১৩তম শাংহাই আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী সম্প্রতি শাংহাইয়ের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান অবনতিশীল বিশ্বের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুতকরণ কোম্পানির চীনের গাড়ি বাজার দখলের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করছে। চীন সরকার এর আগে গাড়ি শিল্পের সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মসূচী প্রবর্তন করেছে। এতে ২০০৯ সালে চীনের গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রির পরিমাণ এক কোটি এবং তিন বছর ধরে গড়পড়তায় বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ বজায় রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। আজকের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের সঙ্গে আমি শাংহাইয়ের গাড়ি প্রদর্শনীর সে কথাই শোনাবো।

শাংহাই আন্তর্জাতিক গাড়ি প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২৫টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা ১ হাজার পাঁচশ গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। ১ রাখ৭০ হাজার বর্গমিটারের এ প্রদর্শনী গতবারের চেয়ে ২০ শতাংশ বড় এবং সাম্প্রতিককাল অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন গাড়ি প্রদর্শনীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। জার্মানির জেনারেল মটরস গ্রুপের চীনের বাজার বিষয়ক পরিচালক হু বো বলেন, জার্মানির জেনারেল মটর্স গ্রুপ এবারের শাংহাই গাড়ি প্রদর্শনীর ওপর গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, 'বর্তমানে জার্মানির পর চীন হচ্ছে জেনারেল মটর্স কোম্পানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার এবং দু'বাজারের মধ্যে পার্থক্য খুব কম। আসলে ব্রাজিল ও জার্মানির তুলনায় চীন সারা বিশ্বে জেনারেল মটর্স কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার। তার মানে আমরা চীনের বাজার থেকে বেশি সম্পদ পেতে পারি এবং চীনা ভোক্তাদেরকে আরও গুণগতমানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করতে পারবো এবং আরও পরিস্কার ও হাই-টেক প্রযুক্তি চীনে বয়ে আনবো।

আসলে বিশ্বের আর্থিক সংকট চীনের বাজারের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। গত বছরের তৃতীয়াংশ থেকে চীনের গাড়ি বাজারেও হ্রাসের ছোঁয়া লেগেছে। চীনের রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে এবং অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েচছে। এ প্রেক্ষাপটে গত জানুয়ারী মাসে চীন সরকার 'গাড়ি শিল্পের সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রবর্তন করেছে। চীনের শিল্প ও তথ্য উপমন্ত্রী মিয়াও ইয়ু শাংহাই গাড়ি প্রদর্শনীর শীর্ষ ফোরামে বলেন, এ কর্মসূচীর প্রাথমিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, "বর্তমানে কেবল এ কর্মসূচীর আংশিক ব্যবস্থা নেয়া হলেও প্রাথমিক সাফল্য দেখা দিয়েছে। গত তিন মাস ধরে চীনের গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রির পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১.৬ মিটার ও এর চেয়ে কম গ্যাস নির্গমনকারী গাড়ি গত তিন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ১০হাজার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১.৭ শতাংশ বেশি। এ সংখ্যা পুরো বাজারের ৭৫ শতাংশ। ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থার বাস্তব ফলাফলকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকবো এবং বাজার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার করবো।

চীন বিশ্বের গাড়ি বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সেজন্য চীনের গাড়ি বাজারে বৃদ্ধি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিভিন্ন গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান একমত। গাড়ি ভোক্তা চাঙ্গা করার জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন গাড়ি কোম্পানিও চীনের বাজারের ওপর আস্থাবান। নিশান মটর্স গাড়ি কোম্পানির উপ- মহান ব্যবস্থাপক ছেন বিন বো বলেন, "গত তিন মাসে আমাদের কোম্পানি ১ লাখ গাড়ি বিক্রি করেছে। এ সংখ্যা আমাদের ধারণার চেয়েও ভালো। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। এ গতির মতো উন্নয়ন হলে অতিরিক্তভাবে এ বছরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আস্থাবান।

চীনের নিজের গাড়ি কোম্পানিও এ বছরের গাড়ি বাজারের ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে। ২০০৯ সালের প্রথম তিন মাসে চীনের নিজের গাড়ি কোম্পানি ৩০ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এতে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠাগুলো উত্সাহিত হয়েছে। এবারের শাংহাই গাড়ি প্রদর্শনীতে তারা প্রদর্শনের আকার বেড়েছে। চেরি কোম্পানির উপমহা ব্যবস্থাপক চিন কে বো বলেন, বিশ্বের আর্থিক সংকট প্রভাব পড়া সত্ত্বেও চীনের গাড়ির প্রয়োজনীয় চাহিদার অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, "চীনের গাড়ি বাজার উন্নয়নের পথে রয়েছে। আমরা উপলব্ধি করেছি যে, গত এপ্রিল মাসে গাড়ি উত্পাদন ও বিক্রির পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে জনসাধারণ তাদের প্রথম গাড়ি কিনতে পারবে বলে আমরা আশা করি। কারণ প্রথম গাড়ি কেনা খুব প্রয়োজন।

তাছাড়া, এবারের শাংহাই গাড়ি প্রদর্শনীতে জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশ রক্ষা ও নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছে। বিদ্যুত্ চালিত গাড়ি ও মিলিত চালিকাশক্তির গাড়ি এবারের গাড়ি প্রদর্শনীতে "তারকায়" পরিণত হয়েছে। নতুন জ্বালানি ও নতুন চালিকাশক্তির ওপর সকল কোম্পানি খুব গুরুত্ব দেয়। চীনের শিল্প ও তথ্য উপমন্ত্রী মিয়াও ইয়ু মনে করেন, নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি চীনের জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তা বিশ্বের গাড়ি শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতি এনে দিয়েছে। নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ির শিল্পায়ন করা এবং জ্বালানি সাশ্রয় ও নির্গমন নিরসনসহ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য অনুকূল হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের আর্থিক সংকট মোকাবিলা এবং শিল্প কাঠামো সমন্বয় ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। তিনি বলেন, নতুন জ্বালানি চালিত গাড়ি শিল্প উন্নয়নের জন্য চীন সরকার ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেবে।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের ব্যক্তিগত গাড়ির অধিকারীর দিক থেকে বিশ্বের ২৬তম অবস্থানে রয়েছে। প্রতি এক হাজার লোকের মধ্যে ২৬জন গাড়ির অধিকারী। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ প্রথমবারের মতো গাড়ি কিনেছে। চীনে অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি লোকের গাড়ি কেনার ইচ্ছা হবে। চীনের গাড়ি বাজারের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

1 2 3 4 5 |