তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির বিকাশ ও রক্ষা |
দক্ষিণ পশ্চিম চীনে অবস্থিত তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতী সংস্কৃতির উত্পত্তিস্থল । দীর্ঘকাল ধরে তিব্বতী জাতি ভিত্তিক বিভিন্ন জাতির জনসাধারণ উত্পাদন ও সমাজের অনুশীলনে স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে । তিব্বতী জাতি প্রচুর ও প্রাচীন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ । গত কয়েক দশকে তা সুষ্ঠুভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা হয়েছে এবং নতুনভাবে বিকাশ লাভ করেছে । আজ এ অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাচ্ছি আমি…
এতক্ষণ আপনারা যা শুনেছেন , তা তিব্বতের সিগাজে অঞ্চলের এক ধরনের লোক নৃত্যের রেকর্ডিং । তুয়েই শে নামে এ ধরনের নৃত্য চীনের রাষ্ট্রীয় অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তিব্বতের সিগাজে অঞ্চলের লাসে জেলার এ নৃত্য তিব্বতে খুবই জনপ্রিয় । তাতে যেমন নাচ গান তেমনি সংগীতের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে ।
এ লোক নৃত্য সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ২০০৫ সালে এ জেলায় একটি শিল্পী দল গঠিত হয় । দলের সকল সদস্য স্থানীয় কৃষক ও পশুপালক । বর্তমানে এ শিল্পী দল এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পী দল হয়ে দাঁড়িয়েছে । লাসে জেলার একজন কর্মকর্তা লি হাই ছুয়ান বলেন ,
লাসে জেলার শিল্পী দল গঠিত হওয়ার প্রথম দিকে দলের সদস্যের সংখ্যা মাত্র ৩২ ছিল । স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পী দলটি ২০০৬ সালে তিব্বত টেলিভিশন কেন্দ্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় । তাদের নিখুঁত তিব্বতী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নৃত্য ও সংগীতের পরিবেশনা দর্শকদের বেশ প্রশংসা পেয়েছে । এতে লাসে জেলার লোক নৃত্য ও সংগীত আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
২০০৮ সালে লাসে জেলার কৃষক শিল্পী দল চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র- সিসিটিভি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বসন্ত উত্সব উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় । তাদের সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা দেশের ব্যাপক দর্শকের সমাদর পেয়েছে । ২২ বছর বয়স্ক সোনাম ছুফেই লাসে জেলার একজন কৃষক । যখন জেলার শিল্পী দল গঠিত হয় , তখন তিনি দলে যোগ দেন ।
তিনি ছোট বেলা থেকেই গান গাওয়া ও বাদ্য যন্ত্র বাজানো পছন্দ করেন । শিল্পের দক্ষতা ও নৈপুণ্যের কারণে তাকে শিল্পী দলে ভর্তি করে দেয়া হয় । তিনি জেলার পক্ষ থেকে গৌরবের সঙ্গে সিসিটিভি’র বসন্ত উত্সব উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন । জেলার শিল্পী দলের একজন সদস্য হিসেবে তার স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতি ও শিল্পকলা উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা উচিত ।
এতক্ষণ আপনারা যা শুনেছেন , তা লাজে জেলার কৃষক শিল্পী দলের পরিবেশিত লোক সংগীত ও নৃত্যনাট্যের রেকর্ডিং। এতে তিব্বতের নতুন গ্রামাঞ্চলের উন্নতি ও কৃষকদের সুখী জীবন প্রকাশ পেয়েছে । শিল্পী দলের পরিচালক তাশি ওয়াংলা ছিলেন লাসে জেলার একটি প্রাথমিক স্কুলের সংগীত শিক্ষক । তিনি যে সংগীত ও নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন , তা দর্শকদের কদর পেয়েছে । এতে তিনি খুব আনন্দিত হয়েছেন ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য লাসে জেলার শিল্পী দল হংকং , কুয়াংচৌ ও হানচৌসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছিল । লাসের ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নৃত্যনাট্য ছাড়াও তারা আরো বেশ কয়েকটি নতুন অনুষ্ঠান রচনা করেছে । এতে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি নতুনভাবে বিকাশ লাভ করেছে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের রাষ্ট্রীয় অবস্তুগত উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য লাসে জেলার লোক সংগীত ও নৃত্যসহ তিব্বতের ৬০টি বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে । যে সব বিষয় রাষ্ট্রীয় অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে , সে সব বিষয় সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য প্রতি বছর সরকার যথার্থ অর্থ বরাদ্দ করে থাকে । যে সব ব্যক্তি অবস্তুগত উত্তরাধিকার সংরক্ষণের জন্য অবদান রেখেছেন , তাদের জন্য সরকার উপযুক্ত ভর্তুকীও দেয় । ১৯৫৯ সালে তিব্বতে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তনের আগে শিল্পীরা ভূমি প্রভুদের শোষণ ও নির্যাতনে জর্জরিত ছিলেন । এখন লোক শিল্পীরা তিব্বতী অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী হয়ে দাঁড়িয়েছেন । তাদের দেশের দুষ্প্রাপ্য সম্পদ বলে অভিহিত করা হয় । তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের সংস্কৃতি বিভাগের কর্মকর্তা নিমা বলেন ,
গণতান্ত্রিক সংস্কারের আগে তিব্বতের জনসাধারণ মুষ্টিমেয় শোষক ও শাসকের নির্যাতনে জর্জরিত ছিলেন । সারা দিন দৈহিক পরিশ্রম ছাড়া তাদের আর কোন অধিকার ছিল না । এখন সরকার লোক শিল্প ও শিল্পীদের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে । লোক শিল্প উন্নয়নের কাজে যোগ দেয়ার জন্য কৃষক ও পশুপালকদের উদ্যোগতা সরকার ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্মান পেয়েছে । বর্তমানে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে যার যার অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ।
নিমা বলেন , তিব্বতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর তিব্বতের লোক সংগীত ও নৃত্য সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সরকার লোক শিল্পীদের ব্যাপক সহায়তা করে আসছে । এ সব শিল্পী তিব্বতের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন ।
শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তিব্বতের অবস্তুত উত্তরাধিকার বিকশিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । জনসাধারণের জন্য বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সও আয়োজন করা হয় ।
জানা গেছে , বর্তমানে তিব্বতী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের জন্য তিব্বতের ১৯টি পেশাগত ও ৫শ’ শিল্পী দল বিভিন্ন অঞ্চলে তত্পর রয়েছে ।
(থান ইয়াও খাং) |
|
|
|
|
অন-লাইন জরীপ |
|
|
|