সু শো ইয়াংয়ের বয়স এ বছর ৭১ হবে । তিনি ছোট বেলা থেকেই সাহিত্য রচনা পছন্দ করেন এবং বিশ বছর বয়সের আগেই পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন । গত কয়েক দশকে তিনি অনেক উপন্যাস , চিত্রনাট্য , কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন । তিনি জাতীয় পর্যায়ের অনেক পুরস্কার পেয়েছেন । ২০০৭ সালে তিনি চীনের জাতীয় পর্যায়ের নাট্যকার নির্বাচিত হন ।
তিব্বত সম্পর্কিত বই লেখার আগে সু শো ইয়াং চীন সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞানের একটি বই লিখেছেন । ' চীন ' নামের এই বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয় এবং ইংরেজী , জার্মান ও রুশসহ দশ-বারোটি ভাষায় তা অনুদিত হয়েছে । এ বই বিভিন্ন দেশের মানুষের চীনকে জানার একটি জানালায় পরিণত হয়েছে। ২০০৬ সালে জামার্নীর ফ্র্যাঙ্কফুট বই মেলায় তার লেখা চীন সম্পর্কিত বই পছন্দ করায় সে সব বিদেশী বন্ধুরা তাকে তিব্বতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত একটি বই লেখার অনুরোধ জানান ।
তিব্বত সম্পর্কিত বই লেখা সু শো ইয়াংয়ের পক্ষে সহজ ব্যাপার নয়। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তার কিডনী ও ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে তার শরীর কিছুটা দুবর্ল । শারীরিক কারণে সু শো ইয়াং তিব্বত সম্পর্কিত বই লেখার আগে তিব্বতে যেতে পারেন নি , এটা তার জন্য এক বড় দুঃখ । শরীর খারাপ বলে সু শো ইয়াং এ বই লিখতে গিয়ে কষ্ট অনুভব করেন , তিনি এ বই লেখার কাজকে চুমালাংমা শৃঙ্গ উঠার সঙ্গে তুলনা করেন ।
বই লেখার আগে তিব্বত সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন , আমি তিব্বতী ভাষা জানি না । তাই তথ্য সংগ্রহের সময় আমাকে চীনা ভাষায় অনুদিত বই পড়তে হয় । এ সব তথ্য বইয়ে ব্যবহারের সময় আমি অনুবাদকের নামও উল্লেখ করেছি । আমি তিব্বতে যেতে পারি নি বলে আমি তিব্বত সম্পর্কিত অনেক প্রামান্য চলচ্চিত্র ও প্রদশর্নী দেখেছি । বই লেখার আগে আমি তিব্বত সম্পর্কিত দেশবিদেশের দু' শটিরও বেশি বই ও ৫০টি চলচ্চিত্র দেখেছি। তা ছাড়া আমি তিব্বত ও চীনের ইতিহাস সম্পর্কে দেশবিদেশের পন্ডিতদের মতামতও পর্যালোচনা করেছি ।
ইতিহাস পড়ে সু শো ইয়াং বুঝতে পেরেছেন , তিব্বতের লাসা ও ছানতু থেকে উদ্ধার করা পুরাকীর্তিগুলো প্রমাণ করেছে যে তিন-চার হাজার বছর আগে তিব্বতের প্রাচীন সংস্কৃতি চীনের হলুদ নদী বরাবর অঞ্চলের সংস্কৃতির একটি শাখা । তিব্বতের সংস্কৃতির মধ্যে তার আশাপাশের অঞ্চলের সংস্কৃতির উপাদান রয়েছে ।
অনেকে তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস জানতে চান । সু শো ইয়াং মনে করেন , তিব্বতের বেন ধর্ম একদা তিব্বতের প্রধান ধর্ম ছিল । তিব্বতের অধিবাসীরা আকাশ , মাটি , বন ও প্রকৃতির উপাসনা করতেন । সপ্তম শতাব্দীর সময় থান রাজবংশের রাজকুমারী ওয়েন ছেন হানজাতির বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব , রীতিনীতি ও বৌদ্ধশাস্ত্র তিব্বতে নিয়ে যান । সু শো ইয়াং বলেন ,আমি মনে করি , তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় হান জাতির বৌদ্ধধর্ম ও ভারতের বৌদ্ধ ধর্মের রীতিনীতি সম্মিলন ঘটানো হয়েছে । চীনের ও ভারতের বৌদ্ধধর্ম ও বেন ধর্মের সংমিশ্রনে আজকের বৈশিষ্ট্যময় তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম সৃষ্টি হয়েছে ।
