v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনে টার্নার প্রসঙ্গে এক ধরণের উষ্ণতা সৃষ্টি হয়েছে
2009-06-17 15:17:13

   বৃটেনের সবচেয়ে মহান ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী জোসেফ ম্যালর্ড উইলিয়াম টার্নারের শিল্প কর্মের এক প্রদর্শনী এখন চীনের আর্ট গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো টার্নারের শিল্পকর্ম চীনে প্রদর্শিত হচ্ছে। চীনের চিত্রকলা ক্ষেত্রের অনুরাগী ও শিল্পীবৃন্দ চিত্রকলা কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী এবং ব্যাপক জনসাধারণ এ প্রদর্শনী পরিদর্শন করছেন। টার্নার প্রসঙ্গে এক ধরণের উত্সাহ চীনে এখন সবল হয়ে উঠছে।

    ইউরোপের চিত্রকলার ইতিহাসে ১৯ শতাব্দীতে জোসেফ ম্যালর্ড উইলিয়াম টার্নারের অবস্থা একটু ভিন্ন ধরণের। তিনি সারা জীবন ল্যান্ডস্কেপ আঁকার চেষ্টা করেছেন এবং ল্যান্ডস্কেপকে অভূতপূর্ব উচ্চতায় উন্নীত করেন। শিল্প ক্ষেত্রে তাঁর দুঃসাহসী এবং ফলপ্রসূ জুরি খুঁজে বের করা ১৯ শতাব্দীর শেষ দিকের ইমপ্রেশেনিজম আর্ট এবং ২০ শতাব্দীর অ্যাবক্সট্রাক্ট এক্সপ্রেশেনিজম আর্টের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

    চীনের শিল্প মহলে টার্নারের বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পশ্চিমা শিল্পের সঙ্গে চীন প্রথমে যোগাযোগের সময় সবচেয়ে আগে চীনে পশ্চিমা শিল্পীদের নামগুলোর মধ্যে টার্নার রয়ে ছিল। টার্নার চীনের চায়নীজ চিত্রকলা ও ল্যান্ডস্কেপের উন্নয়নের ওপর প্রভব সৃষ্টি করেছেন। চীনের চিত্রকলা মহল অনেক আগে থেকেই টার্নারের শিল্পকর্ম উপভোগ করতে চেয়েছিল। তা সত্ত্বেও নানা ধরণের কারণে এই ইচ্ছা আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। টার্নারের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী ২৩ এপ্রিল থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত পেইচিংয়ে প্রদর্শিত হয়। টার্নারের কর্ম প্রথমবারের মতো এশিয়ায় প্রদর্শিত হয়। চীনের আর্ট গ্যালারীর মহাপরিচালক ফান তি আন মনে করেন, টার্নারের শিল্পকর্ম প্রথমবারের মতো চীনে আসার তাত্পর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

    চীনের শিল্প মহল এবং চীনা জনসাধারণের জন্য আমি একটি কথা বলতে চাই। তা হলো "ইতিহাসের স্মরণ এবং আধুনিক সংলাপ"। টার্নার চীনের আধুনিক মহলে সুপরিচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। টার্নারের কর্মের প্রদর্শনী আধুনিক শিল্পে চীন ও বৃটেনের শিল্পের বিনিময় জোরদার করেছে।

    এবারের প্রদর্শনী চীনের আর্ট গ্যালারী এবং বৃটেনের সাংস্কৃতিক সমিতি, তেত বৃটেন আর্ট গ্যালারীর যৌথ সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, টার্নার মারা যাওয়ার আগে উইল করে দিয়েছেন যে, তাঁর শিল্পকর্ম দেশের জন্য চাঁদা এবং তেত বৃটেন আর্ট গ্যালারীতে তা সংরক্ষিত থাকবে। এবারে চীনে প্রদর্শিত ১১২টি তেলচিত্র এবং জলরং চিত্র টার্নারের বিভিন্ন সময়পর্বের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পকর্ম। এর মধ্যে রয়েছে টার্নারের সৃষ্ট বিখ্যাত শিল্পকর্ম—নর্থ্যাম ক্যাসেল, সানরাইজ। সেই ১৮৪৫ সালে সৃষ্ট কর্মে টার্নারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। এ কর্মের কারণে টার্নারকে ইমপ্রেশেনিজীম আর্টের পথিকৃত্ বলে গণ্য করা হয়।

    এবারের প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা, তেত বৃটেন আর্ট গ্যালারীর কর্মকর্তা আয়ান ওয়ারেল বলেন, টার্নারের শিল্পকর্ম আরো ভালোভাবে সুরক্ষার জন্য ভবিষ্যতে এ গ্যালারীর টার্নারের কর্ম ধার নেয়ার সুযোগ কমে যাবে। তাই এবারের প্রদর্শনী চীনা দর্শকদের জন্য খুব মূল্যবান। তিনি বলেন,

