v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
নান চিং শহরে মার্কিনী কেইথের সুখী জীবন
2009-06-12 21:11:26
আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে মার্কিনী কেইথ এফ গ্যালিনেলির চীনের জীবন সম্পর্কে কিছু বলবো । তিনি এখন দক্ষিণ-পূর্ব চীনের চিয়াং সু প্রদেশের নান চিং শহরের একটি বিদেশি ভাষার টি ভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক । এ অনুষ্ঠান স্থানীয় লোকজনের সবচেয়ে প্রিয় টি ভি অনুষ্ঠান । উপস্থাপক ছাড়া তিনিও একজন শিক্ষক । চীনে তিনি একজন প্রেমিকও খুঁজে বের করেছেন । একজন সুন্দরী চীনা মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে । এখন আমরা তার গল্প শুনবো ।  

আপনারা যে কথা শুনছেন , তা হল কেইথ এর । তিনি শ্রোতা বন্ধুদের নিজের পরিচয় দিচ্ছেন । তিনি হলেন চিয়াং সু প্রদেশের শিক্ষা টি ভি চ্যানেলের একজন উপস্থাপক । তিনিও নান চিং বিদেশি ভাষা স্কুলের চীন ও কাডানার আন্তর্জাতিক হাই স্কুলের শিক্ষক ।

২০০১ সালে চাকরি পরিবর্তনের কারণে তিনি নান চিং এ পুরানো এবং প্রাণচঞ্চল শহরে এসেছেন । যখন প্রথম নান চিং শহরে আসেন , তখন কেইথের পরিকল্পনা ছিল এখানকার কাজ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাবেন । তবে জীবনে সবসময় পরিবর্তন ঘটে । তার নিজের কথা হল : তিনি খুব ভাগ্যবান একজন টি ভি উপস্থাপক হয়েছেন । তিনি বলেন :

আমি খুব ভাগ্যবান । আমি এবং আমার বন্ধু একসাথে একটি পানসালায় গিয়েছি । সেখানে একজন চীনা মেয়ে আমাদের বলেন তিনি চিয়াং সু টি ভি স্টেশনে কাজ করেন । আমরা টি ভি অনুষ্ঠান তৈরি সম্পর্কিত অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি । পরের দিন সে মেয়ে আমাকে ফোন করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন , আমি কি "স্মল টক" টকশোর ব্যাপারে আপনার সাহায্য পেতে পারি ? আমি বলি , কোন সমস্যা নেই । এভাবেই আমরা প্রথম অনুষ্ঠান একসাথে তৈরি করেছি ।

স্মল টক হলো চিয়াং সু প্রদেশের একমাত্র ইংরেজী টক শো অনুষ্ঠান । কেইথ এবং তার সহকর্মী বিভিন্ন দেশের এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ব্যক্তিদের স্টুডিওতে আমন্ত্রণ করেন । তারা মাঝে মাঝে অর্থনীতি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন , মাঝে মাঝে চীনের খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং অনুষ্ঠানে চীনা খাবার রান্না করে দর্শকদের বোঝান । কেইথের সহকর্মী সি লিউ মেই বলেন , কেইথ ব্যক্তিগত জীবনে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ,, তবে কাজ সম্পর্ক তিনি খুব কঠোর । তিনি বলেন :

কারণ তার চিত্র খুব আন্তরিক , তাই তার সঙ্গে সহযোগিতা করা খুব আরামদায়ক । অনুষ্ঠান তৈরি শেষে তিনি আবার চেক করতে হয় ।

কেইথ এ কাজের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন । চীনা সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিটি অনুষ্ঠানের আলোচ্যবিষয় বাছাই করেন , চীনা দর্শকদের পছন্দ অনুযায়ী অনুষ্ঠান তৈরি করেন । ঠিক তার মনোযোগ এবং পরিশ্রম দর্শকদের মুগ্ধ করেছে । সি লিউ মেই বলেন , কেইথ নান চিংয়ে খুব বিখ্যাত । তিনি বলেন ;

অনেকেই তাকে জিনেন । কারণ আমাদের অনুষ্ঠান ইংরেজী অনুষ্ঠান । আমার মনে হয় শুধু ইংরেজী পারা এমন দর্শক আমাদের অনুষ্ঠান দেখেন । আসলে তাই নয় , অনেক টেক্সি টাইভারও তার অনুষ্ঠান দেখেন । রাস্তায় অনেকেই তাকে দেখে তাকে জিনতে পারে ।

প্রতি সপ্তাহের অনুষ্ঠান তৈরি করা ছাড়া কেইথ কয়েক শ' ছাত্রছাত্রীদের শেখান । চীনে একজন শিক্ষক হতে পেরে তিনি খুব গর্বিত । তিনি নান চিং শহরের বিদেশী ভাষা স্কুলের চীন কানাডা হাই স্কুলে রসায়ন বিদ্যা শেখান । অনেক বিদেশি চীনে ইংরেজী ভাষা শেখান । ইংরেজী ভাষায় চীনা ছাত্রছাত্রীদের রসায়ন বিষয় বোঝাতে পারে বলে কেইথের ছাত্রছাত্রীরা তাকে খুব সম্মান করে । তার ছাত্রী হু ইয়ুন সিন বলে :  

