১৯ এপ্রিল বোআও এশিয়া ফোরাম-২০০৯ শেষ হয়েছে। তিন দিনের এ ফোরামে ১৬০০ চীনা ও বিদেশী রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা মত বিনিময় করেছেন। এবারের মত বিনিময় বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থায় পড়া এশিয়ার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, সংকটের মধ্যেও আবার সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। ১৯৯৭ সালে এশিয়ার ব্যাংকিং সংকটের সময় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ একমত হয় যে একটি দেশ এ সংকট মোকাবিলা করতে পারে না, এ জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করআ প্রয়োজন। সে সময়ের একটি বড় ফসল হলো আসিয়ান এবং চীন,জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংলাপ ব্যবস্থা স্থাপন এবং মুদ্রা বিনিময় সম্প্রসারণ চুক্তি "চিয়াংমাই চুক্তি"-র স্বাক্ষর। আগের এশিয়ার সংকটের তুলনায় এবারের বিশ্ব ব্যাংকিং সংকটে এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি প্রভাবিত হয়। এশিয় দেশের মধ্যে অনেকের অর্থনীতি রপ্তানি কেন্দ্রিক এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র হলো রপ্তানি'র প্রধান দেশ। এবারের ব্যাংকিং সংকটের পর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি অনেক কমেছে বলে এশিয় দেশের রপ্তানির পরিমান অনেক কমে গেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে পুঁজি ও কর্ম সংস্থানও কমে গেছে। সুতরাং আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করে আরো ভারসাম্য উন্নয়ন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা এবারের ফোরামের প্রধান বিষয় বিবেচিতত হয়।
তাই বলা যায়, সহযোগিতা হলো এবারের ফোরামের একটি প্রধান বিষয়। চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও সহযোগিতা সম্পর্কে ৫টি প্রস্তাব দিয়েছেন। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিডেল রামোসের বক্তব্য "প্রতিবেশীদের পড়তে দেবো না" অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশও সহযোগিতা জোরদার করে ব্যাংকিং সংকট বিলার আহ্বান জানিয়েছেন। সবাই বুঝতে পেরেছেন, অর্থনীতি'র বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ মন্দাবস্থায় পড়লে অন্য দেশও প্রভাবিত হয়। সামনের সংকট পরস্পরের সাহায্যের মাধ্যমে কেবল একসাথে উন্নয়ন হতে পারে। "একসাথে সমস্যা মোকাবিলা করা, সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন করা" এবারের ফোরামের অর্জিত একটি ঐকমত্য। তা শুধু বোআওয়ের বরাবরের লক্ষ্য "এশিয়ার সহযোগিতায় সাফল্য"এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, বিশেষ করে দুবার ব্যাংকিং সংকটে পড়া এশিয়ার জন্য খুবই মূল্যায়নযোগ্য।
যদিও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সংকটে গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়েছে তবুও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মৌলিক অবস্থা ভাল। এশিয়ায় আপেক্ষাকৃত পর্যাপ্ত বিদেশী মুদ্রা সংরক্ষণ এবং তুলনামুলক স্থিতিশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আছে এবং অর্থনীতি'র উন্নয়ন হচ্ছে, সহযোগিতার সম্ভাবনাও এখানে বেশি। এবারের ফোরামে চীনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, চীনের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রাথমিক সফল পাওয়া গেছে। প্রথম তিন মাসে চীনের অর্থনীতি'র প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১শতাংশ। তা এশিয়া দেশগুলোর সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে চীনের অর্থনীতি'র উন্নয়নের প্রভাবে সারা এশিয়ার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। চীনের পক্ষে যদি এশিয়া স্থিতিশীলকরা সম্ভব না হয় তাহলে চীনের উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক পরিবেশ হারিয়ে যাবে। এ কারণে চীন এশিয়া অঞ্চলের সহযোগিতা সক্রীয়ভাবে ত্বরান্বিত করছে। ১৯৯৭ সালে এশিয়ায় ব্যাংকিং সংকটের পর চীনের মুদ্রা রেনমিনপি'র মূল্য স্থিতিশীল রাখায় প্রতিবেশী দেশের জন্য মন্দাবস্থা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হয়েছে। এবারের আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সংকটের পর দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েসিয়া ও ইন্দোনেসিয়ার সঙ্গে চীন দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আঞ্চলিক বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ তহবিল স্থাপন করার ক্ষেত্র ত্বরান্বিত করেছে।
এবারের ফোরামে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি "চীন-আসিয়ান পুঁজি বিনিয়োগ সহযোগিতা তহবিল" গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ প্রস্তাব থেকে প্রতিফলিত হয়েছে এশিয়ার সহযোগিতার মাধ্যমে একসঙ্গে সফল হওয়ার লক্ষ্য।
"আশা যেন একটি অনির্বান আলোর মতো যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ব জনগণের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছে।"চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও ফোরামে এ কথাই বলেছেন। সংকট মোকাবেলায় দৃঢ় আস্থার গুরুত্বএর কথা তিনি জোর দিয়ে বলেছেন। এ আস্থা এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টা সম্মিলিত সহযোগিতা এবং "প্রতিবেশীকে পড়তে না দেয়া"র ধারণা থেকেই জন্ম হয়। আমরা বিশ্বাস করি বোআও ফোরাম ২০০৯-এর সম্মেলন হচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার শুরু এবং বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটি সূচনা। (ইয়াং ওয়েই মিং) |