বোআও এশিয় ফোরাম ১৮ এপ্রিল চীনের হাইনান প্রদেশের ছোট নগর বোআওতে শুরু হয়েছে। এবারের বার্ষিক সম্মেলনের প্রসঙ্গ হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট ও এশিয়াঃ চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা'। এ প্রসঙ্গ নিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা জোরদার করা, বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের বিরোধীতা করার পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থের স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে এশিয়া বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে।
ওয়েন চিয়া পাওয়ের বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে 'আস্থা বাড়ানো, সহযোগিতা গভীরতর করা এবং সকলের কল্যাণ বাস্তবায়ন করা'। এটা হচ্ছে এবারের বোআও এশিয় ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের প্রতি চীন সরকারের প্রত্যাশা। থাইল্যান্ডে পূর্বনির্ধারিত পূর্ব এশিয় নেতৃবৃন্দের ধারাবাহিক সম্মেলন ব্যর্থ হওয়ায় এবারের বোআও এশিয় ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন আর্থিক সংকট ঘটার পর এশিয় দেশগুলোর প্রথমবার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন হয়েছে। দশ বারোটি দেশের সরকার প্রধান আর দেশি-বিদেশি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিদগ্ধ সমাজের উর্ধতন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ফোরামে অংশ নিচ্ছেন।
ওয়েন চিয়া পাও প্রথমে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট মোকাবিলায় চীন সরকারের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা আর অপেক্ষাকৃত দ্রুত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একগুচ্ছ পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, 'চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুপ্ত শক্তি আরো বিকশিত হবে। নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য আরো বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।'
ওয়েন চিয়া পাও বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকট এখনো ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির পতনের প্রবণতার পরিবর্তন হয় নি। বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ ও সর্পিল পথে এগুতে হবে। ফলে চীন এশিয় দেশগুলোর সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতা জোরদার করে আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে আগ্রহী। তিনি সহযোগিতা জোরদার করা সংক্রান্ত পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, 'এক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ঘনিষ্ঠ করা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করা। দুই, অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং এ অঞ্চলের অর্থের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। তিন, বিনিয়োগের সহযোগিতা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বিনিয়োগের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা। চার, সবুজ সহযোগিতা ও এশিয়ার অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। পাঁচ, আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে সহযোগিতা ও সমন্বয় জোরদার করা এবং বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।'
ওয়েন চিয়া পাও স্পষ্টভাবে আরো বলেন, এ অঞ্চলের বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণকাজে সহায়তার জন্য চীন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের 'চীন-আসিয়ান বিনিয়োগ সহযোগিতা তহবিল' স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী ফোরামে সকল অংশগ্রহণকারীদের কাছে আবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, চীন হচ্ছে এশিয়ায় সহযোগিতার সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং নির্মাতা। তিনি পুনরায় ঘোষণা করেন, 'কার্যকরভাবে এবারের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কেবল নিজ নিজ দেশের কাজ ভালোভাবে নিষ্পত্তি করলেই হবে না, বরং সহযোগিতাকে আরো জোরদার করে এবং হাতে হাত রেখে যৌথভাবে এশিয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। যাতে এশিয়া বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে।'
ওয়েন চিয়া পাওয়ের বক্তৃতা অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের নেতাদের প্রশংসা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশের নেতারা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটে চীনের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান আবিশেভিচ নাজার্বায়েভ বলেন, 'আমি বলতে চাই, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন কেবল চীনা জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করেছে তা নয়, বরং বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। আমি মনে করি, এবারের ফোরামের আলোচ্য বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে। এশিয়া বিশ্বের নতুন অর্থনীতি কেন্দ্রবিন্দু হবে এবং এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রবণ-লোকের সংখ্যা এখন খুবই কম।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |