v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পৃথিবীর সমস্ত দেশের মধ্যে চীনের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী
2009-04-17 20:55:28
    বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার শ্রোতা এস কে সারোয়ার তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের লোকসংখ্যা ও জনবসতির ঘনত্ব কী রকম?

     উত্তরে বলছি, পৃথিবীর সমস্ত দেশের মধ্যে চীনের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবর্শেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ সালের জুন মাস পযর্ন্ত হাংকা, ম্যাকাও তাইয়েন ছাড়া চীনের মূল ভূভাগের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি। এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যার ২২ শতাংশ ভাগ। চীনের বিভিন্ন একালার লোকসংখ্যার ঘনত্বের পার্থক্য খুব বেশী। বিশাল অভ্যন্তরীণ ভূখন্ডে অধিবাসীর সংখ্যা কম আর উপকূলীয় এলাকায় অধিবাসীর সংখ্যা বেশী। হিসাব অনুযায়ী, চীনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসির ঘনত্ব হল গড়ে ১০৯ জন। কিন্তু উপকূলীয় ১১টি প্রদেশ, কেন্দ্রীয়শাসিত শহর ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোকসংখ্যার ঘনত্ব গড়ে ৩২০ জন আর একই সময়পর্বে মূল-ভূখন্ডের অভ্যন্তরীণ ১৮টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে লোকসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ৭১.৪ জন। তার মধ্যে সবচেয়ে কম লোকসংখ্যার তিব্বত, ছিংহাই, সিনচিয়াং , কানসু , নিংসিয়া ও অন্তর্মঙ্গোলিয়ার লোকসংখ্যা প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১১.৮ জন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় অর্থাত ১৯৪৯ সালে চীনের লোকসংখ্যা ছিল ৫৪ কোটি। কিন্তু নয়া চীন প্রতিষ্ঠার প্রথম ২০ বছরে একদিকে সুখী জীবাযাপন ও উন্নত চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে এবং অন্যদিকে লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিতে ব্যর্থ হওয়াতে চীনের লোকসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছিল। ১৯৭০ সালে চীনের লোকসংখ্যা ৮২ কোটিতে দাঁড়িয়েছিল। সত্তরের দশক থেকেই পরিকল্পিতভাবে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচী কার্যে রুপায়িত করা শুরু হয়। যার ফলে লোকসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ক্রমশ: হ্রাস পায়। বালাবাহুল্য, লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চীনের অবদান উল্লেখযোগ্য।

      বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শ্রোতা আবদুশ শাকুর তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কতো প্রদেশ আছে? উত্তরে বলছি, চীনে মোট ২৩টি প্রদেশ আছে। তা ছাড়া, চীনে পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও চারটি কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি কর্তৃত্বাধীন শহর আছে। চীনে যে পাঁচটি স্বাযত্তশাসিত অঞ্চল আছে সেগুলোর নাম: অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, গুয়াংসী যুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি কর্তৃত্বাধীন চারটি শহরের নাম: পেইচিং, সাংহাই , থিয়ানজিন ও ছংছিন।

     ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের শ্রোতা সুজাত ভদ্র তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের জলবায়ু কী রকমেরর? প্রায় বন্ধু, আপনার এ দু'টো প্রশ্নের উত্তর দেয়া একটু কঠিন। কারণ ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন চীনে জলবায়ু সৌসুমী বায়ুর প্রভাবাধীন। তবে চীনের ভূভাগ বিশাল আর ভূসংস্থান জটিল বলে এক অঞ্চলের জলবায়ুর সঙ্গে আর-এক অঞ্চলের জলবায়ুর পার্থক্যও অনেক। চীনরে গুয়াংডোং প্রদেশ , হাইনান প্রদেশ এবং থাইওয়ান আর ইয়ুন্নান প্রদেশের দক্ষিণভাগ জুড়ে গ্রীস্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিরাজমান। সারা বছরই গ্রীস্মকালের প্রাধান্য থাকায় এই সব অঞ্চলে সবুজ পষ্পগুল্মপাদপের প্রাচুর্য দেখা যায়। উত্তরপূর্বের হেইলোংজিয়াং প্রদেশে গ্রীস্মকাল সংক্ষিপ্ত আর স্নিগ্ধ, শীতকাল প্রচন্ড হিমেল। পূবের ছাংজিয়াং অববাহিকা আর হুয়াইহো অববাহিকার চারপাশে অঞ্চলগুলো উষ্ণ ও আর্দ্র। এসব অঞ্চলের ঋতুকালও সুষ্পষ্টভাবে চারটে। উত্তরপশ্চিমের অন্তর্মঙ্গোলিয়া-সিনজিয়াং অঞ্চলে একই দিনের আবহাওয়ায় চরম তারতম্য হয়। এসব সত্ত্বেও, চীন প্রধানত উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং চীনের সুস্পষ্টভাবে চার ঋতুকে পরপর ঠান্ডা আর গরম পড়ে, এবং পর্যায়ক্রমে উচ্চ তাপমাত্রা আর প্রবল বৃষ্টির মরশুমের পর নিম্ন তাপমাত্রা আর অল্প বৃষ্টির মরশুম আসে।

