v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
কুয়াং চৌ মেলায় ২০শতাংশ কম বাণিজ্য হয়েছে
2009-05-14 15:39:40
চীনের ১০৫তম আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য মেলা বা কুয়াং চৌ মেলার প্রথম পর্যায়ের প্রদর্শনী গত ১৯ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এ মেলায় অংশগ্রহণকারী বিদেশীদের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৫.৪ শতাংশ কম। এ মেলায় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ৩ কোটি মার্কিন ডলার। যা গতবারের চেয়ে ২০.৮ শতাংশ কম। বৈদেশিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতি কঠোর হলেও অংশগ্রহণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে গত কয়েক মাসের রপ্তানি ক্ষেত্রে হ্রাস থাকা সত্বেও এবারের মেলা তুলনামূলক সফল হয়েছে।

১৯৫৭ সাল চীনের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। প্রতি বছর বসন্ত ও শরত্কাল একবার করে কুয়াং চৌ-এ এ মেয়া অনুষ্ঠিত হয়। এটি হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় আকারের এবং সবচেয়ে দীর্ঘদিনের। কুয়াং চৌ মেলাকে "চীনের বাণিজ্যের দিকনির্দেশক" হিসেবে ধরা হয়। চীনের আমদানি ও রপ্তানির ফ্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এবারের কুয়াং চৌ মেলা নিয়ে আশাবাদী।

আর্থিক সংকটের ভেতর থেকেও কুয়াং তোং প্রদেশের ফো শান শহরের চি কাও এয়ার-কন্ডিশনার কোম্পানি গত বছরে রপ্তানির পরিমাণ দশ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এ কোম্পানির বিদেশী বিক্রয় বিভাগের ব্যবস্থাপক সুন লু থিয়ে বলেন, এবারের কুয়াং চৌ মেলার মাধ্যমে বিদেশী বাজার সম্প্রসারিত হবে বলে তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, "এক দিকে বর্তমান কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও আমরা আস্থাবান। ১০৫তম কুয়াং চৌ মেলার মাধ্যমে আমাদের কোম্পানির ভাবমূর্তির আরো উন্নয়ন হবে বলে আমরা আশা করি। অন্য দিকে কোম্পানি গুণগতমানের পণ্য বাজারে সরবরাহ ত্বরান্বিত করা হবে।

গত বছরের শেষ ছয় মাসে বিশ্বের আর্থিক সংকট চীনের অর্থনীতি, বিশেষ করে বৈদেশিক রপ্তানি শিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সংকট মোকাবিলার জন্য এবারের মেলা কর্তৃপক্ষ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজের কর্মশক্তির উন্নয়ন এবং আকার বাড়ানো। জানা গেছে, এবারের মেলার কর্তৃপক্ষ বিদেশের ৮ লাখ ক্রেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং মধ্য প্রাচ্য, মধ্য ইউরোপ, আফ্রিকা, ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ নবোহিত বাজারের ওপর আরও গুরুত্ব দিচ্ছে।

অনেকের চোখে নবোহিত বাজারের ওপর গুরুত্বারোপ আর্থিক সংকটের সময় ভালো বাছাই বলা যায়। চীনের বিখ্যাত ব্র্যান্ড জে চিয়াং প্রদেশের ছিয়াং চিয়াং মটর্স কোম্পানির রপ্তানি বিভাগের ব্যবস্থাপক পাও জেং ছিন বলেন, উন্নয়নশীল দেশে পড়া এবারের সংকটের প্রভাব তুলনামূলক কম। তিনি বলেন, "গত বছরের একই সময়ের চেয়ে গত তিন মাসে আমাদের বিক্রির পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম। কিন্তু গত এপ্রিল মাস থেকে বিক্রির পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। কারণ এ সময়টি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পুরোনো ক্রেতাকে সুষ্ঠু সেবা প্রদান করা, নতুন ক্রেতা খুঁজে বের করা এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এবারের কুয়াং চৌ মেলার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ই'ইউ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। পরিবর্তে আলজেরিয়া, ভারত ও আসিয়ানসহ বিভিন্ন নবোহিত বাজারে চীনের রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে ১৬.৬, ৯.৭ ও ৪.৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।

অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কুয়াং চৌ মেলায় আসা দর্শকের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে তুলনামুলক কম। কিন্তু বিদেশ থেকে যারা আসছে, তারা আন্তরিকতা সঙ্গে এখানে এসেছে।

চীনে ওয়েন চৌ শহর থেকে আসা ইয়ান লি ক্রেতার পাশাপাশি তিনি এ মেলার অংশগ্রহণকারী। তিনি মনে করেন যে, বর্তমান কঠোর পরিস্থিতিতে বৈদেশিক ক্রেতার দক্ষতা হ্রাস পেলেও চাহিদার অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, "কুয়াং চৌ মেলার রপ্তানির পরিস্থিতি দিনে দিনে ভালো হবে। কারণ আমাদের পণ্যের গুণগতমান ভাল এবং সংস্তা। সেজন্য বিদেশী ক্রেতারা আমাদের পণ্য কিনতে আসবেই।

এ সব দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় বিশ্বের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটেও কুয়াং চৌ মেলা ধারণা অনুযায়ী ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। হাইটেক কোম্পানি ছাড়া বিদেশী ক্রেতারা পরিবেশ রক্ষা পণ্যকেও পছন্দ করেছেন। এবারের মেলায় পরিবেশ রক্ষা ক্ষেত্রে দেয়ালে ব্যবহৃত হালকা কাঁচামাল বিদেশী ক্রেতারা পছন্দ করেছেন। আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা এ সব অর্ডার দিয়েছে।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী পেইচিং চিউ ছি ফাং প্রযুক্তি কোম্পানি পরিস্কার পণ্য উদ্ভাবন, উত্পাদন ও বিক্রি করে। গত কয়েক বছর এ কোম্পানি কিছু কিছু গবেষনা সংস্থার সঙ্গে খাদ্যের বর্জা পরিস্কার করার যন্ত্র এবং পানি পরিশোধন যন্ত্রসহ বিভিন্ন পরিবেশ রক্ষী ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। এ কোম্পানির বৈদেশিক যোগাযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক সোং পেং বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বাজার স্থিতিশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে তার কোম্পানিকে আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নবোহিত বাজারেও সম্প্রসারণ করেছে। অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানো তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানো জোরদার করেছি। ক্রেতা ও বিক্রেতার স্থান কিছুটা বেড়েছে। এতে আমাদের কোম্পানির উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।

কুয়াং চৌ মেলার মুখপাত্র মু সিন হাই বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের কঠোর পরিস্থিতিতে চীন সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। এবারের কুয়াং চৌ মেলাও চীনের রপ্তানির অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য নিজের ভূমিকা পালন করে যাবে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China