বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার শ্রোতা মো: গোলাম ফারুক তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের জন্মস্থান কোথায়? তিনি চীনের কোন বিশ্ববিদ্যলয়ের স্নাতক? উত্তরে বলছি, চীনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সাশিত মহা নগর থিয়েনচিন প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের জন্মস্থান। তিনি পেইচিংয়ের খনি ইনস্টিটিউটের স্নাতক।
বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার শ্রোতা এফ কামাল তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, বর্তমানে চীনের লোকসংখ্যা কত? জনবসতির ঘনত্ব কত? উত্তরে বলছি, পৃথিবীতে চীনের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। ২০০৩ সালের আদমশুমানী থেকে জানা যায় যে, চীনের সর্বমোট লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি।এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যার ২৫ শতাংশ ভাগ। চীনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব হল গড়ে ১০৭ জন।
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার শ্রোতা সুদীপ্ত সালাম তারা চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের বৃহত্তম হ্রদের নাম কি?
বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার শ্রোতা নাসির খান তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের কোন শহর এবং কোন প্রদেশের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী? উত্তরে বলছি, চীনের বৃহত্তম ও বাণিজ্য শহর--- সাংহাইয়ের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। সংশ্লিষ্ট তথ্য থেকে জানা গেছে, বতর্মানে সাংহাইয়ের লোকসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখের মতো। রাজধানী পেইচিংয়ের লোকসংখ্যা প্রায় সাংহাইয়ের মতো। চীনের হোনান প্রদেশের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এই প্রদেশের লোকসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সিছুয়ান প্রদেশের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী ছিল। কিন্তু যখন ছুনছিয়েন শহর সিছুয়ান প্রদেশ থেকে কেন্দ্রীয় শাসিত মহানগরে রুপান্তরিত হওয়ার পর সিছুয়ান প্রদেশের লোকসংখ্যা অনেক কমে গেছে।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার শ্রোতা সুলতান মাহমুদ ফাগুন তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, সি আর আই বাংলা বিভাগে মোট কয়েক জন কর্মচারী আছে? উত্তরে বলছি, বতর্মানে বাংলা বিভাগে মোট ১৯জন কর্মচারী আছে। ১৯জনের মধ্যে ৫জন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ কর্মচারী, ২জন বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার শ্রোতা জাহিদুল হক তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে কি পাতাল রেলপথ আছে? উত্তরে বলছি, বতর্মানে পেইচিংয়ে মোট ৫টি পাতাল রেলপথ আছে। ১৯৫৮ সালে প্রথম পাতাল রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। জানা গেছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজধানী পেইচিংয়ে আরও দু'টো পাতাল রেলপথ নির্মান করা হবে।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুসিদাবাদ জেলার শ্রোতা সুবর্ণা ভট্টাচার্য তার চিঠিতে বতর্মানে চীনে জাতীয় সংসদের আসনের সংখ্যা কত? এবং কত বছর পর পর নিবার্চন করা হয় ?
প্রিয় বন্ধু, আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় চীনের রাজনৈতিক কাঠামো ভিন্ন। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উচ্চতম সংস্থা এবং আইনের অধিকার কাযর্করী করার ব্যাপারে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংস্থা। প্রদেশের , স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ও কেন্দ্র-শাসিত শহরের গণ কংগ্রেসগুলো ও গণ মুক্তিফৌজ কতৃর্ক নিবার্চিত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় গণ কংগ্রেস গঠিত। গণতান্ত্রিক পরামর্শের মাধ্যমে গোপন ভোটদান প্রথায় প্রতিনিধিদের নিবার্চন করা হয়। যদিও প্রত্যেক মেয়াদে প্রতিনিধির সংখ্যা এক রকম নয় তবু্ও সাধারণত প্রতিনিধির সংখ্যা প্রায় তিন হাজারের মতো। প্রতিনিধিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা শতকরা ২১.২ ভাগ আর সংখ্যালঘু জাতির লোকদের সংখ্যা শতকরা ১০.৯ ভাগ। জাতীয় গণ কংগ্রেস পাঁচ বছরের মেয়াদে নিবার্চিত হয়। বিশেষ অবস্থায় এর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে অথবা নিদির্ষ্ট সময়ের আগেই পরবর্তী জাতীয় গণ কংগ্রেস আয়োজন করা যেতে পারে। তা ছাড়া, বছরে একবার করে জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী অধিবেশন নিদির্ষ্ট সময়ের আগে অনুষ্ঠিত করা যায় বা স্থগিত রাখা যায়।
বাংলাদেশের যশোর জেলার শ্রোতা কবির রেজা তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, বতর্মানে বিশ্বের কত দেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। এই সূত্রে জানা গেছে, বতর্মানে চীন বিশ্বের ১৬২টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এখনে চীনের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে কিছু বণর্না করবো। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তার প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে আসছে। এই নীতির ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাম্য ও পারষ্পরিক সুবিধার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিকশিত করা, তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের সঙ্গে ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করা ও বিশ্বশান্তি অক্ষুন্ন রাখা। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে, চীন ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিতে সবর্প্রথম শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানের নীতি উত্থাপিত হয়। ১৯৫৫ সালে, চীনের প্রয়াত্ত প্রধান মন্ত্রী চৌ এনলাই "বান্ডুং সম্মেলন' নামে খ্যাত প্রথম এশিয়া-আফ্রিকার দেশসমূহের সম্মেলনে পুনরায় এই সব নীতি ঘোষণা করেন, উপস্থিত সব দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সব নীতির সাবর্মম ঐ সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণাপত্রে লিপিবদ্ধ হয়। পরে, এই পঞ্চশীল নীতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাজব্যবস্থাসম্পন্ন দেশসমূহের সধ্যকার পারষ্পরিক সম্পর্ক স্থাপনায় মূলনীতিতে পরিণত হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, যে দেশ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী তাকে থাইওয়ান কতৃর্পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারই চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। থাইওয়ান প্রদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য ভূখন্ড।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শ্রোতা জাকিয়া আহমেদ তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে মোট লোকসংখ্যার শতকরা কত ভাগ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে?
উত্তরে বলছি, চীন একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ৮০ শতাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। বতর্মানে চীনের গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান অপেক্ষাকৃত বড়। কিন্তু চীনরে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার পর বিশেষ করে গত ১৫ বছরে চীনের গ্রামাঞ্চলে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এখন গ্রামাঞ্চল বিকশিত করার জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক নতুন নীতি প্রণয়ন কাযর্করি করেছে। কৃষকরা সরকারের আরোপিত অনেক সুবিধাজনক নীতি উপভোগ করছে। সম্প্রতি স্বচ্ছ সমাজ গড়ে তোলার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করছে এবং আধুনিক ও নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মানে আত্মনিয়োজিত হচ্ছে।
শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ কয়েক জন শ্রোতার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। মুখোমুখি অনুষ্ঠান শ্রোতাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। চীন সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর আমাদের প্রতি শনিবারের এই মুখোমুখি অনুষ্ঠানে দেয়া হবে। আমরা শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।
|