এ বছর হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪৮তম জন্ম জয়ন্তী। তাঁর স্মরণে গত ২৬ মে পেইচিংয়ে ভারত দূতাবাস এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগ, চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধিরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় চীনা বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর চীনের বিশেষ সম্পর্ক ও এর আগে চীনের বহু অনুবাদক মহাকবির লেখা অনুবাদের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন। চীনের বাংলা ভাষা শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছেন এবং কবিতা আবৃ্তি করেছেন। স্মরণ সভার শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফর সম্পর্কিত একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
সি.আর.আইয়ের বাংলা বিভাগের শিল্পীরা রবীন্দ্র সংগীত গেয়েছেন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এশিয়ার প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী। চীনের নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যুগ থেকে তাঁর বহু লেখা চীনা ভাষায় অনুবাদ করে সাধারণ চীনাদের কাছে পরিচিত করা হয়। তাঁর কবিতা, গল্প, রচনা, উপন্যাস ও গানগুলোতে বেশ কয়েক প্রজন্মের চীনা পাঠক-শ্রোতা মুগ্ধ ও প্রভাবিত হয়েছে। সবসময় চীনা জনগণের প্রতি ছিল তাঁর বন্ধুভাবাপন্ন আবেগ ছিলেন। জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধ ঘটার পর তিনি একাধিকবার প্রকাশ্য চিঠির মাধ্যমে জাপানী সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী আচরণের নিন্দা করেছেন এবং চাঁদা দেয়া ও সংগ্রহের মাধ্যমে চীনা জনগণের সমর্থন দেয়ার যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি গভীর আবেগ সহকারে বলেছিলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, আমার পূর্ব জীবনে অবশ্য চীনা ছিলাম।'
চীনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও সভায় উপস্থিত ছিলেন
তবে মহান কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কেবল চীনে তাঁর পদচিহ্ন রেখেছেন তা নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায় তাঁর প্রভাব রয়ে গেছে। এ দিন চীনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও সভায় বলেছেন, 'আমি যে জায়গায়ই যাই, ওয়াশিংটন হোক, মস্কো হোক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম সবসময় শুনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানুষের মুখে মুখে। যখন আমি দায়িত্ব নিয়ে চীনে আসি, তখন আমি আবিষ্কার করেছি যে, চীনেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি এবং তাঁর সাহিত্য কর্ম চীনাদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছে। তাঁর লেখাগুলো চীনা ভাষায় অনুবাদের পাশাপাশি ভারত ও চীনা জনগণের সমঝোতাও সম্প্রসারিত হয়েছে।'
১৯২৪ সালের ২১ মার্চ চীনের বিখ্যাত পন্ডিত লিয়াং ছি ছাও ও ছাই ইউয়ান পেইয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বার চীন সফর করেন। চীনের ভূভাগে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবি বলেন, 'বন্ধুরা, আমিও জানি না, কেমন যেন আমি চীনে এসে স্বদেশে ফিরে আসার মতো অনুভব করি। আমি সবসময় মনে করি যে, ভারত হচ্ছে চীনের অতি আপন আত্মীয়। চীন ও ভারত হচ্ছে অতি প্রাচীন ও আপন ভাই ভাই।'
চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা কবিতা আবৃত্তি করে
বন্ধুরা, আজ আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম জয়ন্তী স্মরণ করার মাধ্যমে তাঁর প্রতিষ্ঠিত চীন ও ভারতের জনগণের মৈত্রীও স্মরণ করছি। স্মরণ সভায় চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা সমবেত কন্ঠে 'আমরা সবাই রাজা' রবীন্দ্র সংগীতটি পরিবেশন করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম স্মরণ করলে কবিতা ব্যতিরেকে হয় না। এখন শুনুন চীনা ছাত্রছাত্রীদের আবৃত্তি করা মহাকবির কবিতা।
চীনা ছাত্রছাত্রীদের গাওয়া গান ও কবিতা আবৃত্তি শুনে ভারতের রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি চীনা ছাত্রছাত্রীদের কষ্ঠ করে ভাষা শিখে চীনা ও বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের শেষে রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাও কবির কথার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, 'ভারত ও চীন কেবল বন্ধু ও বোন হতে পারে।'
অবশ্যই এটা হলো আমাদের সবার মনের কথা ও আশা। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |