v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সবচেয়ে দ্রুত টাকা গণনাকারী লোক---সুং ছাও
2009-06-09 21:16:22
আপনার টাকা গণনার গতি আপনি কখনো লক্ষ্য করেছেন কী ? 一চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে এমন একজন আছেন তিনি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১৭১টি নগদ টাকা গণনা করতে পারেন । তিনি টাকার সংখ্যা গণনা করার ব্যাপারে রেকর্ড স্থাপন করে গিনিস বুকে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত নগদ টাকা গণনাকারী হিসেবে পরিণত হন ।

১৯৭৬ সালে উত্তর চীনের শানতুং প্রদেশের উপকূলীয় শহর ওয়েই হাই শহরে সুং ছাওয়ের জন্ম । অন্যান্য সাধারণ ছেলেমেয়েদের মতোই তিনি হেসে খেলে বড় হয়েছেন । হয়ত তিনি কখনো ভাবতে পারেননি যে , একদিন তিনি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপনকারী হবেন । ১৯ বছর বয়সে অ্যাব্যাক্যাস দিয়ে হিসাব করার বিষয়ে সেরা ফলাফল পাওয়ার কারণে এক ব্যাংক তাকে নিয়োগ করে । এর পর সুং ছাও নগদ টাকা গণনার কাজে জড়িত হন । তিনি বলেন , প্রথম দিকে তিনি কোনো কলাকৌশল এমন কি পেশাদারী টাকা গণনার জ্ঞান জানেন না । তিনি বলেন, কাজের শুরুতে আমি কিছুই পারি না । আমার টাকা গণনার মান সাধারণ মানুষের সমান ছিল । ২-৩ মিনিটের মধ্যে ১০০ নগদ টাকা গণনা করতে পারতাম ।

প্রথম বছরে সুং ছাও রিজার্ভ সদস্য হিসেবে ওয়েই হাই শহরের ব্যাংকিং ক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ৩০জনের মধ্যে ২জন শানতুং প্রদেশের আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন । প্রশিক্ষণে অধ্যবসায়ের সঙ্গে অনুশীলন করায় সুং ছাওয়ের বিরাট উন্নতি হয়েছে । অবশেষে তিনি বিজয়ী হন ।সুং ছাও বলেন,সাধারণ মানুষের তুলনায় তার কোনো পার্থক্য নেই । পার্থক্য বলতে গেলে অন্যান্যদের চেয়ে তিনি বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং অসুবিধার সামনে তিনি নতিস্বীকার করেন না । তিনি মনে করেন, একটা কাজ করতে চাইলে ভালভাবে তা সম্পন্ন করতে হবে । নইলে করবে না ।

২০০৩ সালে সুং ছাও শানতুং প্রদেশের পক্ষ থেকে সারা দেশের ব্যাংকিং ক্ষেত্রের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । এটা তার প্রথমবার দেশীয় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ । তাই তিনি বিরাট চাপ অনুভব করেন । টাকা গণনার অনুশীলনে বারবার একই কাজ করার কারণে তার বুড়া অঙ্গুলের চামড়া মোটা ও শক্ত হয়েছে এমন কি অঙ্গুলে একটার পর একটা রক্তের দাগ কেটেছে । তিনি বলেন , প্রশিক্ষণের সময় তিনি রেকর্ডের কথা ভাবেননি,ভেবেছেন কোনোমতেই পরিহার্য হবো না ।এ সম্পর্কে সুং ছাও বলেন, প্রথমে আমি ভেবেছি , কোনোমতেই পরিহায হবো না । পরিহার্য হলে কী লজ্জার ব্যাপার । তাই প্রশিক্ষণে আমি অধ্যবসায়ের সঙ্গে অনুশীল করেছি । টাকা গণনা দুই ভাগে বিভক্ত ।নগদ টাকা গণনা করা এবং বেঁধে করা ।নগদ টাকা বেঁধে করা খুব একটা সহজ কাজ নয় । নগদ টাকা বেঁধে করার কাগজটা ছুরির মতো ধারালো । সঠিকভাবে না বসলে আঙ্গুল সহজে কেটে যায় ।

