v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তে চীনের সামরিক পুলিশ বাহিনীর আনন্দদায়ক জীবনধারা
2009-04-07 20:50:52

ভোরে হো খৌ নদীর চেক পয়েন্টে অবস্থিত দু'দেশের সীমান্ত সেতু কুয়াশাচ্ছন্ন। সেতুর নীচে হোং হো নদীর স্রোত বইছে । চেক পয়েন্ট থেকে নদীর ঐ পারের ভিয়েতনামের দিকে তাকালে চোখে পড়লো অজস্র লোকের ভিড় । সংবাদদাতার পেছনে স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছিলো সৈনিকদের পায়ের শব্দ । তারা সামরিক চর্চা করছিলেন । এক দল সামরিক পুলিশ চেক পয়েন্টের ভবনের দিকে এগুচ্ছেন ।

পেইচিং সময় সকাল ৮টা বাজলো । এর এর পাশাপাশি জাতীয় সংগীতের সুরের তালে তালে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের ৫ তারকা খচিত লাল পতাকা উত্তোলন করা হলো ।

দিনের কাজ ও হৈচৈ শুরু হলো । লোকজন ঐ পার থেকে চেক পয়েন্টের দিকে ছুটে আসছেন ।

ভিয়েতনামী সীমান্তের অধিবাসীরা দূর থেকে চেক পয়েন্টের দিকে আসলেন । লোকজনের ভিড় ছিল । তাদের হাতে থলে , কাঁধে বোঝা এবং পিঠে ঝুড়ি । অজস্র সাইকেল , রিকশা ও ঠেলা গাড়ি হঠাত্ সংবাদদাতা ও চীনের লোকজনের সামনে হাজির হয় । সংবাদদাতা তত্ক্ষণাত্ ক্যামেরা দিয়ে এ দৃশ্যের ছবি তুললেন । লোজজনের ভিড় ও ব্যবসার জন্য এ মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করছে ।

এখন প্রতি বছর হো খৌ চেক পয়েন্টের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানির মূল্য ৮.৬ বিলিয়ন ইউয়ান এবং এ পয়েন্টের মধ্য দিয়ে গমনাগমনকারীদের সংখ্যা তেত্রিশ লাখ ষাট হাজারে দাঁড়িয়েছে । এ পরিসংখ্যান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । হো খৌ জেরার একজন কর্মকর্তা গৌরবের সঙ্গে বলেন , হো খৌ জেলায় যে এত লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে , তার মূলে রয়েছে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ । এর পাশাপাশি আমাদের অতীতও ভুলে যেতে হবে না।

লোকজনের ভিড় কমে যায় । লোকজন ও গাড়ির ভিড়ের পাশাপাশি সীমান্তে রক্ষীর দায়িত্ব পালনকারী চীনের সশস্ত্র পুলিশও দেখা যাচ্ছে । তারা হো খৌতে অবস্থিত দু'দেশের মৈত্রী সেতু পর্যবেক্ষণ করছেন । তাদের সীমান্ত চেক পয়েন্ট ও মৈত্রী সেতুকে খুব ভাল লাগে ।

সিয়াও ছি নামে একজন লম্বা ও অল্প বয়সী সৈনিক চেক পয়েন্টের মূল গেটের সামনে পাহারা দিচ্ছেন । তিনি চেক পয়েন্টের শৃংখলা রক্ষা করছেন । তিনি খুব আন্তরিক ও বিনয়ী । ভিয়েতনামী ভাষায় অতিথিদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাদের সুশৃংখল গমনাগমন পরিচালনা করছেন । কয়েক বছর আগে সীমান্ত চেক পয়েন্টে ভিয়েতনামী ভাষা ও ইংরেজী শেখার জন্য সেনানায়ক ও সৈনিকদের ব্যবস্থা করা হয় । ছি নামে সৈনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে ভর্তি হয়েছেন তিন বছর হলো । তিনি বলেন ,

চেক পয়েন্টে লোকজনের গমনাগমন ও ব্যবস্থা কার্যকর করার ব্যাপারে ভাষার কোনো সমস্যা তাঁর নেই । তিনি ভিয়েতনামীদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারেন । তিনি তাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে ভিয়েতনামের আচার ব্যবহার ও রীতি-নীতিও জানতে পারেন ।

তিনি বলেন , ভিয়েতনামী নাগরিক , ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের সঙ্গে বিনিময়ের সুবিধের জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে সেনানায়ক ও সৈনিকদের বিদেশী ভাষার মান উন্নত করা হয়েছে । এ ছাড়াও তাদের গমনাগমনের ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম কানুনও কার্যকর করা হয়েছে । এখন চেক পয়েন্টে প্রত্যেকের গমনাগমনে মাত্র ৪৫ সেকেন্ড লাগে । ৫০ জনেরও বেশি পর্যটক দলের জন্যও মাত্রদুই থেকে তিন মিনিটের প্রয়োজন ।

চেক পয়েন্টের অতীত ভুলে না যাওয়া এবং বর্তমান ক্ষেত্রে আরো বেশি জানতে পারার জন্য সীমান্ত পুলিশ বাহিনীর শিবিরে ইতিহাস ভিত্তিক একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । সীমান্ত চেক পয়েন্ট এলাকার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে দু'দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক উপকার বয়ে এনেছে । সৈনিক ছি সচক্ষে এ সব পরিবর্তন দেখেছেন ।

যখন তিনি সীমান্ত পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন , তখন তিনি ভিয়েতনামী ঠেলা গাড়িওয়ালার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন । আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তিনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন , তাদের মাসিক মাথাপিছু আয় মাত্রচীনের ৫ শ' ইউয়ানের মতো । পরে দু'দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিনিময় ও ব্যবসার মাধ্যমে তারা সচ্ছল হয়ে উঠেছেন ।

সিয়াও না চীনের সীমান্ত চেক পয়েন্টের একজন মহিলা সৈনিক । মুখে সব সময় হাসিখুশি হাজির । তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে ভিয়েতনামী নাগরিকদের পরিসেবা করেন । তিনি বলেন ,

২০০৭ সালের প্রথম দিকে চেক পয়েন্টের কর্তৃপক্ষ সৈনিকদের পরিসেবার কাজ উন্নত করার নির্দেশ দেয় । ফলে পয়েন্টের সকল সেনানায়ক ও সৈনিক ভিয়েতনামী নাগরিকদের পরিসেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছেন ।

তিনি বলেন , সীমান্ত চেক পয়েন্টের একজন সৈনিক হিসেবে তিনি দেশের ভাবমূর্তির প্রতিনিধিত্ব করেন । সুতরাং বিদেশী পর্যটকদের মনে চীনের সুন্দর আচার রেখাপাত করানো তাদের উচিত ।

আসলে বিনিময় ও পরিসেবার মাধ্যমে দু'দেশের নাগরিকদের বন্ধুত্বকে আরো গভীর করা যাবে । ভিয়েতনামী বন্ধু বান্ধবগণ চীনাদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে ইচ্ছুক । বেশ কিছু অল্প বয়সী ভিয়েতনামীরা ইংরেজীতেও কথাবার্তা বলতে পারেন । তারা বলেন , চীনা সৈনিকরা খুব আন্তরিক ও অতিথিপরায়ন । তিনি বলেন , বর্তমানে চীনের সীমান্ত চেক পয়েন্টের মাধ্যমে ভিয়েতনামী নাগরিকদের গমণাগমনের সংখ্যা ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে । দু'দেশের মধ্যে কৃষি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ বৈদ্যুতিক পণ্যও লেনদেন হচ্ছে ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China