v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীনের তাম্র খোদাই শিল্পী চু পিং রেন
2009-06-17 14:53:59
 এ তাম্র খোদাই শিল্পীর নাম চু পিং রেন । তিনি চীনের তাম্র খোদাই ক্ষেত্রের একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী । তিনি শিল্পাচার্য । তিনি আধুনিক চীনের দশটি বড় তামার স্থাপত্য তৈরী করে অনেক জাতীয় পেটেন্ট পান ,নতুন ধরনের তামা গোলার উপায় সৃষ্টি করেন এবং চীনের প্রথম তাম্র খোদাই শিল্পের যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন ।

    এ বছর চু পিং রেনের বয়স ৬৫ বছর । পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের শাও সিং শহরের একটি তামার পাত্র তৈরী পরিবারে চু পিং রেনের জন্ম । তিনি হচ্ছেন পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের তামার পাত্র তৈরী কারিগর । তিনি ছোট বেলা থেকেই তামার পাত্র তৈরীর কাজ করেন । তিনি বলেন , আমি তামার পাত্র তৈরী পরিবারে জন্ম নিয়েছি বলে তামার পাত্রকে আমি পছন্দ করি। আমি তামা সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধ লিখেছি । সে প্রবন্ধে আমি লোহা ও সোনার সঙ্গে তামার তুলনা করেছি । তুলনার পর আমি বুঝতে পেরেছি ,তামা এক ধরনের মূল্যবান ও বৈশিষ্টপূর্ণ ধাতু । তামা বিভিন্ন অবস্থায় থেকেও সহজে পরিবর্তিত হয় না , তার স্থায়িত্ব ও নম্রতা আমি পছন্দ করি । তাই তামার পাত্র তৈরীর কাজও আমি পছন্দ করি ।

    চু পিং রেন বলেন , চীনের সংস্কৃতিতে তামা ধনসম্পত্তির প্রতীক ছিল। চীনের ইতিহাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পারিবারিক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা বেশির ভাগ পাত্র ছিল তামা দিয়ে তৈরী। পরে দৈনন্দিন জীবনের অনেক পাত্রও তামা দিয়ে তৈরী হতো । যেমন মদের পাত্র , পানির পাত্র ও আয়নার হাতা তামা দিয়ে তৈরী । চেচিয়াং প্রদেশের অনেক স্থানে মেয়ের বিয়ের সময় যৌতুকের মধ্যে অনেক তামার পাত্র ছিল । তাই শাও সিং শহরের তামার পাত্র তৈরীর দোকানই বেশি ।

    গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে চু পিং রেন তামার শিল্পকর্ম তৈরীর কাজ শুরু করেন । সেই সময় চু পিং রেন ও তার বাবা হান চৌ শহরে একটি তামার অক্ষরের সাইনবোর্ড তৈরীর দোকান গড়ে ওঠে । তামার সাইনবোর্ড তৈরীর জন্য অনেক দোকান মালিক তার কাছে আসেন , অল্প সময়ের মধ্যেই হানচৌ শহরে একই ধরনের অনেক দোকান দেখা দেয় । চু পিং রেন জানেন , তিনি যে তামার অক্ষর তৈরীর কাজ করছেন , তা' কঠিন কাজ নয়, এতে কোনো নৈপুণ্য ও প্রযুক্তি নেই বলা যায় , তাই অনেকে সহজেই তা অনুকরণ করতে পারে । চু পিং রেন তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চান না , তিনি তামার শিল্পকর্ম তৈরী করতে চান । এর পরের দেড় বছরে চু পিং রেন ধাতুর প্রক্রিয়াকরণ , লোকশিল্প ও স্থাপত্য বিষয়ের বই পড়েন এবং ধাপে ধাপে তামার পাত্র তৈরী থেকে তামার স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম তৈরীর কাজ শুরু করেন ।

    চীনের ইতিহাসে কিছু তামার স্থাপত্য ছিল , তবে তামার স্থাপত্যের তথ্য সীমিত । ২০০০ সাল থেকে চু পিং রেন তামার স্থাপত্য তৈরীর কাজ শুরু করেন । হানচৌ শহরের লিন ইং মন্দিরের তাম্র হল হলো চু পিং রেনের তৈরী প্রথম তামার স্থাপত্যকর্ম । এ হলে তিনি তামা ঢালাই করে তাতে তাপ দিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং খোদাই করে তামার অনেক শিল্পকর্ম তৈরী করেন । এ তামার স্থাপত্য বিশ্বের গিনেস রেকর্ডের অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে ।

