বিশ্বের আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
শাং তোং প্রদেশের ওয়েই ফাং শহরের ফাং চি অঞ্চলের মেই গ্রামের অধিবাসী ইয়াং ইয়ুন ছেন ঠিক ভোর ছয়টায় গাড়ি চালাতে শুরু করেন। তিনি তার বাড়ি থেকে দশ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে একটি শহরের বড় পাইকারী বাজারে পণ্যবস্তু কিনতে যান। গত মার্চ মাস থেকে প্রতি দিন সকালে বাজারে যাওয়া ইয়াং ইয়ুন ছেনের জীবন যাপনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতের কথা স্মরণ করে ইয়াং ইয়ুন ছেন বলেন, একটি গাড়ি কেনা তার স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই সে শহরে পণ্যবস্তু কিনতে যাই। অনেক কিছু কেনার আছে বলে প্রতিবারই আমাকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। নিজের একটি গাড়ি থাকলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। আমি নিজের ইচ্ছেমত গাড়ি দিয়ে মাল পরিবহণ করতে পারি। তাতে আমার আয়ও কিছুটা বাড়বে।
আসলে শহরে নাগরিকদের মত একটি গাড়ির অধিকারী হওয়া বর্তমান অনেক কৃষকেরই স্বপ্ন। বিশ্বের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে চীন সরকার গ্রামে বিশাল বাজারের ওপর দৃষ্টি রাখছে। সে জন্য 'গ্রামাঞ্চলে গাড়ি পৌঁছানো' নীতি মানে শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ কার্যকর হয়। কৃষকদের গাড়ি কিনতে সাহায্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ নীতি অনুযায়ী ধারাবাহিক সুবিধাজনক ব্যবস্থা নিয়েছে। কৃষকরা গাড়ি কিনলে পাঁচ হাজার ইউয়ান ভতুর্ক পাবে। এ নীতি প্রবর্তন করার পর অনেক কৃষকই গাড়ি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ইয়াং ইয়ুন ছেনও গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। খোঁজ খবর নেয়ার পর তিনি শাং হাই জেনারেল মটরর্সের একটি মাইক্রোবাস বাছাই করেন। তিনি বলেন, 'এক দিকে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে দু'হাজার ইউয়ান কম কর দিতে হবে। অন্য দিকে এ নীতি অনুযায়ী ৩০০০ ইউয়ান ভতুর্ক পাওয়া যাবে। ফলে ৩০ হাজার মূল্যের গাড়ি কিনলে কেবল ২০ হাজার লাগবে'।
আগে কৃষকের গাড়ি কেনার ইচ্ছা না থাকায় ও বিক্রির পরিমাণ কমসহ বিভিন্ন কারণে গাড়ি উত্পাদনকারী এ বাজারের ওপর গুরুত্ব দেয় নি। তারা শহরের গাড়ি বাজারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতো। কিন্তু 'গ্রামাঞ্চলে গাড়ি পৌঁছানো' নীতি প্রবর্তনের পর গাড়ি উত্পাদনকারীরা এখন এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তারা গ্রামাঞ্চলের উপযোগী গাড়ি উত্পাদন শুরু করেছেন। শাং হাইয়ের জেনারেল মটরসের উ লিং কোম্পানি তাদের মধ্যে অন্যতম। এ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ইয়াং চিয়ে বলেন,
'গত তিন মাসে আমরা ২ লাখ ৪০ হাজার গাড়ি বিক্রি করেছি। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। বর্তমান বাজারের খুবই ভালো অবস্থা দেখে আমরা আনন্দিত।
আসলে শুধুমাত্র গাড়ি উত্পাদনকারী কোম্পানি আনন্দিত তা নয়, গাড়ি ক্রেতারাও খুব আনন্দিত। পেইচিং মহানগরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ছাং আন গাড়ি দোকানে ছুটির দিনে অনেকেই গাড়ি দেখতে আসেন। এ দোকানের ব্যবস্থাপক লি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, "গ্রামাঞ্চলে গাড়ি পৌঁছানো' নীতির কারণে গাড়ি উত্পাদনকারী কোম্পানির গাড়ি খুব জনপ্রিয়। আমরা মাসের প্রথম দিকে অর্ডার দেই। আমাদের মজুদ গাড়ির সংখ্যা প্রায়ই একশ থাকে। তাতে কৃষকদের গাড়ি কেনা নিশ্চিত করা যায়।
গ্রামীন বাজারে গাড়ি বিক্রির পরিস্থিতি দেখে অনেক গাড়ি উত্পাদনকারী কোম্পানির অনুমান তুলনামূলক ভালো। মাইক্রো বাস উত্পাদনকারী কোম্পানি ছাড়া গাড়ি উত্পাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রামাঞ্চলে তাদের নজর রাখতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে চীনের বৃহত্তম গাড়ি উত্পাদনকারী কোম্পানি চেরি গাড়ি কোম্পানি লিমিটেড। এ বছরের প্রথম দিকে তারাও মাইক্রো বাস বাজারজাত করেছে। এ কোম্পানির উপ মহাব্যবস্থপক চিন খে বো সংবাদদাতাকে বলেন, "আমরা যে মাইক্রো বাস উত্পাদন করেছি, সেটা নতুন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। সেটা হচ্ছে শহর ও গ্রামে ব্যবহৃত মাইক্র বাস। যারা শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসেছে। তাদের পকেটে কিছু পয়সা থাকার কথা। তাদের গাড়ি কিনে মাল ও যাত্রী পরিবহনের ব্যবসা করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য আমরা এ ধরণের মাইক্রো বাস বাজারে দিয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি ভোক্তা দেশ হিসেবে এ বছর চীনের গাড়ি বিক্রির পরিমাণ এক কোটিতে দাঁড়াতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনুমান করে বলে, গ্রামাঞ্চলে গাড়ি পৌঁছানো নীতি অনুযায়ী এ বছরে চীনের গ্রামীন বাজারে গাড়ির বিক্রির পরিমাণ ১০ লাখে দাঁড়াবে। যা ইতিহাসের রেকর্ড হবে। |