v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়
2009-04-27 22:29:32
চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র শাংহাইয়ে একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর নাম হচ্ছে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় । আজকের অনুষ্ঠানে এ বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আপনাদের জানাবো।

বসন্তকালে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমাদের সাংবাদিকের সাথে অর্থনীতি ইনস্টিটিউটে অধ্যায়নরত নেপালী ছাত্র কাও লিয়াংয়ের দেখা হয়েছে। কাও লিয়াং বলেছেন, (১)

এখানকার বেশি শিক্ষাদান ক্ষেত্রে ইংরেজী ভাষা শিখানো হচ্ছে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে দেশি-বিদেশী অধ্যাপক অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন ইউরোপ, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অধ্যাপক। এখানে আপনি বিশ্বকে দেখতে পারেন।

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আগে চীনের প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বাণিজ্য উন্মুক্তকরণের প্রথম নগর শাংহাইয়ে অবস্থিত। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রথম দিকে উন্মুক্তকরণের প্রথা ছিল।

এক শোরও বেশি বছরের উন্নয়ের মাধ্যমে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিকভাবে শক্তিশালী একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের "দি টাইমস পত্রিকায় উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা ক্রোড়পত্রে" বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৬তম স্থানে রয়েছে। বর্তমানে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তালিকার ৮৫তম স্থানে রয়েছে। এর আন্তর্জাতিক প্রভাব ধাপে ধাপে উন্নীত হচ্ছে।

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় গত শতাব্দীর ৫০ দশক থেকে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে আসছে। ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে চীনে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির একটি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা তিন হাজার সাত শোরও বেশি। এসব ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায় এক শোটি দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছে। ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী অফিসের পরিচালক উ হুই জেং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বর্তমানে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উ হুই জেং বলেছেন, (২)

আমরা বিদেশী স্নাতকোত্তরদের সার্বিকভাবে ভর্তি করছি এবং ইংরেজী নিয়ে শিক্ষাদানের বহু প্রকল্প চালু করেছি। যেমন চীনের অর্থনীতি, চীনের রাজনীতি ও পররাষ্ট্র, চীনের সমাজ, চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক এমবিএসহ সব কোর্স ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও কাজাখস্তানসহ বিভিন্ন দেশের মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির প্রচার করে।

জানা গেছে, বর্তমানে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ত্রিশটি দেশ ও অঞ্চলের ১৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা ও বিনিময় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এর পাশাপাশি তিন শোজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক বিখ্যাত পন্ডিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট, অধ্যাপক বা উপদেষ্টা অধ্যাপক দিয়েছে। সুতরাং প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ দান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বিনিময় করেন।

বিদেশী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরণের স্কলারশীপ বন্দোবস্তু করেছে। জানা গেছে, প্রতি বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'শোরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীর সরকারী স্কলারশীপ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, এ বিশ্ববিদ্যালয় দশ লাখ ইউয়ান দিয়ে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করেছে। প্রতি বছর অর্থ সাহায্য পাওয়া বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা চার শোজনেরও বেশি।

তাছাড়া, ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়াস চালিয়ে বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুষ্ঠু জীবনযাবনের ব্যবস্থা নিয়েছে। যাতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাপ খাওয়ানো যায়। ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সুন্দর, লেখাপড়ার পরিবেশ শিথিল। এটি ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। জানা গেছে, ক্লাসে শিক্ষক শিক্ষাদান ছাড়াও, এ বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সংগঠন করেছে। যেমন চীনা ভাষা নিয়ে বক্তৃতা দেয়া প্রতিযোগিতা, ছবি আকাঁ প্রতিযোগিতা এবং চীনের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমনের ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা চীনের সংস্কৃতি উপলব্ধি করেন এবং চীনের সমাজকে জানতে পারেন।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় এক শোরও বেশি সামাজিক গোষ্ঠী রয়েছে। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের শখ অনুযায়ী সামাজিক গোষ্ঠীতে যোগ নিতে পারে। বিদেশী ছাত্রী ক্যানাডার মাই চিয়ে ওয়েন বলেছেন, নৃত্য সমিতির তত্পরতায় যোগ দিতে পারায় আমি খুব খুশি। (৩)

চীনের নৃত্য ও সংগীত সম্পর্কে আমি খুব আগ্রহী। আগে আমি নাচতে পারতাম না। নৃত্য ক্লাসের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী আমাকে নাচতে সাহায্য করেছে। তারা খুব ভালো।

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ডক্টর ডিগ্রীতে অধ্যায়নরত জাপানী ছাত্রী সাকুরাই বলেছেন, ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেছেন। তিনি বলেছেন, (৪)

ফুতান বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিকীকরণ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে অনেক বিদেশী শিক্ষক ও বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেক আলোচনার সুযোগ রয়েছে। যেমন আমার বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। আমাকে বহু বিষয়ের ওপর লেখাপড়া করা দরকার। কখনো কখনো আমি অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের লেকচার শুনেছি। কখনো কখনো আমি চীনের সংস্কৃতি শিখেছি। কখনো কখনো আমি ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা ও ভেষজ বিষয়ে শেখা প্রয়োজন মনে করেছি।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China