v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
"২০০৮ সালে চীনে আবিষ্কৃত দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শনের" তালিকা প্রকাশিত
2009-04-08 14:58:01
 ৩১শে মার্চ চীনের জাতীয় সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ ব্যুরোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত "২০০৮ সালে চীনের পুরাকীর্তি নিদর্শনের দশটি নতুন আবিষ্কার"-এর কথা পেইচিংয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর এগুলো ২৫টি ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছে এবং সমালোচক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০০৮ সাল হলো চীনের প্রত্নতত্ত্বের ফসল তোলার বার্ষিকী। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কার অবকাঠামোর সংস্কার কাজ চালানোর পাশাপাশি খনন করা হয়। ফলে চীনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। এখন শুনুন এ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন।

    চীনের "পুরাকীর্তি নিদর্শনের দশটি নতুন আবিষ্কারের" নির্বাচন কার্যক্রম এখন ১৯ বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। চীনের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ রক্ষাকারী মহল এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা এসব পূরাকীর্তি নির্বাচন করেন। এর লক্ষ্য হলো প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করা। এবারের প্রকাশিত "দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শনের আবিষ্কারের" মধ্যে রয়েছে শ্যান সি কাও লিং ইয়াং কুয়ান চাই ধ্বংসাবশেষ এবং শান তোং শৌ কুয়াং ইয়ান ইয়ে ধ্বংসাবশেষ প্রভৃতি।

    বাছাইতে অংশগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রত্নতাত্বিক, চীনের সামাজিক বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির প্রত্নতত্ত্ব গবেষণালয়ের গবেষক সুই পিং ফাং মনে করেন, প্রতি বছর "দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কার" বেছে নেয়া কার্যক্রম প্রত্নতত্ত্বের প্রতি জনগণের উত্সাহ এবং মূল্যায়ন করার অনুকূল হবে। তিনি বলেন,

    আমরা প্রতি বছর একবার করে বেছে নেই। নতুন আবিষ্কার মানে কী? ধ্বংসাবশেষে খনন করা পণ্যদ্রব্য খুবই সুন্দর। সেভাবে সবই নতুন আবিষ্কার নয়। নতুন আবিষ্কার মানে প্রত্নতত্ত্ব দিক থেকে গবেষণার তাত্পর্য রয়েছে। আমরা পুরোপুরিভাবে বিদ্যাগত দিক থেকে বেছে নেই। এটা খুব পেশাগত।

    ২০০৮ সালের "দশটি পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারের মধ্যে একটি হলো শুয়াং তুন এক নম্বর ছুন ছিউ কবর। তা চীনের মধ্যাঞ্চলের আন হুই প্রদেশের বোং বু শহরের শুয়াং তুন গ্রামে খনন করা হয়। প্রায় দু'বছরের কঠোর খননের পর প্রত্নতত্ত্ব এবং মানবজাতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা প্রত্নতত্ত্বের অবস্থা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ২৬০০ বছরের বেশি আগের এই কবরে আবিষ্কার করা নতুন সাংস্কৃতিক অবস্থা ও স্থাপনার ধারণা আগে কখনও দেখা যায়নি। কবরের আকার ও গঠন কাঠামো অতি জটিল। কবর পাঁচ রঙ মেশানো মাটি দিয়ে নির্মিত। এ ধরণের হলুদ, ধূসর, কালো, লাল এবং সাদা এ পাঁচ ধরণের মাটি একই জায়গায় তৈরী করা হয়নি। মানুষের উদ্যোগে এ পাঁচ ধরণের মাটিকে বিভিন্নভাবে গভীর ও হাল্কা রঙ দেয়া হয়। এ কবরের চক্রাকার কাঠামোও আগে কখনও দেখা যায়নি।

    আন হুই প্রদেশের বোং বু সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ ব্যুরোর মহাপরিচালক সিয়ে কে লিন বলেন,

    শুয়াং তুন প্রথম নম্বর ছুন ছিউ কবর হচ্ছে এ পর্যন্ত চীনের প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসে আবিষ্কার করা প্রথম ক্রোকারের কবর। এতে অনেক নতুন সাংস্কৃতিক অবস্থা রয়েছে। এর নতুন সংস্কৃতি ও নতুন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কেও আগে কিছু জানা যায় নি। পরে আমরা এই কবর নিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো।

    চীনের মধ্যাঞ্চলের হো নান প্রদেশের সিন চেং শহরে আবিষ্কার করা হান ওয়াং সমাধি এবারের "দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারের" তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। হো নান প্রদেশের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষণালয়ের গবেষক মা চুন ছাই বলেন, এ কবর প্রথমবারের মতো খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর যুদ্ধরত দেশসমূহের সময়কালের শেষ দিকের হান ওয়াং-এর সমাধি সনাক্ত করা হয়। এ সমাধি থেকে আবিষ্কার করা দ্রব্য এবং কবরের নির্মাণের রূপ প্রভৃতি আমাদের দেশের প্রত্নতত্ত্ব ক্ষেত্রের শুণ্যতা পূরণ করেছে। তিনি বলেন,

    এ কবর আমাদের জন্য সমাধি এবং অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার ওপর গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যুগিয়েছে।

    মা চুন ছাই এবং তাঁর দল ২০০৬ সালে খনন কাজ শুরু করেন। প্রায় তিন বছরে তাঁদের খননের আয়তন ১২ হাজার বর্গমিটার ছাড়িয়ে গেছে। মা চুন ছাই সংবাদদাতাকে বলেন, দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প চালানোর পাশাপাশি চালু হওয়া সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ কাজ প্রত্নতত্ত্বের ক্ষেত্রে সাফল্য এনে দিয়েছে।

    দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের পানি ঘাটতি প্রশমণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলের ইয়াং জি নদী থেকে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় আনা হয়। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পূর্ব, মধ্য এবং পশ্চিম দিক এ তিনটি লাইন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্যাঞ্চলের প্রকল্প ২০০৭ সালে শেষ হয়েছে এবং পূর্বাঞ্চলের প্রকল্প ২০১০ সালে শেষ হবে। চীনের জাতীয় সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ ব্যুরোর প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ প্রকল্পের ফলে সাত'শরও বেশি ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ পানিতে ডুবে যায়। এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের চালানোর পাশাপাশি প্রত্নতাত্বিক কর্মীরাও খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের কাজে। জাতীয় সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ ব্যুরোর উপ মহাপরিচালক থোং মিং খাং বলেন,

    মৌলিক নির্মাণ এবং সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ হচ্ছে এক জোড়া দ্বন্দ্ব। নির্মাণের পাশাপাশি কীভাবে সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সুরক্ষা করা যায় তা হচ্ছে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। আগে এ সমস্যার প্রতি আমাদের তত বেশি গুরুত্ব ছিল না। তাই কিছু সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের ক্ষতি হয়েছে। এমন কি অদৃশ্য হয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সংরক্ষণের মাত্রা বাড়িয়ে প্রকল্প নির্মাণের প্রক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের সংরক্ষণের ব্যাপারটি বিবেচনায় আনা হয়েছে।

    থোং মিং খাং বলেন, ইয়াং জি নদীর তিন গিরিখাত প্রকল্প নির্মাণের আগে আমরা প্রথমে প্রত্নতত্ত্বের নিরীক্ষণ চালিয়েছি। দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প চীনের দক্ষিণ এবং উত্তরে বিস্তৃত। এর বিস্তৃত অঞ্চলের মধ্যে অধিকাংশই চীনা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। হো নান, হু পেই এবং শানতোংসহ অনেক জায়গা আগে সংস্কৃতি সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল। এসব অঞ্চলের নীচে মূল্যবান সম্পদ অনেক বেশি। এ প্রকল্পের আগে প্রত্নতত্ত্বের জরীপের মাধ্যমে অনেক সফলতা পাওয়া গেছে।

    সমালোচক এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুই পিং ফাং বলেন, গত দু'বছর ধরে চীনের প্রত্নতত্ত্ব মহলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্পের জন্য চালানো হয়। অনেক প্রদেশ ও শহরের প্রত্নতাত্বিক কর্মীরা একই প্রকল্পের জন্য সহযোগিতা চালিয়ে সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার ও খনন কাজ চালান। তাঁদের আবিষ্কার করা কিছু সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সাফল্যের সঙ্গে গত দু'বছরের "দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারের" তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন,

    দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প এবং ইয়াং জি নদীর তিন গিরিখাতসহ অনেক প্রকল্পের জন্য আমি কয়েক বছর ধরে প্রত্নতত্ত্ব ক্ষেত্রে কাজ করেছি। দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্প এত দীর্ঘ এবং অনেক অঞ্চলে বিস্তৃত বলে আমরা কয়েক হাজার বছর আগের পুরানো প্রস্তর যুগ থেকে এক বা দু'শ বছরের আগের অনেক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছি। তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সুযোগ না থাকলে আমাদের এসব সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের সুযোগ ছিল না।

    ২০০৮ সালের দশটি নতুন পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারের" অধিকাংশই অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ খননের মাধ্যমে আবিষ্কার করা হয়। (লিলি)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China