v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের পিয়ানো রাজকুমারী ছেন সা
2009-06-22 21:05:47
আজকের অনুষ্ঠানে চীনের একজন নামকরা পিয়ানো বাদকের কাহিনী শ্রোতাবন্ধুদের বলবো আপনাদের বন্ধু আমি ফোং সিউ ছিয়েন । এই পিয়ানো বাদক একজন যুবতী মেয়ে , তার নাম ছেন সা । পোল্যান্ডের ফ্রেদারিক ছোবিন পিয়ানো প্রতিযোগিতা ও ব্রিটেনের লিইস পিয়ানো প্রতিযোগিতা হলো পিয়ানো বাজানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের দুটি সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা । চীনে শুধু ছেন সা এ দুটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন । তাই পিয়ানো বাদক মহল ছেন সাকে ' পিয়ানো রাজকুমারী' বলে আখ্যা দিয়েছে । তার পিয়ানো বাদন শুধু চীনে নয় , ব্রিটেন , অষ্ট্রেলিয়া , জার্মানী , পোলান্ড ও জাপানের শিল্পী মহলের গভীর প্রশংসা পেয়েছে ।

ছেন সা'র বাজানো সুরের বৈশিষ্ট্য হলো সুরের ভাব ও অনুভূতি পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করা । পিয়ানো বাজানোর সময় তিনি ছোপিনের অমায়িকতা ও রবার্ট সুমানের আবেগ নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে পারেন । ছেন সা'র বাজানো সুর শুনে দর্শকরা মুগ্ধ হন । ছেন সা বলেন , আমি আন্তরিকতার সঙ্গে পিয়ানো বাজাই এবং সুরের মাধ্যমে নিজের অনুভূতি দর্শকদের জানাই । আমি মনে করি , সুরের ভাব অন্বেষণ যেন একজন অন্ধ বড় হাতীর গা বুলানোর মতো কঠিন । সুর নানা ধরনের ভাব প্রকাশ করতে পারে , সব ধরনের ভাব ও অনুভব প্রকাশ করা একজনের পক্ষে সম্ভব হবে না । তাই সংগীতবিদ বা দর্শকরা সংগীত উপভোগের সময় তার নিজের মনের কথা শুনতে পাবেন অথবা নিজের পছন্দ এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুভূতি পাবেন। তাই আমার বাজানো সুর সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মূল্যায়ন রয়েছে ।

১৯৭৯ সালে পশ্চিম চীনের ছুনছিং শহরের এক শিল্পী পরিবারে ছেন সার জন্ম । তার বাবা একজন বাদক , তার মা একজন বেলি নৃত্যশিল্পী । তাই ছেন সা সংগীত পরিবেশে বড় হয়েছেন । ছেন সা ছোট বেলা থেকেই সংগীত পছন্দ করেন । ছয় বছর বয়সে তার বাবা-মার ইচ্ছা অনুসারে তিনি বেহালা শিখতে শুরু করেন । তবে এক বছর চর্চার পরও তিনি বেহালা পছন্দ করতে পারেন নি । তাই তিনি বেহালা ছেড়ে দিয়ে পিয়ানো শিখতে শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ছেন সা সি ছুয়ান প্রাদেশিক সংগীত ইন্সটিটিউটের পিয়ানো প্রফেসর তান চাও ই'র কাছ থেকে পিয়ানো শিখতে শুরু করেন । দশ বছর বয়সে ছেন সা চীনের জাতীয় তরুণ পিয়ানো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন এবং তের বছর বয়সে তিনি ' চু চিয়ান কাপ' জাতীয় তরুণ পিয়ানো প্রতিযোগিতায় প্রথম হন । ১৫ বছর বয়সে ছেন সা চীনের আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং যুব গ্রুপে প্রথম হন । ১৯৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সী ছেন সা ব্রিটেনের লিডস পিয়ানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং চতুর্থ স্থান পান । এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের মধ্যে ছেন সা'র বয়স সবচেয়ে কম ছিল। চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা ব্রিটেনের টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় । ছেন সার বাজানো সুর ব্রিটেনের দর্শকদের মুগ্ধ করে । তখন থেকে ছেন সা বিদেশে পিয়ানো শেখা ও পরিবেশনের জীবন শুরু করে ।

