যিক হাসাকো জাতির সংস্কৃতির উন্নয়ন।

শ্রোতা বন্ধুরা, ১৯৭৭ সালে সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রথম আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলার পর স্থানীয় সরকার এ ক্ষেত্রে ক্রমশ বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে। বর্তমানে শুধু জিমুর জেলায় কার্জা গ্রামের আবাসিক বিদ্যালয়ের মত আরো পাঁচটি বিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দু'হাজারেরও বেশি। এসব বিদ্যালয় পশুপালকদের শিশুসন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সমস্যা সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China