বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ জেলার শ্রোতা এইচ, এম , তারেক তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কতটি অবসর নিবোদন কেন্দ্র আছে? সবচেয়ে জনপ্রিয় কোনটি? প্রিয় বন্ধু, চীন একটি বিশাল দেশ। প্রতি প্রদেশ , বড় ও মাঝারি শহর এবং বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবসর নিবোদন কেন্দ্র আছে। সুতরাং চীনে কতটি অবসর নিবোদন কেন্দ্র আছে তা বলা সত্যিই মশকিল। এ পযর্ন্ত কোন সরকারী তথ্যে এ সর্ম্পকে বর্ণনা করা হয়নি। আপনার প্রথম প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারার জন্য দু:খিত। চীনে বেশ কয়েকটি নাম-করা অবসর নিবোদন কেন্দ্র আছে। যেমন পেডেইহো অবসর নিবোদন কেন্দ্র একটি বিখ্যাত অবসর নিবোদন কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয় । এই কেন্দ্র চীনের হোপে প্রদেশের পেডেইহোয় অবস্থিত। প্রতি বছরের গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকরা পেডেইহো অবসর নিবোদন কেন্দ্রে ছোটতে যান। উল্লেখ্য, চীনের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতি বছরের গ্রীষ্মকালে সেখানে ছোটি কাটেন। বিভিন্ন সম্মেলন বা সেমিনারও সেখানে আয়োজিত হয়।
বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শ্রোতা মো: আব্দুল মান্নান তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনাদের জাতীয় খাবার কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। প্রিয় বন্ধু, চীনাদের প্রধান খাবার চাল ও ময়দা। দক্ষিণ চীনে প্রধান খাবার হল চাল এবং উত্তর চীনের প্রধান খাবার ময়দা। কিন্তু এখন অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। দক্ষিণ চীনের অনেক লোক ময়দা খেতে পছন্দ করেন এবং উত্তর চীনের অনেকেই চালও খেতে পছন্দ করেন। আসলে চীনের বাজারে প্রচুর উত্তর চীনের চাল পাওয়া যায়। উত্তর চীনের চাল জনসাধারণের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। কারণ উত্তর চীনের চাল খেতে বেশ সুস্বাদু। পরিসংখ্যার দিক থেকে চীনে বেশির ভাগ লোক চাল তাদের প্রধান খাবার হিসেবে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের কুমিলা জেলার শ্রোতা সোহরাব হোসেন তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের মহা প্রচীরের দৈর্ঘ্য কত? প্রিয় বন্ধু, এর আগে আরও বেশ কয়েক জন শ্রোতা একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন। এখন চীনের মহা প্রচীর সর্ম্পকে কিছু বর্ণনা করবো। 'বিশ্বের সাতটি বিম্সয়ের অত্যতম' আখ্যয়িত মহা প্রাচীর হচ্ছে বিশ্বের এমন একটি প্রাচীন কালের সামরিক প্রতিরক্ষা প্রকল্প যার নিমার্নের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ এবং আকার সবচেয়ে বিরাট। এই সুমহান প্রাচীর চীনের ভূখনন্ডে ৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী বিস্তীর্ণ হয়। ১৯৮৭ সালে মহা প্রাচীর বিশ্ব উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তভুর্ক্ত। মহা প্রাচীরের নিমার্ন কাজ খৃষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে শুরু হয়। তখন মধ্য চীনের প্রশাসন উত্তরাঞ্চলের জাতির আক্রমন প্রতিরোধ করার জন্যে দেওয়াল দিয়ে সীমান্তে নিমির্ত প্রহরা টাওয়াগুলোকে ঘেরাও করে। চীনের বসন্ত ও শরত যুগ আর যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অফুরন্ত লড়াই হয়। বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে পরষ্পরের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে সীমান্তের নিকটবর্তী পাহাড়ে মহা প্রাচীরের নিমার্ণ শুরু করে। খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা চীনকে একীকৃত করার পর আগের ছোট ছোট রাজ্যের নিমির্ত মহা প্রাচীর সংযুক্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে আঁকাবাঁকা পাহাড়গুলোতে তৈরী এই প্রাচীর উত্তর সীমান্তের প্রতিবন্ধে পরিণত হয়। যাতে উত্তর দিকের মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণমূমির পুশুপালকদের আক্রমন প্রতিরোধ করা যায়। ছিন রাজবাংশ আমলে মহা প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৫০০০ কিলোমিটার। ছিন রাজবংশের পর হান রাজবংশ মহা প্রাচীর আরও ১০ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেয় । দু' হাজারাধিক বছর ধরে চীনের বিভিন্ন সময়পূর্বের প্রশাসন ভিন্ন মাত্রায় মহা প্রাচীর নিমার্ন করে। বিভিন্ন রাজবংশ আমলে নিমির্ত প্রাচীর এক সঙ্গে সংযুক্ত হলে মোট দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার কিলোমিটারেও বেশী হতে পারে।তার মানে এই দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে এক রাউন্ড ঘেরতে পারে।
