v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
তিব্বতের প্রবীণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেরিন ড্রেকার
2009-06-09 20:44:20
চীনের তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে বেশির ভাগ নাগরিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী । এ ছাড়াও বেশ কিছু লোক ইসলাম ও ক্যাথলিক ধর্মও বিশ্বাস করে । আজ এ অনুষ্ঠানে তিব্বতের একজন নারী প্রবীণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেরিন ড্রকার সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাচ্ছি আমি...

প্রতি বছরের শীতকালে লাসা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছু সুই জেলার চিয়াং গ্রামের চিয়াং মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । লাসা শহরের অধিবাসী বৃদ্ধা সেরিন ড্রেকারও নিয়মিতভাবে এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন । তিনি খুব আনন্দ বোধ করেন ।

বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক তত্ত্ব প্রচার এবং সাধারণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সৌভাগ্যের জন্য চিয়াং মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । মন্দিরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আওয়াং জাবা বলেন ,

চিয়াং মন্দিরের নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক তত্ত্ব বিষয়ক পুস্তক প্রচার করা । বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক তত্ত্ব অধ্যয়নের সর্বোচ্চ যোগ্যতা লাভের জন্য অল্প বয়সী লামাদের এ ধমীয় অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ধর্ম তত্ত্ব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন । এ বছর চিয়াং মন্দিরের নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান খুব সফল হয়েছে । তিব্বতের ড্রেপুং মন্দির , সেরা মন্দির , গান্দেন মন্দির ও জোকহাং মন্দিরের সন্ন্যাসীরাও এ মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন ।

তিব্বতী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পক্ষে মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠান এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম । এটা তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের খুব আকর্ষণ করে । তারা এ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে । ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্ব ও পুথিপত্র ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় । এতে সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভকামনাও ব্যক্ত করা হয়েছে ।

শীতকালে কৃষি কাজ নেই । তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আসেন । এ সময় দূরের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এ মন্দির জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে । সেরিন ড্রেকারের বয়স ৬৩ । তিনি এ মন্দিরের প্রত্যেকটি বার্ষিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন । এ ছাড়াও তিনি সন্ন্যাসীদের জন্যও খাবার নিয়ে আসেন । তিনি বলেন ,

তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় ক্রিয়া কর্ম বেশি । চিয়াং মন্দির এমন একটি মন্দির , যেখানে প্রতি বছরের শীতকালে নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

বৃদ্ধা সেরিন ড্রেকার লাসা শহরের একজন সাধারণ অধিবাসী । তার বাড়িতে একটি কক্ষ ধর্মীয় উপসনাস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয় । কক্ষের গৃহসজ্জা ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যে ভরা । তিব্বতী স্থাপত্যশৈলী ।

তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসের জন্য ধর্মাবলম্বীদের আনুগত্যের প্রয়োজন । তারা যে উপাসনা করেন , তার উদ্দেশ্য সকলের সুখী জীবনের জন্য প্রার্থনা করা । তিব্বতে যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী , তাদের বাড়িতে উপাসনার কক্ষের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।

বৃদ্ধা সেরিন ড্রেকার বলেন , চীন সরকার ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক নীতি প্রণয়ন করেছে । ব্যাপক ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা এখন নিশ্চিত হয়েছে ।

তিব্বতে চীন সরকার সংখ্যালঘু জাতির স্বশাসন বিষয়ক আইন পালন করে । গত বিশ বাইশ বছরে তিব্বতে তিব্বতী জাতির ভাষা ব্যবহার , সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে । তিব্বতের ধর্মীয় ক্ষেত্রের ব্যক্তিরা দেশের প্রশাসনের কাজেও যোগ দিতে পারেন । এ প্রসঙ্গে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের উপ-মহাসচিব ফেং বে ইউন বলেন ,

