v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ওয়াং কুইফাং ও তার গ্রামীণ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাস
2009-06-23 21:39:34
উত্তর পশ্চিম চীনের সেনসি প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় একটি ছোট বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাস—ইচুন জেলার থাইআন থানায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাস আছে । ১৯৮৫ সালে এর প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই এখানে আসা যাওয়া করছেন । কেবল নিবাসের পরিচালক ওয়াং কুইফাং ২৪ বছর ধরে এখানে আছেন । ২৪ বছর ধরে তিনি কৌতুক গান গাইতে পছন্দ করা একটি যুবতি মেয়ে থেকে আজকের বয়স্ক মানুষে পরিণত হয়েছেন ।

১০টি এক তলার বাড়ি এবং ১০টি গুহার বাড়ি নিয়ে থাইআন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাস গঠিত । বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাসের প্রাঙ্গনের দেয়ালে ভূট্টা এবং গুহার গেটে লাল মরিচ ঝুলানো আছে । প্রাঙ্গনের গাব গাছে লাল রঙের গাব একটার পর একটা লন্ঠনের মতো ঝুলছে । গুহার বাইরে বেশ কয়েকজন বুড়ো মানুষ রোদে বসে আরামে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ।

তরণী বয়সে কুই ফাং গ্রামের যুবকযুবতীদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ছিন অপেরা গাইতে পারতেন । সাধারণ সময়ে সুখ হোক দুঃখ হোক তিনি গাইতেন । কেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাড়িতে এসেছেন প্রশ্নের উত্তরে ৬০ বছর বয়সী ওয়াং কুইফাং এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন, আমার স্বামীর স্বাস্থ্য তেমন ভাল ছিল না । আমাদের বিয়ের সময় স্বামীর পরিবারের অবস্থাও ভাল ছিল না । বাড়িতে স্বামীর নানী ও বাবামা ছিলেন । আমি তাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করতাম । আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন স্বামীর চাচার সংসারের দায়িত্বও পালন করি । কারণ চাচার কোনো সন্তান নেই । এ কারণে গ্রামের সবাই আমাকে খুব প্রশংসা করতেন । তাই যখন গ্রামে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাস প্রতিষ্ঠা হবে তখন নিবাসের দায়িত্ববান কর্মকর্তা বেছে নেয়ার সময় সবাই সবার আগে আমার নাম উল্লেখ করেন । আমি মনে করতাম ,বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাসের কাজ সহজ । কিন্তু আসলে কাজটা তত সহজ নয় ।

নিবাসে আসার পর ওয়াং কুইফাং প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি আনতেন এবং নাস্তা বানাতেন । যাদের চলাফেরায় অসুবিধা হয় তাদেরকে পায়খানা যেতে সাহায্য করতেন । এসব কাজ শেষে তিনি নিবাসের হাঁসমুর্গী লালনপালন করতেন এবং মাঝেমাঝে নিবাসের জমিতে চাষও করতেন ।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাসের কাজ যেমন পরিশ্রামী তেমনি নোংরা এবং বেতন কম । তাই অনেকে অল্প কয়েকদিন কাজ করার পর এখান থেকে চলে যান । শুধু কুইফাং ২৪ বছর ধরে এখানে কাজ করে যাচ্ছেন ।

যারা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাসে থাকেন তারা সবাই থাইআন থানার গ্রামের বুড়ো মানুষ এবং তাদের কোনো সন্তান বা আত্মিয়স্বজন নেই । তাদের মধ্যে কেউকেউ মানসিক প্রতিবন্ধী,কেউকেউ বোবা-কালা আর কেউকেউ বিকলাঙ্গ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকেন । তারা নিবাসে আসার পর ওয়াং কুইফাং তাদেরকে নিজের বাবামা হিসেবেই দেখাশুনা করতেন । তারা প্রায় কুইফাংয়ের হাত ধরে বলতেন , তুমি আমার আপন মেয়ে ।

৭৪ বছর বয়সী ওয়াং ইউয়ানফু নিবাসে আসার প্রথম দিকে নড়াচরা করতে পারতেন না । ওয়াং কুইফাং তাকে গোসল করতে এবং পায়খানা যেতে সাহায্য করতেন । তাকে অভিজ্ঞ ঐতিহ্যিক চীনা ডাক্তারের কাছে পাঠাতেন এবং তাকে চীনা ওষুধ খাওয়াতেন । কয়েক বছর পর বুড়ো দাদা ওয়াংয়ের শারিরীক অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে ।এখন তিনি নিজেই বিছানা থেকে নেমে চলাফেরা করতে পারছেন । তিনি বলেন, ভাল, খুবই ভাল । আমরা এখানে ভাল তরকারি খাচ্ছি । তিনি আমাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেন ।