১৯৯৭ সালে ছেন সা ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের গীল্ডহল নাট্য ও সংগীত বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন । ১৯৯৯ সালে তিনি ব্রিটেনের বাদক হিসেবে সার্টিফিকেট পান । ২০০১ সালে ছেন সা সংগীতের মাস্টার্স ডিগ্রি নেন । পরে তিনি আবার জার্মানীর হানোভার নাট্য ও সংগীত ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেন । বিদেশে লেখাপড়া ও অনুষ্ঠান পরিবেশনের অভিজ্ঞতা তার পরিবেশিত সুরে নতুন উপাদান মিশিয়েছে । তিনি বলেন , চীনে ও বিদেশে আমি সংগীত শিখেছি । তবে চীনে ও বিদেশে আমার অনুভূতি এক নয় । সংগীত শেখার জন্য স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকতে না পারলে অন্তত অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচিত হতে হবে এবং তার প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে । যা গ্রহণ করেছি , আমি তা' আমার বাজানো সুরে নিজের অনুভূতি হিসেবে প্রকাশের চেষ্টা করছি ।

ছেন সা যুবতী মেয়ে হলেও অনুষ্ঠান ছাড়া মেকআপ করেন না । তিনি মাথার চুল সহজভাবে পিছনে বাধেঁন এবং সাধাসিধে কাপড় পরেন । অনুষ্ঠান ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ের মতো সহজ জীবন পছন্দ করেন । তার চোখ দুটি উজ্জ্বল , তার গায়ে যুবতী মেয়ের চঞ্চলতা ও বয়স্ক মানুষের দৃঢতার লক্ষণ রয়েছে।

বাদ্যযন্ত্র বাদন শেখা ছেলেমেয়ের জন্য তাদের শৈশব্যকাল সংক্ষিপ্ত । পিয়ানো শেখার দিন থেকে বেশির ভাগ অবসর সময় ছেন সা পিয়ানো চর্চা করেন । সমবয়সী ছেলেমেয়ের তুলনায় ছোটবেলার জীবনের আনন্দ তার কম বলা যায় । কিন্তু তার হারানো আনন্দটুকু আজকে অন্য উপায়ে ছেন সা'কে ফেরত দিয়েছে । আজ পিয়ানোর সামনে বসে ছেন সা তার বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানাতে চান । বাবার কড়া শাসনের ফলেই তিনি আজকের সুফল পেয়েছেন । বাবা-মার উত্সাহ ও অনুপ্রেরণায় ছেন সা একটির পর একটি অসুবিধা অতিক্রম করতে পেরেছেন । ছেন সা বলেন , বাবা-মা আমার দৃষ্টান্ত । তাদের কাছ থেকে আমি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা এবং অসুবিধার সময় আস্থা স্থাপনের গুণ শিখেছি । আমি বিশ্বাস করি , পৃথিবীতে অতিক্রম করতে পারা যায় না এমন অসুবিধা নেই । আগে আমি যখন অসুবিধা বা দুঃখের সম্মুখীন হতাম , তখন মনে করতাম আমি জীবনের সবচেয়ে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি । তবে অসুবিধা কাটিয়ে ওঠে বুঝতে পেরেছি আমি শুধু একটি সাধারণ অসুবিধার মোকাবিলা করেছি । এ সব অভিজ্ঞতা আমাকে নিজেকে জয় করতে সাহায্য করেছে ।

ছেন সা প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক শ'টি অনুষ্ঠানে পিয়ানো বাজান । এ ধরনের ব্যস্ত জীবনে তিনি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন । অনুষ্ঠান শেষ করে বাসস্থানে ফিরে ছেন সা ঘুমোতে পারেন না , অনেক সময় রাত তিন-চারটা পর্যন্ত তিনি জেগে থাকেন । তাই মাঝে মাঝে তাকে ঘুমের ওষুধের উপর নির্ভর করতে হয় ।

পিয়ানো ইতিমধ্যে ছেন সার শরীরের একটি অংশে পরিণত হয়েছে । প্রতিদিন পিয়ানোর উপর হাত বুলানো তার নিত্য জীবনের একটি অবশ্য করণীয় কাজ হয়েছে । শত ব্যস্ত হলেও ছেন সা প্রতিদিন দু ঘন্টা পিয়ানো চর্চা করেন । একা বসে বসে পিয়ানো বাজানো তার জন্য একটি উপভোগের কাজ। হিসেবের পাতায় দেখা যায় , জীবনের ৮০ শতাংশ সময় ছেন সা কাজ করেন । এ ধরনের অবস্থা প্রায় দশ বছর স ধরে চলছে । তার পরিকল্পনা অনুসারে তিনি কমপক্ষে আরো দশ বছর মনপ্রাণ দিয়ে পিয়ানো বাজাবেন । প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তিনি আবারও নতুন অনুষ্ঠানের প্রতীক্ষায় থাকেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China