v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সিয়াং হাই হু হ্রদের জলাভূমির পাখির রক্ষাকারী
2009-06-16 20:22:47

সিয়াং হাই হু হ্রদ চীনের জাতীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা এবং বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের জলাভূমি । সিয়াং হাই হ্রদের জলাভূমির আয়তন প্রায় এক লাখ হেক্টর ।এখানে পানি বেশি এবং ঘাস ও গাছও বেশি । এখানে প্রায় তিনশ জাতের

পাখি আছে । এর মধ্যে বিশ্বের বিরল জাতের অনেক পাখি । সিয়াং হাই হু হ্রদ পাখির পছন্দের এলাকা ।

জলাভূমি ধরিত্রীর কিডনি ।পাখি মানবজাতির বন্ধু । স্থানান্তর,প্রজনন এবং উড্ডয়নের সময় পাখি বিপদের সম্মুখীন হতে পারে এমন কি তাদের প্রাণহানীও হতে পারে । এ সময়ে তাদের রক্ষা করতে মানবজাতির সাহায্য দরকার । এ সম্পর্কে সিয়াং হাই এলাকার পাখি সংরক্ষণ দলের নেতা লিন পাওছিং বলেন, সিয়াং হাই হু হ্রদের সংরক্ষণ এলাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত । স্থানান্তরের সময় পাখিরা সে জায়গায় যাওয়া-আসা করে থাকে । খাদ্যের অভাব বা অসুস্থ অথবা আহত হওয়ায় অনেক পাখি সঙ্গীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এ সময় তাদের বাঁচতে মানবজাতির সাহায্য দরকার ।

স্থানান্তরের পথে আহত বিরল প্রজাতের পাখিগুলোকে ত্রাণ এবং তাদেরকে পুনরায় প্রাকৃতিক জগতে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেয়ার জন্য সিয়াং হাই হু হ্রদের সংরক্ষণ এলাকায় পাখি রক্ষার জরুরী দল গঠিত হয় । বিপদে পড়ে যাওয়া পাখি দেখলে রক্ষাকারীরা সঙ্গেসঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করেন এবং তা শুশ্রসা করেন । একবার পাখী রক্ষাকর্মীরা কয়েকশ কিলোমিটার দূরের এক শহর থেকে সেখানে তখন পাখি রক্ষার জন্য টেলিফোনে অনুরোধ পান । পাখি রক্ষাকারী দলের নেতা লিন ছিংপাও সঙ্গেসঙ্গে সেই রাতেই ট্রেনে করে সেখানে পৌঁছান । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি একটি লাল ঝুঁটি সারস । মনে হয় , সে বিষাক্ত কিছু খেয়েছে এবং তার অবস্থা গুরুতর । আমি পাখিটিকে বিষমুক্ত করার ইঞ্জেকশন দিলাম । তাকে আমাদের ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি একাই লাল ঝুঁটি সারসটিকে কোলে নিয়ে ট্রেনে উঠি । ট্রেনের একজন কর্মকর্তা আমাকে তার অফিস রুমে বসান । তিনি আমাকে বলেন, ট্রেনে যাত্রী বেশি , আমার রুমে বসুন । সংরক্ষণ এলাকায় ফেরার পর আমরা সারসটির অবস্থা অনুযায়ী তার চিকিত্সা করেছি । সারসটি ৭ বছর হল এখনো জীবিত আছে । সে প্রায় ৪বারে মোট ৭টি বাচ্চা দিয়েছে ।

সিয়াং হাই হু হ্রদের সংরক্ষণ এলাকায় আহত পাখি রক্ষা ও সেবা প্রদান করা শুধু রক্ষাকারীদের কাজ নয় তা এলাকার স্থানীয় জনসাধারণের একটি দায়িত্বও । কয়েক দিন আগে একটি আহত শ্বেত সারস ভাল মানুষের শুশ্রসায় সেরে ওঠে । সিয়াং হাই এলাকায় বসবাস করা কৃষক লি ছুনফু ছেলেকে নিয়ে একদিন মোটরগাড়িতে করে বাইরে যাচ্ছিল । গ্রামের সীমান্তে এসে দেখলেন,সেখানে অনেক লোক যেন কিছু একটা দেখছে ।

সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি দেখলেন একটি বৃহত শ্বেত সারস । সারসের পা থেকে রক্ত বেরুচ্ছিল । তিনি তাড়াহুড়া করে মোটরগাড়ি থেকে নেমে শ্বেত সারসকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠে তাকে সংরক্ষণ এলাকায় চিকিত্সা করাতে নিয়ে যান । প্রথমবার এত কাছে থেকে সারস দেখার সুযোগ পেয়েছে বলে তার ছেলে খুব আশ্চর্য হয় । হঠাত শ্বেত সারসটি ছেলেটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে ছেলের চোখের ওপর একটি ঠোকর দেয় । সারসের কামড়ে ছেলের চোখে লাল হয়ে যায় । তিনি একদিকে ছেলেকে সান্ত্বনা দেন আরেক দিকে প্রথমেই শ্বেত সারসটিকে সংরক্ষণ এলাকায় চিকিত্সার জন্য পাঠিয়ে পৌঁছে দেন । তার পর ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যান । লি ছুনফু বলেন , আমি অনুতাপ করি না । আহত সারসটিকে মৃত্যুর মুখে ফেলে আসতে তো পারি না ।