অবশেষে সুং ছাও দেশীয় ব্যাংকিং ক্ষেত্রের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন । এর পর তার জীবনে নতুন সূচনা শুরু হয় । ২০০৫ সালে সুং ছাও পেইচিংয়ে এসে চীনের মিনসেন ব্যাংকে কাজ শুরু করেন । সে বছর তিনি মিনসেন ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিসিটিভির একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং চ্যাম্পিয়ন হন । এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশের দর্শকরা তার নগদ টাকা গণনা করার কৌশল উপভোগ করেছেন । সুং ছাও বলেন,সেবার তিনি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় ১০০ নগদ টাকা গণনা করেছেন । ফলাফল তেমন লক্ষ্যণীয় না হলেও তিনি নতুন গিনিস রেকর্ডের প্রতি চ্যালেঞ্জ করার যোগ্যতা পেয়েছেন । ২০০৭ সালে সুং ছাও গিনিসের প্রতি চ্যালেঞ্জ করার মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন । তিনি স্মরণ করে বলেন, আগের গিনিস রেকর্ড একজন মার্কিনী স্থাপন করেছিলেন । তিনি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০৯টি নগদ টাকা গণনা করেছেন । আমি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১৪০ নগদ টাকা গণনা করে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি ।

সুং ছাও বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত টাকা গণনা করার লোক হয়েছেন । ২০০৮ সালে অধিক থেকে অধিকতর লোক সুং ছাওয়ের রেকর্ডের প্রতি চ্যালেঞ্জ করেন । গিনিস পক্ষ ফোন করে তাকে জিজ্ঞেস করে যে, তিনি অন্যের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন কী ?তিনি আনন্দে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন । ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১৭১টি নগদ টাকা গণনা করে নতুন গিনিস রেকর্ড স্থাপন করেছেন । এ সম্পর্কে সুং ছাও বলেন, পরে অন্য দেশের প্রতিযোগী এ অনুষ্ঠান দেখেছেন । তারা মনে করেন যে,তারা এই রেকর্ডের প্রতি চ্যালেঞ্জ করবেন । গিনিস পক্ষ আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন,কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমি নিজের রেকর্ড রক্ষা করতে সক্ষম হব কি ?তাই আমি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি এবং অবশেষে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১৭১টি নগদ টাকা গণনা করেছি ।

এ নতুন গিনিস রেকর্ড স্থাপনের পেছনে সুং ছাও যে কষ্ট করেছিলেন তা সকলের জানা নাই । এ সম্পর্কে সুং ছাওয়ের স্ত্রী উ সিনসিং বলেন, ২০০৭ সালের চুংছিউ উত্সব অর্থাত মধ্য শরত্ উত্সব চলাকালে ব্যাংকিং ক্ষেত্রের একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় । সুং ছাও প্রতিযোগিতার আগে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন । উত্সবের সময় তিনি একবার ফিরে এসেছেন। আমি লক্ষ্য করেছি ,বারবার অনুশীলনের কারণে তার বুড়া অঙ্গুলের চামড়ায় রক্তের দাগ কেটেছে । তা দেখে আমার খুব কষ্ট হয় । আমার মনে ব্যথা হয় ।

সুং ছাও প্রায়ই বলেন, জীবনযাপনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নেই । কিন্তু তার সাফল্য সত্যিই তার জন্য আরও বেশি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে । একন তিনি মিনসেন ব্যাংকে প্রশিক্ষণ বিষয়ক কাজের দায়িত্ব পালন করেন । নিজের অভিজ্ঞতা সবাইকে জানাতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন । তিনি বলেন,---৬--- আমার প্রধান দায়িত্ব হল নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বদান করা । সম্ভব হলে আমি নিজের স্থাপিত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে চাই । আমি মনে করি,আমি আরেকবার নতুন গিনিস রেকর্ড স্থাপন করতে পারব ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China