তিব্বতের সংস্কৃতি বহুমুখী । সু শো ইয়াং তার তিব্বত সম্পর্কিত বইয়ে লিখেছেন , ছিং ও হান রাজবংশ থেকে থান রাজবংশ পর্যন্ত মধ্য চীনের অধিবাসী ও তিব্বতের অধিবাসীরা একই ভাষায় কথা বলতেন । তাদের মৌখিক ভাষা একই , তবে লিখিত ভাষা ভিন্ন । মধ্য চীনের অধিবাসীরা হান জাতির অক্ষর লেখেন এবং তিব্বতী অধিবাসীরা ভারতীয় ভাষার বর্ণের ভাষা লিখেন । এটা একটি বাস্তব সত্য।
সু শো ইয়াং এ বই লেখার সময় ধর্মের প্রতি তিব্বতী অধিবাসীদের আনুগত্যের অবস্থান সম্পর্কে জেনে মুগ্ধ হন । তিনি মনে করেন , তিব্বতের প্রতি পাশ্চাত্য দেশগুলোর অতিরিক্ত আগ্রহ স্বাভাবিক ব্যাপার । কারণ তিব্বতের সংস্কৃতিতে মানুষের মূল বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় । তিব্বতের প্রাকৃতিক অবস্থা ততটা ভালো না , তবে ধর্মের প্রতি সেখানকার অধিবাসীদের আনুগত্য ও দৃঢ মনোবল অতুলনীয়। যেমন সেখানকার বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা মাটিতে সুয়ে পড়ে অর্থাত্ সাষ্টাঙ্গে বৌদ্ধদেবের প্রতি প্রণাম করেন এবং এভাবে প্রণাম করতে করতে অনেক পথ অতিক্রম করেন । মনে দৃঢ মনোবল না থাকলে দিনের পর দিন এ ধরনের প্রণাম কখনই সম্ভব হবে না ।
সু শো ইয়াং তার তিব্বত সম্পর্কিত বইতে সার্বিক ও বাস্তবসম্মত তিব্বতের ইতিহাস , ভৌগলিক অবস্থান , সংস্কৃতি ও শিল্পকলার বিভিন্ন দিকের উত্স , বিকাশ ও বতর্মান অবস্থা বণর্না করেছেন এবং দেশবিদেশের পাঠকদের জন্য তিব্বতকে জানার একটি পথ দেখিয়েছেন । এ বই সম্পর্কে সু শো ইয়াং বলেন , এ বইটিকে একটি সাহিত্য কর্ম বলা যায় । তাই পাঠকরা এ বই পড়তে আগ্রহী হবেন । এ বই লেখার সময় আমি দু'টি বিষয়ে আশাবাদী ছিলাম। একটি হলো তিব্বতের ইতিহাস পাঠকদের সামনে তুলে ধরা ,যাতে পাঠকরা বই পড়ার মাধ্যমে তিব্বতের ইতিহাস উপলব্ধি করতে পারবেন। আরেকটি আশা হলো সাহিত্যিক মূল্যের একটি বই লেখা , যাতে পাঠকরা নিজের টেবিলে এ বই রেখে মাঝেমধ্যে পড়তে পারেন । আমার এ দুটি আশা মোটামুটি বাস্তবায়িত হয়েছে ।
সু শো ইয়াং এ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেনঃ আমার লেখা এ বই তিব্বতের ইতিহাস নয় , তিব্বত সম্পর্কিত জল্পনা-কল্পনা বা তিব্বতের রীতিনীতি সম্পর্কিত বইও নয় । এটা তিব্বত সম্পর্কে আধুনিককালের মানুষের মনের প্রশ্নের উত্তরের অনুসন্ধান , চিন্তা ও উপলব্ধি । এতে তিব্বতী জাতির স্বদেশীয়দের প্রতি আমার ভালোবাসা ও তিব্বতের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতি আমার আন্তরিক আকাংখা ফুটে উঠেছে । এটাই আমার চুমালাংমা শৃঙ্গ ওঠার মতো শারীরিক অসুবিধা অতিক্রম করে এই বই লেখার চালিকা শক্তি । |