    এখানে বয়ে আনা চিত্রের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত জাদুঘর থেকে ধার নেয়া গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম। টার্নার ছিলেন আমাদের বৃটেন আর্ট গ্যালারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। এসব গুরুত্বের কারণে ভবিষ্যতে টার্নারের কর্ম ধার নেয়ার সুযোগ কমে যাবে। তাই চীনা দর্শকদের জন্য এবার হচ্ছে একটি দুর্লভ সুযোগ।

    টার্নারের শিল্পকর্ম চীনে আসায় চীনা দর্শকদের মধ্যে তুমুল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রদর্শনী পরিদর্শনকারীদের মধ্যে অধিকংশই হচ্ছেন চিত্রকলা কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী। তাঁরা বিশেষভাবে নান চিং এবং থিয়ান চিনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন। চিত্রকার ছেন থাও পেইচিংয়ে একটি ব্যক্তিগত চিত্রকলা স্কুল খুলেছেন। তিনি সংবাদদাতাদেরকে বলেন, আগে তিনি বইতে টার্নারের কর্ম দেখেছেন। কিন্তু তাঁর আসল কর্ম দেখার অনুভূতি সত্যিই ভিন্ন। তিনি বলেন,

    বইতে তাঁর ছবি এবং তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। আসল কর্ম দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

    কেন্দ্রীয় চিত্রকলা কলেজের তেলচিত্র বিভাগের শিক্ষক কাও থিয়ান সিওং ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, টার্নারের যুগ আজকের চেয়ে অনেক আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু টার্নারের কর্ম চীনের তেলচিত্র শিল্পে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন

    টার্নারের কর্ম থেকে আমরা দেখি, পশ্চিমা তৈলচিত্র একটি মূল্যবান কুন্ডার মতো। যেন আমাদের নিজের সংস্কৃতি। আমরা অব্যাহতভাবে পর্যালোচনা করি এবং নতুন বিষয় খুঁজে পাবো।

    তেত বৃটেন আর্ট গ্যালারীর মহাপরিচালক স্টিফেন দেউচার মনে করেন, শিল্পের কোন রাষ্ট্রীয় সীমান্তরেখা নেই। চীনা দর্শকদের টার্নারকে পছন্দ করার মতো চীনের শিল্পের প্রতি বৃটিশদের ভালোবাসাও দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন,

    আমরা মনে করি, শিল্পের বিনিময় একতরফা নয়। বর্তমান বৃটেনে চীনের আধুনিক শিল্পের প্রতি বৃটিশ জনগণের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। চীন ও বৃটেনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কার্যক্রমে অংশ নিতে আমরা খুব আনন্দ বোধ করি।

    জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও বৃটেনের সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘন ঘন হচ্ছে। বৃটেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী এবং পরিবেশন দলের চীন সফর ছাড়াও, চীনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃটেনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছরের প্রথম দিকে চীনের ছিন শি হুয়াং সমাধির টেরাকোটা ওয়ারিয়াস অ্যান্ড হোসিস জাদুঘরের শতাধিক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ বৃটেশ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয় এবং তুমুল হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। পরিদর্শনকারীদের সংখ্যা খুব বেশি বলে জাদুঘরকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখতে হচ্ছে।

    বৃটিশ কাউন্সিলের মহাপরিচালক মার্তিন ড্যাভিদসন বলেন, টার্নারের চিত্রকলার প্রদর্শনী এবং টেরোকোটা ওয়ারিয়াস অ্যান্ড হোসিস প্রদর্শনী উভয়েই চীন ও বৃটিশ সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতার আদর্শ। তিনি বলেন,

    ২০০৮ সালে বৃটেনে আয়োজিত চীনের টেরোকোটা ওয়ারিয়াস অ্যান্ড হোসিস প্রদর্শনীর মতো টার্নারের চিত্রকলার প্রদর্শনীর ভূমিকা একই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এ ধরণের সহযোগিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দু'দেশের অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক বিনিময়ের আদর্শ। আমি আশা করি, এ ধরণের সহযোগিতা ভবিষ্যতে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধিশীলভাবে উন্নয়ন হবে।

    গত বছরে বৃটেনে ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকতাসম্পন্ন চীনের সংস্কৃতি দিবস আয়োজিত হয়। জানা গেছে, চলতি বছর চীন ও বৃটেনের মধ্যে আরো কয়েকটি ভবিষ্যতমুখী স্থায়ী সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম আয়োজিত হবে। (লিলি)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China