     বাংলাদেশের ঢাকা জেলার শ্রোতা ইলিয়াছ আহমদ বাবুল তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় কোনো সালে? উত্তরে বলছি, চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্য ভাগে অর্থাত চীনের থাং রাজবংশ আমলে। চীনের থাং রাজবংশ ও সোং রাজবংশ আমলে ইসলাম ধর্মাবলম্বী আরব ও পারশ্যের ব্যবসায়ীরা স্থলপথে মধ্য-এশিয়ার ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম চীনে আসতে, আর নৌপথে আসতেন চীনের দক্ষিণ প্রান্তের গুয়াযৌ শহরে ও দক্ষিণপূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য বন্দরে। এতে আরব ও পারশ্যের জনগণের সঙ্গে চীনা জনগণের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় যেমন প্রসারিত হয়েছিল, তেমনি চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও বিস্তারও শুরু হয়েছিল। বিদেশ থেকে ইসলাম ধর্মের উলেম, ধর্মপ্রচারক ও মুসলমান পর্যটকদের আসতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিভিন্ন স্থানে মসজিদও স্থাপিত হতে থাকে। ইউয়ান রাজবংশ ও মিং রাজবংশ আমলে চীনে ইসলাম ধর্মের আরও প্রসার হয়।

    ভারতের পশ্চিম বাংলার শ্রোতা দেবদর্শন বন্দোপাধ্যায় তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কত কর্মচারী আছে? তাদরে মধ্যে মহিলার সংখ্যা কত ? উত্তরে বলছি, মর্তমানে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের কর্মচারীদের সংখ্যা দু'হাজারেরও বেশী । তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ হল মহিলা।

    বাংলাদেশের পাবনা জেলার শ্রোতা কবিতা চাকলাদার তার চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি বড় নদী আছে? উত্তরে বলছি, ইয়াংসি নদী অর্থাত ছাংজিয়াং নদী চীনের দীর্ঘতম এবং পৃথিবীতে তৃতীয় দীর্ঘতম। ইয়াংসি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৬,৩০০ কিলোমিটার, অববাহিকার আয়তন ১৮০৭১৯৯ বর্গকিলোমিটার। শাংহাই, নানজিং, উহান এবং ছোংছিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে সংযুক্ত করে একটি প্রধান শিরাপথের মতো ছাংজিয়াং নদী প্রবাহিত। হুয়াংহো চীনের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। ছিংহাই প্রদেশের বায়ান হার পর্বতের উত্তরাংশে হুয়াংহো নদীর উত্পত্তি হয়েছে। দক্ষিণ চীনের দীর্ঘতম নদী যুজিয়াং নদী। চীনের উত্তরপশ্চিম অবভূমিগুলোর এবং মালভূমি-অঞ্চলগুলোর বেশির ভাগ নদীই অভ্যন্তরীণ নদী।

     বাংলাদেশের শোরপুর জেলার শ্রোতা সমন মিয়া তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের বিখ্যাত যাদুঘরের নাম কি? উত্তরে বলছি, সারা চীনে অজস্র যাদুঘর আছে। কিন্তু যদি সবচেয়ে বিখ্যাত যাদুঘরে বলতে গেলে তাহলে পেইচিংয়ের রাষ্ট্রীয় যাদুঘর সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। এই যাদুঘর পেইচিংয়ের তিয়েন আন মেন মহা চত্বরের পূর্ব পাশে অবস্থিত। এতক্ষণ কয়েক জন শ্রোতার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আজকের মুখোমুখি এখানে শেষ হল। এখন একটি বাংলা গান শুনবেন।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China