নিবাসে বয়স্ক ও অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মানুষ বসবাস করছেন । তাই মৃত্যু হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । বুড়ো মানুষরা যাতে আরামে চলে যান তার জন্য তিনি নিজেই তাদের শববস্ত্র বানাতেন । তিনি এলবাম খুলে একটি ছবি দেখিয়ে বলেন,তার নাম ওয়াং হ্যছাই ।গত বছর তিনি মারা গেলেন ।তিনি এখানে ১৬ বছর ছিলেন । তিনি মারা যাওয়ার পর আমি একটানা কয়েক দিন খাইনি । এখানে তিনি অনেক বছর ছিলেন বলে আমাদের মধ্যে গভীর মনোভাব গড়ে ওঠছিল। একজন বুড়ো মারা গেলে আমার খুব দুঃখ ও কষ্ট লাগে ।

লৌস মালভূমিতে অবস্থিত ইচুন জেলা চীনের একটি গরিব জেলা ।এখানকার লোকদের জীবনযাত্রা তেমন সমৃদ্ধ নয় । স্থানীয় সরকারের আর্থিক অবস্থা সীমিত ।তাসত্বেও বহু বছর ধরে স্থানীয় সরকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিবাসে বিপুলমাত্রায় সাহায্য করে যাচ্ছে ।

জ্ঞানেঅজ্ঞানে ওয়াং কুইফাং নিবাসে ২৪ বছর কাটিয়েছেন । ওয়াং কুইফাংয়ের তিনটি সন্তান আছে । নিবাসের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য তিনি নিজের পরিবার , নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছুই করতে পারেননি । এ জন্য ছেলেমেয়েরা অসন্তোষ প্রকাশ করে । এ সম্পর্কে ওয়াং কুইফাং বলেন, ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় আমি নিবাসে কাজ শুরু করেছি । তাদের দেখাশোনা করতে পারিনি বলে আমি খুব দুঃখিত । স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় স্বামী আমাকে খুব সাহায্য করতেন । পরে তার স্বাস্থ্য খারাপ হয় । এ বছরের মে মাসে তিনি মারা গেছেন । তার মৃত্যু আমার ওপর খুব আঘাত হেনেছে ।

এখন কুইফাংর সন্তানরা বড় হয়েছে । তারা মাকে বোঝায় এবং মার দুঃখ ও কষ্ট ভাগাভাগি করে ।কৃষি মৌসুমে ছেলেমেয়ে,বউ ও জামাইরা এবং ভাইবোনরা নিবাসে এসে তাকে সাহায্য করেন । ২৪ বছর ধরে ওয়াং কুইফাং যে নিবাসে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখাশোনা করেন তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে । গত বছর সেনসি প্রদেশের "সবাইকে মুগ্ধ করা ১০জন আদর্শনীয় লোক"নিবাচিত হন তিনি ।

চাং থিং গ্রামীণ স্কুলের ইংরেজী শিক্ষিকা । তিনি ওয়াং কুইফাংয়ের খুব প্রশংসা করেন । তিনি বলেন,আমি অনেক বছর ধরে এখানে আছি। তাই আমি ভাল করে তাকে জানি । বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য তিনি প্রায়ই নিজের টাকা ব্যয় করতেন । বুড়ো মানুষরা সহজে রাগ করতেন । তাই তিনি এত বেশি বছর ধরে এখানে লেগে থাকতে পারেন বলে সবাই তাতে খুব মুগ্ধ ।

কুইফাংয়ের বয়স হয়েছে । এখন তিনি প্রায় ভাবতেন, তার পরে কে নিবাসের দায়িত্ব বহন করতে পারবেন । তিনি বলেন,আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় নিবাস চালিয়েছি । আমি চাই নিবাসটি অব্যাহত টিকে থাকুক ।এখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সুখের সঙ্গে তাদের বাকি দিন কাটাবেন । বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরকে নিজের বাবামার মতো যত্ন ও ব্যবহার করবেন এমন একজন নতুন পরিচালক পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China