    ২০০১ সালে হানচৌয়ের বিখ্যাত রেইফোং টাওয়ার পুনর্নিমানের সময় এ টাওয়ারকে তামার টাওয়ার হিসেবে তৈরীর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত ছিল। এ সম্পর্কে চু পিং রেন বলেন , চীনের বেশির ভাগ স্থাপত্যই ইট ও কাঠ দিয়ে তৈরী ,বিশেষ করে প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর মধ্যে ধাতুর অংশ খুব কম । আলোচনার সময় আমি বলেছি , ইতিহাসে কম হলেও তামার স্থাপত্য ছিল । তামার ক্ষয়প্রতিরোধ শক্তি বেশি বলে স্থাপত্য উপাদান হিসেবে তামা ব্যবহার করা যায় । আমি আরো বলেছি , চীনে মোট তিন হাজারের বেশি টাওয়ার আছে ,এগুলো প্রায় সবই ইট ও কাঠ দিয়ে তৈরী টাওয়ার । রেই ফোং টাওয়ার পুরনো পদ্ধতিতে পুনর্নিমাণ করা হলে চীনে আরো একটি ইটের টাওয়ার বেশি হবে ,তবে তামা দিয়ে তৈরী হলে টাওয়ারটির খ্যাতি অনেক বাড়বে । চু পিং রেনের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের মন জয় করে । পরিশেষে তিনি ২৮০ টন তামা দিয়ে ৭২ মিটার উচু রেই ফোং টাওয়ার তৈরী করেন । এই টাওয়ার চীনের প্রথম রঙীন তামার টাওয়ার । এ টাওয়ার তৈরীর পর চু পিং রেন চীনের বেশ কয়েকটি পুরাকীর্তির পুননির্মাণে অংশ নেন।

    চু পিং রেন বলেন ,তামার স্থাপত্য তৈরীর সময় লোহা বা মাটির স্থাপত্যের বাইরে তামা দিয়ে সাজানো হয় । যেমন টালি , থাম বা সীলিংয়ের উপর তামার প্রলেপ দেয়া হয় , এটা যেন স্থাপত্যের দেহে পোশাক পরানোর মতো । তিনি বলেন , আগে তামার প্যাগোডা ও বৌদ্ধধর্মের হল , ঢাক ও ঘন্টা টাওয়ার তৈরী করেছি , পরে আবার তামার সেতু ও নৌকা ডিজাইন করে তৈরী করেছি । এখন তামার স্থাপত্যের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে ।

    ২০০৬ সালে চু পিং রেন পূর্ব চীনের ছান চৌ শহরে চীনের সর্বোচ্চ বৌদ্ধ টাওয়ার –থিয়েন নিন টাওয়ার পুননির্মানের কাজে অংশ নেন । নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে সেখানে এক অগ্নিকান্ড ঘটে । সেই অগ্নিকান্ড চু পিং রেনের সৃজনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে । তিনি বলেন , অগ্নিকান্ড স্থলে আমি আবিষ্কার করি আগুনে পুড়ে গলে যাওয়া তামার আকার অত্যন্ত সুন্দর , যেন একেকটি শিল্পকর্ম । আমি ঘটনাস্থলের গলে যাওয়া তামা দিয়ে অনেক শিল্পকর্ম তৈরী করেছি । তখন থেকে আমি উনুনে তামা গলিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গলে যাওয়া তামার শিল্পকর্ম তৈরী করেছি । চীনের জাতীয় যাদুঘরেও আমার গলা তামার শিল্পকর্ম রয়েছে।

    সুন্দর সুন্দর তাম্র শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যের জন্য চু পিং রেনের তৈরী শিল্পকর্মকে চীনের জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । ২০০০ সালে তিনি চীনের বিশিষ্ট লোকশিল্পী হিসেবে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংঘের একবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হন ।

    চার বছর আগে , চু পিং রেন নিজের খরচে হানচৌ শহরে তিন হাজার বগর্মিটার বিশিষ্ট একটি তাম্র খোদাই যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন । এই যাদুঘর হচ্ছে পিতলের প্রলেপের একটি বসতবাড়ি । নাগরিকরা বিনাটিকেটে যাদুঘরটি পরিদশর্ন করতে পারেন। যাদুঘরের সব শিল্পকর্ম তামা দিয়ে তৈরী । চু পিং রেন বলেন , যাদুঘরটিতে প্রদশির্ত শিল্পকর্মগুলো তার পরিকল্পনার পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র । তিনি পরবর্তীকালে আরো বেশি তামার শিল্পকর্ম তৈরী করবেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China