প্রথমে ইংরেজী ক্লাস শোনা আমাদের জন্য অনেক কঠিন । তবে কেইথ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমাদের বোঝান , যেমন ছবি আঁকা এবং উদাহরণ দেয়া । তার চীনা ভাষার মানও অনেক উচ্চু। চীনা ভাষা না বললেও তার ভাষা , তার আঁকা ছবির মাধ্যমে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারবো ।

কেইথের ছাত্রছাত্রীদের মনে শিক্ষক ছাড়াও কেইথ তাদের একজন বন্ধু , কেইথের সঙ্গে তারা মনের কথাও বলতে পারে , কেইথও সবসময় তাদের উত্সাহ দেন । ছাত্রী ইন ইয়াং ইউয়ে বলে :

আমি একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাই । যখন আমি কাঠিন্য ঠেকাই , তখন আমি কেইথের সঙ্গে বিনিময় করতে পারি এবং তার কাছ থেকে সহায়ক প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারি । এ ছাড়া কেইথ আমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেন ।

কেইথের মনে এসব ছাত্রছাত্রী তার নিজের ছেলেমেয়ের মত , তাই তাদের ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে । তিনি বলেন :

আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের অনেক যত্ন নেই । তারা যেন আমার নিজের ছেলে মেয়ের মত । আমার ছেলে মেয়ে নেই , তবে তারা আমার ছেলেমেয়ে । আমার তিন , চার শ' ছেলেমেয়ে আছে ।  

কেইথের জীবনে সবচেয়ে সুখীর ব্যাপার হল একজন সুন্দর চীনা মেয় লিনার সঙ্গে বিয়ে করেছেন । সাংহইয়ে তাদের পরিচয় হয়েছে । অবশেষে তার স্ত্রী লি না সাংহাইয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নান চিং শহরে এসেছেন । লি না বলেন , যখন পানশালায় প্রথম কেইথকে দেখে , তার বুদ্ধি এবং রসবোধ লি নাকে মুগ্ধ করেছে ।

আমার মনে তার প্রথম ছাপ হল এ বিদেশি মানুষের চীনা ভাষা অনেক ভালো , তখন আমরা অনেক ক্ষণ ধরে আলাপ করেছি । তিনি অনেক কিছুই জানেন । যখন আমরা একসাথে চীনের অক্ষর গ্যাম খেলি , তখন আমার মনে হয় তিনি খুব বুদ্ধিমান ।

প্রতিদিনের কাজ শেষে কেইথ লি নার সঙ্গে আলাপ করতে পছন্দ করেন । মাঝে মাঝে তাদের মতামত ভিন্ন হলে তর্কবিতর্কও হয় । তবে প্রেমিক প্রেমিকার চোখে এমন তর্কবিতর্কও খুব মিষ্টি ।

ছুটির দিনে চীনে থাকা অনেক বিদেশির মত কেইথ স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন । চীনের অনেক বড় শহর এবং বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে তারা গিয়েছিলেন । কেইথ বলেন , চীনে ভ্রমণ করতে অনেক সুবিধা ।

চীনে ভ্রমণ করতে খুব সহজ । ট্রেন টিকিট বা বাস টিকিট কিনতে পারে । তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের গাড়ি না থাকলে ভ্রমণের জন্য অনেক অসুবিধা এবং খবরও অনেক বেশি । আমি পাহাড়ে সাইকেল চালাতে পছন্দ করি । রাতে আমি খাবার খেতে হয় , স্নান করতে হয় এবং পিয়ার খেতে হয় , বিভিন্ন জায়গায় হোটেল আছে , আমার একসব চাহিদা মেটাতে পারে ।

নান চিংয়ে ৬ বছর ধরে থাকা কেইথ পুরোপুরিভাবে স্থানীয় জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়েছেন । তিনি নিজেকে সাধারণ নান চিং নাগরিক হিসেবে দেখেন এবং নান চিংকে নিজের বাড়ি হিসেবে মনে করেন ।

কেইথ বলেন , নান চিং শহর সরকার তাকে নীতি কাউন্সুলেট কাজে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ করেছিল । সরকারী কর্মকর্তারা খুব আন্তরিকভাবে কাজের অবস্থা এবং অগ্রগতি অবহতি করেন এবং শহরের নীতিমালা সম্পর্ক তাদের মতামত শুনেন । কেইথ বলেন , পরে তিনি দেখেছেন নিজের অনেক প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়েছে । এর জন্য তিনি মনে করেন তিনি ইতোমধ্যেই এ শহরের একজন সদস্য হয়েছে ।

কেইথ বলেন , চীনে জীবনযাপন ও কাজ করতে উপযুগী । চীনে কাজ করতে খুব আরামদায়ক , জীবন করতেও অনেক আরামদায়ক । আমি এখানে শিক্ষাদান এবং সব কিছুই করতে পছন্দ করি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China