v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সিন চিয়াংয়ে চা খাওয়া বিষয়ক রীতি-নীতি
2009-06-23 21:38:55
চীনের চা পান বিষয়ক রীতি-নীতি ও সংস্কৃতি বিশ্ববিশ্রুত এবং সুদীর্ঘকালের । চীনের সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতির চা পান বিষয়ক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিও চীনা জাতির চা বিষয়ক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । সিন চিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির নিত্য জীবনযাপনে চা পান অপরিহার্য । গরমকালে চা খেলে শরীরে আরামবোধ হয় । শীতকালে চা খেলে দেহের শীত চলে যায় । আজ এ অনুষ্ঠানে সিন চিয়াংয়ের চা এবং চা খাওয়া বিষয়ক রীতি-নীতি সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি....

সিন চিয়াংয়ে চা উত্পাদন হতো না । সিন চিয়াং প্রাচীন সিল্ক পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল । চীনের অভ্যন্তরভাগের মাল সিনচিয়াংয়ের মাধ্যমে পাশ্চাত্যে পাঠানো হতো । এর পাশাপাশি চা লেনদেনের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে যেতো । ফলে চা পান এবং এ সম্পর্কিত রীতি-নীতি সিন চিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।

সিন চিয়াংয়ে জনগণের নিত্য জীবনযাপনে চা পানের ওপর খুব গুরুত্ব দেয়া হয় । এ বিষয়টি মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য চাহিদা বলে মনে করা হয় ।

সিন চিয়াংয়ে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতির বেশির ভাগ মানুষ পশু পালন ও চাষাবাদ করে । খাসি , গরুর মাংস ও দুদ্ধজাত দ্রব্য তাদের প্রধান খাদ্য বলে নির্ধারণ করা হয় । চা পানে যেমন হজম ও অতিরিক্ত চর্বি দূর হয় , তেমনি তা মানবদেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহের জন্যও অনুকূল । সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের চা বিষয়ক সংস্কৃতি সমিতির মহাসচিব লি ইউয়ান বলেন ,

জানা গেছে , উইগুর জাতির উচ্চ বংশভুক্ত বা সম্ভ্রান্ত সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষরা চা পান করার ওপর বেশ গুরুত্ব দিতো । উইগুর জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে চা পান বিষয়ক তত্ত্ব ও আচার ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । উইগুর জাতির চা তৈরীর বৈচিত্র্যপূর্ণ পদ্ধতির জাপানের চা তৈরীর কলাকৌশলের সঙ্গে মিল রয়েছে । সংবাদদাতা উইগুর জাতির উচ্চ বংশভুক্ত সম্প্রদায়ের বংশধরদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তারা বলেন , উইগুর জাতির চা রাখার যে থলি ব্যবহৃত হতো , তা বংশের প্রবীণদের হাতে বানান দরকার । চা কেমন করে তৈরী এবং তা কোথায় রাখা হবে , সে ব্যাপারে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হতো ।

অতিথিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্বাগতিকরা তাদের সামনে চা পানের বাটী নিঃশেষে পরিষ্কার করে দিতেন । বাটী পরিষ্কারের জন্য যে পানি ব্যবহৃত হতো , স্বাগতিকরা তা খেয়ে ফেলতেন । এ প্রসঙ্গে সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের চা তৈরী ও খাওয়া বিষয়ক সংস্কৃতি সমিতির মহাসচিব লি ইউয়ান বলেন ,

চা তৈরীর জন্য উইগুর জাতির কড়াকড়ি নিয়মকানুন রয়েছে । যদি অতিথিরা চা খেতে না চান , তাহলে চা খাওয়ার বাটী উপুড় রাখা হয় বা তার মুখের দিকে হাত দিয়ে বন্ধ করা হয় ।

উইগুর জাতির লোকজন অতিথিদের প্রতি আন্তরিক আতিথেয়তা প্রকাশ করেন । অতিথিরা বাড়িতে আসলে তাদেরকে গরম চা খেতে দেয়া হয় । চীনের অভ্যন্তরভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক পর্যটক সিন চিয়াং ভ্রমণে আসেন । এখানে আসার পর তারা অবশ্যই বেশি খাসি , দইসহ নানান সুস্বাদু খাদ্য দ্রব্য খান । খাওয়ার পর তাদেরকে অতিথিরা গরম চা খেতে দেন ।