বর্তমানে তিব্বতে ধর্ম কর্মের জন্য প্রয়োজনীয় উপাসনাস্থলের সংখ্যা ১ হাজার ৭ শ'তে দাঁড়িয়েছে । সন্ন্যাসীর সংখ্যা ৪৬ হাজার । সাধারণ নাগরিক হিসেবে সন্ন্যাসীরা যেমন ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা তেমনি সরকারের প্রশাসনিক কাজে যোগদানকারী রাজনৈতিক অধিকারও ভোগ করছেন । তাদের নির্বাচন করা ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে । এখন তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসে ১১জন ধর্মীয় ক্ষেত্রের ব্যক্তি আছেন ।

বর্তমানে তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বত্র ধর্মীয় ক্রিয়া কর্মে নিয়োজিত ধর্মাবলম্বী পাওয়া যায় । জনসাধারণ ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা ভোগ করছে ।

এখন পেইচিং মহানগরের উপকন্ঠে স্যুন ই জেলা ও এ জেলায় বসবাসকারী হুই জাতির বন্ধুদের আচার ব্যবহার সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাবো।

স্যুন ই জেলা পেইচিং মহানগরের উপকন্ঠে অবস্থিত । চীনের বৃহত্তম বিমান বন্দর- রাজধানী বিমান বন্দরও এ জেলায় অবস্থিত । গত কয়েক বছরে এ জেলায় পরিবেশের সার্বিক পুনর্গঠন এবং ব্যাপকভাবে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে । ফলে এ জেলা ও বিমান বন্দরের আশেপাশের পরিবেশ সবুজ ঘাস ও গাছপালায় বেষ্টিত ।

বর্তমানে এ জেলায় হান জাতিও ছাড়া হুই জাতির বেশ কিছু অধিবাসীও বাস করে । কিছু দিন আগে হুই জাতির যুবক মা লিয়ান ইং বিয়ে করেছে । তার বউয়ের নাম ওয়াং সিয়াং স্যু । বিয়ের অনুষ্ঠানে ইমাম নতুন দম্পতির জন্য অভিনন্দনসূচক সম্ভাষণ ও বক্তব্য দিয়েছেন । ইমাম তার বক্তব্যে নতুন দম্পতির আজীবন ভালবাসা ও সুখী জীবনের শুভকামনা করেন ।

ইমাম বলেন , দম্পতি হিসেবে দু'জনের আজীবন পরস্পরের ভালবাসা প্রয়োজন । এতে উভয়ের আস্থা ও আনুগত্য দরকার ।

হুই জাতির নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানে দম্পতির জন্য ইমামের পরামর্শ লেখা দরকার । ইমামের লেখালেখির বিষয়টি খুবই জনপ্রিয় । তা বিয়ের জন্য সরকারী প্রশাসনিক বিভাগের বিলি করা লাইসেন্সের মতোই প্রচলিত ।

হুই জাতির একজন প্রবীণ অধিবাসী মা চেন ইউ বংশপরম্পরায় স্যুন ই জেলায় বাস করেন । তিনি প্রতি দিন নামাজ পড়েন । তিনি বলেন , কোরবানি হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম দিবস ।

বৃদ্ধ মা চেন ইউ বলেন , সরকার বরাবরই হুই জাতির ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও আচার ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয় । মা চেন ইউ'র মতো এখন পেইচিং মহানগরের স্যুন ই জেলার হোশাইয়্যু থানার হুই জাতি গ্রামে ১ হাজার ৭শ'রও বেশি হুই জাতির অধিবাসী বাস করে । তারা সবাই এখন নতুন দালানে থাকেন । মাদাম চিং হোয়ান তো তাদের মধ্যে একজন । তিনি হোশাইয়্যু থানা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন । তিনি হান জাতির সহকর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন ।

সরকারী প্রতিষ্ঠানে হান জাতির সহকর্মী বেশি । তারা খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে হুই জাতির কর্মীদের খুব যত্ন নেন । সবাই সম্প্রীতির সঙ্গে কাজ করেন এবং দিন কাটান ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China