v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
হস্তাক্ষরশিল্পী কৃষক বিন ছুইলিন ও তার হস্তলিপির দোকান
2009-04-21 19:10:55

    বিন ছুইলিন উত্তর পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের একজন গ্রামীণ মহিলা । তিনি ছোটবেলা থেকেই চীনের ঐতিহ্যবাহী হস্তলিপি ও ছবি আকাঁ পছন্দ করেন। দশ বারো বছর আগে সবার আপত্তি সত্বেও তিনি প্রথম হস্তলিপির দোকান খুলেন । তিনি হস্তাক্ষর ও ছবি আকাঁর ওপর নির্ভর করে সংসার চালাতেন । এখন তার দোকানের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । অনেক বেশি লোক তার হস্তলিপি ও ছবি পছন্দ করছে ।

     বিন ছুইলিনের দোকান " চিয়ে ফুচাই"লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে অবস্থিত । এক গরীব কৃষক পরিবারে ৪৪ বছর বয়সী বিন ছুইলিনের জন্ম । ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড় ।ছোটবেলায় তিনি ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি । মাধ্যমিক স্কুলচ্যুত হয়ে তিনি বাড়িতে ফিরে কৃষি কাজ এবং গৃহস্থালির কাজ করতেন ।এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমার পরিবার খুব গরিব ছিল । মা'য়ের স্বাস্থ্য ভাল ছিল না । আর্থিক অবস্থার কারণে স্কুল-ফি দেয়ার সামর্থ্য ছিল না বলে আমি স্কুলচ্যুত হয়েছি । অন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে দেখে আমার মন খুব খারাপ হতো । স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করতে আমার খুব ভাল লাগে । উপায় নেই বলে আমি নিজেই অক্ষর লেখা শিখতে শুরু করি ।

     লেখাপড়া করতে ভাল লাগে বলে বিন ছুইলিন স্কুল চ্যুত হওয়ার পর প্রতিদিন হাতে একটি পুরোনো তুলি দিয়ে পাথরের ওপর অক্ষর লেখা শিখতে শুরু করে । এক আকস্মিক সুযোগে বিন ছুইলিন " তুলি দিয়ে অক্ষর লিখতে শেখার" একটা বই পেলেন । বইটিতে লেখা আছে "ছুনলিয়েন" অর্থাত বড়বড় অক্ষরে লেখা কবিতার ছত্র । এর পর তিনি বইটি অনুকরণ করে অক্ষর লেখা শিখতে শুরু করেন । একবার তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, বাজারে কেউকেউ ছুনলিয়েন বিক্রি করছিলেন । তিনি ভাবলেন,যদি নিজের লেখা ছুনলিয়েন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন তাহলে তিনিও উপার্জন পাবেন । সুতরাং বিন ছুইলিন সাহস করে বাজারে গিয়ে নিজের লেখা ছুনলিয়েন বিক্রি করতে শুরু করেন ।

     ১৯৯৫ সালে বিশ্ব নারী সম্মেলন পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটি ও জাতীয় নারী ফেডারেশন "চীনের দক্ষ নারী হস্তশিল্পী পুরস্কার "এর আয়োজন করেছে । নারী ফেডারেশন পুরস্কারের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকার কাছে অক্ষর লেখা ও আঁকা ছবিসহ নানা কাজকর্ম সংগ্রহ করে । বিন ছুইলিন নিজের লেখা থাং রাজবংশের একটি কবিতা পাঠিয়ে দেন । তিনি ভাবতেও পারেননি যে,তার এই লেখা পুরস্কার পেতে পারে।এথেকে বিন ছুইলিন উপলব্ধি করেছেন,অক্ষর লেখা তার শুধুমাত্র শখ নয় ,বরং পরবর্তীকালে উপার্জন করার একটি চমত্কার পদ্ধতিও । তিনি বলেন,-২-পেইচিংয়ে এক নিলাম কেন্দ্র আমাদের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করে । সেখানে আমাদের লেখা অক্ষর ও আঁকা ছবি ভাল দামে বিক্রি হয় । তখন আমি বুঝেছি ,আমার অক্ষর বিক্রি করা যায় এবং তা বিক্রি করে মোটা আয় পেতে পারি । আমি নিজের উন্নয়নের পথ খুঁজে বের করেছি।