সিন চিয়াংয়ে বেশির ভাগ লোক ফুসুয়ান ব্রিক টী খেতে পছন্দ করেন । দীর্ঘকাল ধরে এ চা পানের পাশাপাশি এ অঞ্চলে বসবাসকারী উইগুর , কাজাখ ও মঙ্গোলিয়াসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির লোকজনের এক ধরনের স্বীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

সিন চিয়াংয়ের দক্ষিণাংশের কাশি ও হো থিয়ান অঞ্চলে ফু সুয়ান ব্রিক টী , লিলেক , কিউমিন ও ছিননামোন যুক্ত করে এ জাতের চা তৈরী করা হয় । স্থানীয় লোকজনের কাছে তা উইগুর চা বলে পরিচিত । এ প্রসঙ্গে সিন চিয়াংয়ের চা বিষয়ক সংস্কৃতি সমিতির মহাসচিব লি ইউয়ান বলেন ,

সিন চিয়াংয়ের হো থিয়ান অঞ্চলের প্রবীণরা সাধারনতঃ যে চা পান করতে পছন্দ করেন , সে চায়ের মধ্যে বেশি ঝাল দেয়া হয় ।

হো থিয়ানের অধিবাসীদের দীর্ঘায়ুর মূলে রয়েছে এ ধরনের চিকিত্সামূলক চা পান । প্রাচীনকালে যখন প্রথম হো থিয়ানে চায়ের প্রচলন করা হয় , তখন মানুষের চোখে তাকে ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হতো । চায়ের সঙ্গে স্থানীয় উদ্ভিদ ও খনিজ পদার্থ যুক্ত করা হতো । এটা খেয়ে মানুষ সুস্থ ও দীর্ঘায়ু হয়ে ওঠতো । চা পান মানুষের পাকস্থলির হজমের জন্যও সহায়ক ।

ফুসুয়ান ব্রিক টী ও চিকিত্সামূলক চা ছাড়া দুধ চাও সিন চিয়াংয়ের অন্য এক ধরনের চা বলে মনে করা হয় । এতে চা এবং দুধের স্বাদ ও রঙ যুক্ত হয়েছে । এটা খেয়ে মানুষের খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায় ।

গত এক হাজার বছর ধরে সিনচিয়াংয়ের তারিমো নদী ও ময়ু নদী বরাবর অঞ্চলে এ্যাপোসাইনাম নামে এক ধরনের চা তৈরী করা হয় । এ ধরনের চা কাজে লাগিয়ে রক্তের উচ্চ চাপ রোধ ও চিকিত্সা করা যায় । এ ধরনের চা মানুষের জীবনে সুস্বাস্থ্যের ভূমিকা পালন করে । চীনের প্রাচীন চিকিত্সা বিষয়ক গ্রন্থে বলা হয় , এ ধরনের চা পান মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী । এজন্য এ অঞ্চলে এক শ'রও বেশী বয়সী বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সংখ্যা বেশি ।

সিনচিয়াংয়ের বেশির ভাগ চা বাইরে থেকে আনা হয় । স্থানীয় চা হচ্ছে এপোসাইনাম চা । তাকে সিনচিয়াংয়ের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ বলে মনে করা হয় । কারণ এ ধরনের চা তৈরির জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন ।

এখন সিনচিয়াংয়ে আরো বেশি লোক চা পান করতে পছন্দ করেন । তাদের বিশেষ করে চীনের অভ্যন্তরভাগের তৈরি নানা রকম চা ভাল লাগে ।

২০০২ সালে সিনচিয়াংয়ে চা তৈরী ও পান বিষয়ক সংস্কৃতি সমিতি গড়ে তোলা হয় । সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ , হোটেলসহ বিভিন্ন গণ ব্যবহার্য স্থানে অতিথিদের আরো ভালভাবে পরিসেবা প্রদানের জন্য বেশ কিছু চা পান বিষয়ক কর্মী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । এর সঙ্গে সঙ্গে চা তৈরী ও পান বিষয়ক বিবিধ তত্ত্ব ও জ্ঞানও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China