সিয়াং হাই এলাকার পরিবেশ সুন্দর । সিয়াং হাইর পাখি সুন্দর । লি ছুনফুর মতো পাখি ভালবাসেন এবং পাখি রক্ষা করেন এমন লোক সিয়াং হাই এলাকায় অনেক আছেন । গত কয়েক বছরে সিয়াংহাই বন্য পাখি ত্রাণ কেন্দ্রে ইতোমধ্যেই সাফল্যের সঙ্গে লাল ঝুঁটি সারস ও স্বর্ণবর্ণ ইগলসহ ১৫ জাতের ১১৩টি মূল্যবান পাখির চিকিত্সা ও সংরক্ষণ করা হয়েছে । উদ্ধার ও চিকিত্সাপ্রাপ্ত প্রতিটি পাখির পেছনে একটি মুগ্ধকর কাহিনী রয়েছে ।

সিয়াংহাই সংরক্ষণ এলাকার ওয়াং লিওই জানান , তারা সাফল্যের সঙ্গে একটি আহত লাল ঝুঁটি সারসকে রক্ষা করেছে । ত্রাণ কেন্দ্রে এক বছর ধরে চিকিত্সা গ্রহণের পর লাল ঝুঁটি সারস সুষ্ঠু আরোগ্য হয়ে ওঠে । ত্রাণ কেন্দ্রের কর্মীরা তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দিতে চান । কিন্তু লাল ঝুঁটি সারস ত্রাণ কেন্দ্রের সামনের রীড মার্শিস ক্ষেতের ওপর ঘুরেফিরে ত্যাগ করতে চায় না । ঠিক এ সময় এক ঝাঁক বন্য সারস দক্ষিণাঞ্চল থেকে সিয়াংহাইতে ফিরে আসে। কিছু দিন পর লাল ঝুঁটি সারস এর মধ্যে একটি বন্য সারসের সঙ্গে প্রেমালাপ শুরু করে এবং শিগগিরই একটি পরিবার গঠন করে । শীতের সময় পাখিরা দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর শুরু করে ।

ত্রাণপ্রাপ্ত মাদি সারস ও তাদের সন্তান লেগেই থাকে , সারস দলের সঙ্গে পুরুষ বন্য সারস দক্ষিণাঞ্চলে চলে যায় । ত্রাণকেন্দ্রের কর্মীরা ভাবতে পারেন নি যে , দ্বিতীয় বছরের বসন্তকালে সেই বন্য সারস আবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সিয়াংহাইতে ফিরে আসবে । এসম্পর্কে ওয়াং লিওই বলেন, আমরা দেখেছি, সেই বন্য সারস আমাদের রীড মার্শিস ক্ষেতে বিরামহীনভাবে ডাকে ও নাচে । এ দৃশ্য দেখে আমরা খুব খুশী । সারসরা আবার পরিবার গঠন করে এবং বাচ্চা দেয় । শীতের সময় সব লাল ঝুঁটি সারস চলে যাওয়ার পরই আমরা সেই বন্য সারসের আসা যাওয়া দেখতে পাই । বন্য সারস আর অন্য জায়গায় স্থানান্তর করছে না । তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না । তারা সিয়াং হাই সংরক্ষণ এলাকায় থাকছে । প্রতি বছর তাদেরকে সিয়াংহাইয়ের জলাভূমিতে বেড়াতে দেখা যায় ।

গত কয়েক বছরে সিয়াংহাই সংরক্ষণ এলাকা এম্বুল্যান্স কেনা, ২৪ ঘন্টার জরুরী টেলিফোন বসানো এবং বন্য পাখি ত্রাণদল সম্প্রসারণে ৫ লাখ রেনমিনপি বরাদ্দ করেছে । প্রয়োজন হলে তারা যে কোনো সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত পাখি উদ্ধার করতে পারেন । ত্রাণ কেন্দ্রে ১৬জন পেশাদার প্রকৌশলী এবং তিনজন পাখি বিষয়ক মাষ্টারডিগ্রিপ্রাপ্ত কর্মী কাজ করছেন । চিকিত্সার পর বন্য পাখির জীবিত থাকার হার ৯০ শতাংশের বেশি । এ সম্পর্কে সিয়াং হাই সংরক্ষণ এলাকার পরিচালনা ব্যুরোর উপপ্রধান পাও জুন বলেন, গত কয়েক বছরে আমরা সাফল্যের সঙ্গে চিলিন প্রদেশের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল এবং অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় এক হাজারেরও বেশি পাখি উদ্ধার ও চিকিত্সা করেছি । লাল ঝুঁটি সারস, শ্বেত সারস, ধুসর সারস এবং স্বর্ণবর্ণ সারসসহ জাতীয় পর্যায়েরপাখি রক্ষা পেয়েছে ।

পাখি রক্ষা সম্পর্কে প্রচারের মধ্য দিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের পাখি রক্ষার চেতনা অনেক উন্নত হয়েছে । জনসাধারণের সাহায্যে আমরা শতাধিক পাখি উদ্ধার করেছি । এর মধ্যে ৪৮টি হল জাতীয় পর্যায়ের মূল্যবান পাখি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China