চীনা গণ মুক্তি ফৌজের নৌবাহিনীর ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ৪ দিনব্যাপী বহুদেশীয় নৌ-তত্পরতা ২০ এপ্রিল পূর্ব চীনের বন্দর শহর ছিংতাও শহরে শুরু হয়েছে । ২৯টি দেশের নৌ প্রতিনিধি দল ও ১৪টি দেশের ২১টি জাহাজ এবারের তত্পরতায় অংশ নিচ্ছে । চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , এবারের তত্পরতা চীনের নৌবাহিনী সম্পর্কে বিশ্বের জানা এবং বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও বিনিময় জোরদার করবে ।
এবারের বহুদেশীয় নৌ-তত্পরতা অনুষ্ঠানের জন্য চীনের নৌবাহিনী গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং অধিকাংশ দেশের সক্রিয় সাড়া পেয়েছে । আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের প্রভাবে কয়েকটি দেশের নৌ-বাজেটে অসুবিধা দেখা দিলেও তারা সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালিয়ে চীন আসার অর্থ যোগার করেছে । অবশেষে মোট ২৯টি দেশ উচ্চ পর্যায়ের নৌপ্রতিনিধি দল এবং ১৪টি দেশ ২১টি জাহাজ পাঠিয়েছে । চীনের প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর মং সিয়াংছিং মনে করেন , এত বেশি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নৌ-তত্পরতায় অংশ নেয়ার জন্য চীনে এসেছে তার তিনটি কারন রয়েছে । তিনি বলেন , এক , ৩০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাথেসাথে চীনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও প্রভাব আরও উন্নত হয়েছে। দুই, চীনের নৌবাহিনীর ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এমন বড় আকারের নৌ-তত্পরতা বিশ্বের অনেক দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । তিন , নৌবাহিনীর আধুনিকায়নসহ চীনের সামরিক ক্ষেত্রের আধুনিকায়নের অনেক উন্নতি হয়েছে । চীনের প্রতিরক্ষার আধুনিকায়ন সম্পর্কে পাশচাত্য দেশগুলো বা কয়েকটি দেশ খুব কৌতুহলী । তাই এবারের নৌ- তত্পরতার মাধ্যমে বিদেশীরা চীনের সেনাবাহিনীর উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারবে।
এবারের নানা নৌ-তত্পরতা চলাকালে বহুদেশীয় নৌবাহিনীর শীর্ষ সেমিনার , সামুদ্রিক নৌমহড়া এবং জাহাজগুলোর মধ্যে বিনিময় অনুষ্ঠিত হবে । চীনের নৌবাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন , এবারের নৌ-তত্পরতার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও বিনিময়ের মঞ্চ , বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর নেতাদের মধ্যে সামুদ্রিক নিরাপত্তা রক্ষার বিষয় নিয়ে আলোচনা মঞ্চ এবং বিভিন্নদেশের নৌবাহিনীর বন্ধুদের জন্য চীন ও চীনের নৌবাহিনী সম্পর্কে জানার মঞ্চ গড়ে উঠবে । এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রফেসর মং সিয়াংছিং বলেন , নানা বাহিনীর মধ্যে নৌবাহিনী সবচেয়ে আন্তর্জাতিকায়ন সম্পন্ন একটি বাহিনী । এবারের তত্পরতায় অন্যান্য দেশের নৌবাহিনী সেনাবাহিনীর মধ্যেকার বিনিময় এবং এমন ধরণের একটি জানালার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে পারবে ।
এবারের বহুদেশীয় নৌ-তত্পরতা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । পক্ষান্তরে কিছু পাশ্চাত্য সংবাদ মাধ্যম এ সুযোগে শক্তিশালী চীনাবাহিনীর ওপর তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । প্রফেসর মং সিয়াংছিং মনে করেন , তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই । কারণ চীনের নৌবাহিনী ও চীনের সামরিক শক্তির উন্নয়ন বিশ্বের ওপর কোনো হুমকী হয়ে দাঁড়াবে না । তিনি বলেন , একটি দেশ অন্য দেশের ওপর হুমকী হয়ে দাঁড়াবে কি না তা সে দেশের উদ্দেশ্য অর্থাত অন্য দেশের ওপর সে দেশ হুমকী দেখানোর মতলবের উপর নির্ভরশীল । বলাবাহুল্য, নতুন সময়পর্বে চীনের পররাষ্ট্রনীতি শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি । এমন একটি মহত পররাষ্ট্রনীতির পরিচালনায় আমাদের প্রতিরক্ষা নীতি স্পষ্টতঃই একটি সক্রিয় প্রতিরক্ষার নীতি । আমরা এবারের নৌ-তত্পরতার মধ্য দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার আচরণ প্রদর্শন করেছে । এটা " চীনের হুমকী তত্ত্ব" খন্ডন করেছে ।
প্রফেসর মং সিয়াংছিং মনে করেন , আন্তর্জাতিক মর্যাদা ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে এমন একটি বড় দেশ হিসেবে চীন যে জাতীয় ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নৌবাহিনীর উন্নয়ন তা ইতিহাস উন্নয়নের অপরিহার্য ফলাফল । বিশ্বের উচিত চীনের নৌবাহিনীর উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করা । তিনি বলেন , একটি বড় দেশ হিসেবে চীনের ভৌগলিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল । ভূভাগের দিক থেকে চীন একটি বড় দেশ এবং সামুদ্রিক অঞ্চলের দিক থেকেও একটি বড় দেশ । বর্তমানের বিশ্ব একটি বিশ্বায়নের বিশ্ব । সমুদ্রগামী হতে চাইলে বড় দেশের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নৌবাহিনীর আধুনিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে । বলাবাহুল্য আমাদের সামুদ্রিক স্বার্থ এবং দেশের স্বার্বভৌমত্ব ও ভূভাগীয় অখন্ডতা রক্ষা করতে চাইলে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলাও প্রয়োজন । |