এখন মহা প্রাচীর বলতে সাধারণত মিন রাজবংশ আমলে( ১৩৬৮-১৬৪৪) নিমির্ত মহা প্রাচীর বুঝায়। এটা চীনের পশ্চিমাংশের গানসু প্রদেশের চিয়াইউ চোকা থেকে চীনের উত্তর-পূর্ব লিওনিন প্রদেশের য়ালোচিয়াং নদীর তীর পযর্ন্ত । এই মহা প্রাচীর চীনের ৯টি প্রদেশ, শহর, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বিস্তীর্ণ হয়।মোট দৈর্ঘ্য ৭৩০০ কিলোমিটার ।প্রায় ১৪ হাজার লির সমান। সুতরাং চীনের মহা প্রাচীরকে ১০ হাজার লির মহা প্রাচীর বলা হয়। প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে মহা প্রাচীর পাহাড়রে নিমির্ত হয় এবং মরুভূমি , মালভূমি , জলাভূমি অতিক্রম করে ।মহা প্রাচীর যে সব জায়গা অতিক্রম করেছে সে সব জায়গার ভূগোলিক অবস্থা খুব জটিল। নিমার্নকারীরা ভূগোলিক অবস্থা অনুযায়ী ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাঠামো প্রয়োগ করেছেন। এতে চীনের পূর্বপুরুষদের মেধা প্রতিফলিত হয়।
মহা প্রাচীর আঁকাবাঁকা আর উচু-নিচু পাহাড়ে বিস্তীর্ণ হয়। প্রাচীরের নিচে খড়া পাহাড় । প্রাচীর আর পাহাড় পরষ্পরের সঙ্গে সংযোগ হয়।প্রাচীন কালের সামরিক অবস্থায় এই মহা প্রাচীর অতিক্রম করার সম্ভবনা প্রায় ছিল না। প্রাচীর সাধারণত বড় বড় ইট আর লম্বা পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়। ইট আর পাথরের ভিতরে হলুদ মাটি আর পাথরের টুকরা পূর্ণ করা হয় । প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় দশ মিটার। তার প্রন্থ ৪ থেকে ৫ মিটার। যাতে যুদ্ধের সময় খাদ্য আর অস্ত্র সরবরাহের সুবিধা হয়। দেওয়ালের ভিতরে পাথর সিড়ির শর্ত আছে। পাথর সিড়ি দিয়ে সহজেই উঠা-নামা করা যায়। অল্প দূরত্বের পর পর টাওয়া নিমির্ত হয়। এ সব টাওয়াতে অস্ত্র আর খাদ্য রাখা যায় অথবা সৈন্যরা বিশ্রাম নেয়। যুদ্ধের সময় সৈন্যরা ভিতরে লুকতে পারে। তা ছাড়া যখন শত্রুদের আক্রমন হয় তখন এ সব টাওয়াতে আগুন জ্বালাতে পারে, যাতে সতর্ক সংবাদ পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার শ্রোতা বি ,এম ফৈসাল আহমেদ তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের মোট আয়তনের কত ভাগ বনভূমি? উত্তরে বলছি, গত বছর চীনের রাষ্ট্রীয় বন অধি দফতরের প্রকাশিত এক রির্পোটে জানা গেছে, বর্তমানে চীনের বনভূমিত আয়তন ১৭ কোটি ৫০ লাখ একটার । চীনের মোট আয়তনে শতকরা ১৮ দশমিক ২১ ভাগ বনভূমি। জানা গেছে, চীনে কৃত্রিম বনের আয়তন বিশ্বের স্থান প্রথম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা চীনে গাছ লাগানোর অভিযান চালানো হওয়ার ফলে কৃত্রিম বনভূমির আয়তন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা চীনে সবুজকায়নের পরিকল্পনা বাস্তাবয়নের জন্য চীন সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিরাট অঙ্কের অর্থও বরদ্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষের অফুরন্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে চীনের বনভূমির আয়তন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার শ্রোতা এম এম গোলাম সারোয়ার তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে বছরে মোট কত সরকারী ছুটি পালিত হয় এবং উল্লেখযোগ্য সরকারী ছুটির নাম কি কি? উত্তরে বলছি, চীনে বছরে ৯ দিনের সরকারী ছুটি পালিত হয়। উল্লেখযোগ্য সরকারী ছুটি হল, জাতীয় দিবস ও চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সবের ছুটি । চীনের জাতীয় দিবস ও বসন্ত উতসবে যথাক্রমে তিন দিন করে ছুটি পালিত হয়।
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার শ্রোতা সাদিয়া মুনমুন দিশা তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কোন কোন সালে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে? উত্তরে বলছি, গত বছরের মে মাসে চীনের সিছুয়াংয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর কয়েক জন শ্রোতা প্রায় একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন। চীনের ইতিহাসে কয়েক বার বড় আকারের ভূমিকম্প ঘটেছে। কিন্তু চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গত বছরের সিছুয়াং ভূমিকম্প সহ তিন বার ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটেছে। ১৯৬৬ সালের শিনটাই ভূমিকম্প ও ১৯৭৬ সালের ঠাংসেন ভূমিকম্প দু'টো মারাত্মক ভূমিকম্প। শিনটাটি ভূমিকম্পে ৮ হাজারেরও বেশী লোক মারা গেছে। কিন্তু তিনটি ভূমিকম্পের মধ্যে ১৯৭৬ সালে ঠাংসেন শহরে সংঘটিত ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়ংকর। মোট ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ঠাংসেন ভূমিকম্পে মারা গেছে।
শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ কয়েক জন শ্রোতার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমাদের প্রতি শনিবারের বিশেষ অনুষ্ঠান---" শ্রোতা সন্ধ্যা" আপনাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। চীন সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন বা আমাদের অনুষ্ঠান সর্ম্পকে কোন পরামর্শ থাকলে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন। আমাদের প্রশ্ন মুখোমুখি অনুষ্ঠানে উত্তর দেয়া হবে এবং আপনাদের সুন্দর চিঠিগুলো আমাদের মিতালী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো হবে। আমাদের এ অনুষ্ঠান আরও সুন্দর করার জন্য শ্রোতাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আকজের মুখোমুখি অনুষ্ঠান এখানে শেষ হল। |