v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পূর্ব ক্যামব্রিজ---জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়
2009-06-08 21:32:34

পূর্ব চীনের জে চিয়াং প্রদেশের হাং চৌ নগরে একটি সুবিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ব্রিটেনের বিখ্যাত পন্ডিত জোসেফ নিডহাম এ বিশ্ববিদ্যালয়কে "পূর্বের ক্যামব্রিজ" নাম দিয়েছেন। এক শোরও বেশি বছরের উন্নয়নের মাধ্যমে বহুমুখী দিক থেকে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। আজকের অনুষ্ঠানে এ বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আপনাদের শোনাবো।

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি চীনের নতুন উচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। গত শতাব্দীর পঞ্চম দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম দফার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, হাং চৌ বিশ্ববিদ্যালয়, জে চিয়াং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জে চিয়াং চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত হয়ে নতুন জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয়েছে। এ থেকে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বিক উচ্চ পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, চীনের বিজ্ঞান একাডেমীর একাডেমিশিয়ান ইয়াং ওয়ে বলেছেন, এক শোরও বেশি বছরের উন্নয়নের মাধ্যমে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের সার্বিকভাবে শক্তিশালী একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বে ব্যাপক প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতমে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেছেন, (১)

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্বিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ, প্রযুক্তি কৌশল, কৃষি, চিকিত্সা, সংস্কৃতি ও সামাজিক বিজ্ঞানসহ ছয়টি বিষয় রয়েছে। কারিগরি গবেষণা ক্ষেত্রে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান চীনের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষে। তাছাড়া, জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় চারটি প্রধান কারিগরি গবেষণার উপাত্তের দিক থেকেও প্রথম হয়েছে। এ চারটি উপাত্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা, পেটেন্ট ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়ার সংখ্যা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও চুক্তি স্বাক্ষরের সংখ্যা এবং জাতীয় প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞান তহবিলের সংখ্যা।

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিনের শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় বাস্তব তথ্যাবলী থেকে সত্যের সন্ধান করার মনোভাবের মাধ্যমে বিরাট দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করেছে। জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা চীন বিজ্ঞান একাডেমী ও চীন প্রকল্প একাডেমীতে ১৬০জনেরও বেশি। এরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষ জনশক্তি। জে চিয়াং প্রদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমীর কর্মী জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন অতীতের ছাত্রী। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব তথ্যাবলী থেকে দেখা যায় সত্যের সন্ধান করার মনোভাবের প্রভাবে এখানকার স্নাতক ডিগ্রি লাভ করা ছাত্র-ছাত্রীরাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচে বেশি সাফল্য লাভ করেছে। তিনি বলেছেন, (২)

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে কড়াকড়ি শিক্ষাদান এবং বৈশিষ্ট্যময় পেশাগত চর্চা করা আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা পরস্পর পরামর্শের মাধ্যমে গবেষণা করা।

জানা গেছে, জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতা ইতিবাচকভাবে চলছে। বর্তমানে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় ২৬টি দেশ ও অঞ্চলের এক শোরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। প্রতি বছর জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে এক শোরও বেশি বিদেশী পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞগণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে গবেষণা কাজের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রদান করছে। এ পর্যন্ত তিন শোরও বেশি বিদেশী পন্ডিত জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকে পরিণত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া বিখ্যাত লোক জনও রয়েছে।

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক তিং চিয়েন মিন বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়া হচ্ছে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের লক্ষ্য। জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় আরো বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তিং চিয়েন মিন বলেছেন, (৩)

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বিনিময় ক্ষেত্র দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ২০০৮ সালে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার পাঁচ শো। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির প্রথম দিকে শুধু মাত্র পাঁচ শো জন ছিল। এ উন্নয়নের গতি খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে।

এ পর্যন্ত বিশ হাজারেরও বেশি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের লেখাপড়ার পর ডিগ্রি অর্জন করেছে। এসব ছাত্র-ছাত্রী দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানী ও অষ্ট্রেলিয়াসহ ১১৫টি দেশ থেকে এসেছে। জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক হবার পর স্বদেশে সরকারী কর্মকর্তা , বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার মেরুদন্ড, চীনা ভাষা শিক্ষাদানকারী বা চীনের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কর্মীতে পরিণত হয়েছেন। তারা চীন ও বিভিন্ন দেশের মৈত্রী উন্নয়নের জন্য অবদান রেখে চলেছেন।

আরো বেশি শ্রেষ্ঠ ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে লেখাপড়া সংক্রান্ত চীনের জাতীয় তহবিলের মাধ্যমে প্রতি বছরে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০জন ছাত্র-ছাত্রীকে উচ্চ পর্যায়ের স্নাতকোত্তর স্কলারশীপ দিচ্ছে। তিং চিয়েন মিন বলেছেন,(৪)

আসলে একজন শ্রেষ্ঠ বিদেশী ছাত্র বা ছাত্রী স্কলারশীপ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলে আমরা তার শিক্ষা ও বিবিধ ফি মওকুফ করা ছাড়া জীবনযাপনের খরচও দেবো। এ জীবনযাপনের খরচ তো আর কম নয়, তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ভালো মানও ভোগ করতে পারবে।

প্রতি বছর জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য লেখাপড়া পাশাপাশি নানা ধরণের চর্চা ও ক্লাসের বাইরের কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। যেমন বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, চীনা ভাষায় বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং ফুটবল, বাস্কেটবল ও দৌঁড়-ঝাঁপ নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। বুলগেরিয়া থেকে আসা ক্রিস্টিয়ানা ২০০৬ সালে জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনের ফিলসফি ইনস্টিটিউটে লেখাপড়া করছেন। তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, (৫)

জে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় আসার পর আমি বিস্মিত বোধ করি। এখানকার শিক্ষকগণ আমাদের জন্য লেখাপড়া ও জীবনযাপনের চমত্কার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। আমরা এখানকার জীবনের সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাপ খাইয়ে নিতে পেয়েছি।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China