     পেইচিংএ বিশ্বনারী সম্মেলন চলাকালে দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বিন ছুইলিনের পরিচয় হল । বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিন ছুইলিন অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন ।তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে বিশ্বনারী সম্মেলন চলাকালে  আমার মতো ষাটেরও বেশি হস্তাক্ষর শিল্পী দেশের বিভিন্ন

     অঞ্চল থেকে পেইচিংয়ে এসেছেন।আমরা অভিজ্ঞতা বিনিময় করি । আমি জানতে পেরেছি,অক্ষরটা ভালভাবে লিখতে চাইলে একটি দোকান খোলা দরকার । একদিকে উপার্জন করি আর এক দিকে নিজের লেখাটা ভালভাবে লিখি । অবশেষে আমি পেইচিংয়ে এক অক্ষর লেখা ও ছবি আঁকা দোকান খুলেছি ।

 পেইচিং থেকে গ্রামে ফিরে আসার পর বিন ছুইলিন গ্রামে স্থানীয় প্রথম অক্ষর ও ছবি দোকান খুলে নিজের লেখা ছুনলিয়েন ও আঁকা ছবি বিক্রি শুরু করেন । বিন ছুইলিন একজন কৃষক থেকে একজন ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীতে পরিণত হলেন । কয়েক বছর পর বিন ছুইলিনের দোকানের নাম গ্রামে ,থানায় এমন কি জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে । বিন ছুইলিনও একটি সাধারণ কৃষক থেকে বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন ।

     ২০০৩ সালে বিন ছুইলিন নিজের দোকানটি স্থানীয় বাণিজ্য এলাকায় স্থানান্তরিত করেছেন । সাথেসাথে তিনি অক্ষর লেখার একটি প্রশিক্ষণ কোর্সও খুলেছেন। বিন ছুইলিনের অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা লাভ করে । এমন কি তার নাম লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিদেশী শিক্ষকদের কাছেও ছড়িয়ে পড়ে ।যার ফলে কয়েকজন বিদেশী ছাত্র বিন ছুইলিনের প্রশিক্ষণ কোর্সে শিখতে আসেন । তাদের মনোযোগ ও আগ্রহ বিন ছুইলিনের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেন, -লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একজন স্পেনীস চীনা অক্ষর শিখার পর চীনের অক্ষর বুঝতে পেরেছেন । তিনি বলেন, চীনা অক্ষর তাদের অক্ষরের চেয়ে সুন্দর । তিনি চীনা অক্ষরে "ছাতা" শব্দ লিখেছেন । তিনি বলেন,চীনা অক্ষরে ছাতা শব্দটি সত্যিই একটি ছাতার মতো । লিনা নামে একজন জার্মানী চীনা ভাষা শিখেছেন । চীনাদের সঙ্গে মত বিনিময় করার সময় তিনি সব বুঝতে পারেন । একজন বিদেশী সত্যিই এত চমত্কার চীনা ভাষা শিখেছেন । সত্যিই প্রশংসনীয় ।

     বিন ছুইলিনের প্রশিক্ষণ কোর্সে ভিন্ন জাতি,ভিন্ন বর্ণ,ভিন্ন পরিচয়ের মানুষ বিনিময়ের মাধ্যমে পরস্পরের কাছ থেকে শিখতে পেরেছেন । কৃষক থেকে শিক্ষক, গ্রামীন নারী থেকে ব্যবসায়ী,২০ বছরেরও বেশি সময় নিজে যে পথ অতিক্রম করছে তা পযালোচনা করে বিন ছুইলিন বলেন, ১৯৮৭ সালে আমি অক্ষর লেখা শিখতে শুরু করি এবং দোকান খুলি। গোটা প্রক্রিয়ায় আমি অনুভব করেছি , গ্রামের পরিবেশ ও গ্রামীন মানুষের ধারণা এবং আর্থিক অবস্থার চাপে অনেক লোক সফল হতে পারেনি। আমি উপলব্ধি করেছি, যে কেউ কোনো কথাই বলুক না কেন, যে কোনা চাপের সম্মুখীন হকই না কেন। নিজের কাজ করে যাও, নিজের পথ অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যাও । যে কোনো কাজ কর নাকেন ,তোমাকে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে এবং অটল থাকতে হবে । আমি তাই করেছি ,তাই আমি সফল হয়েছি ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China