v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়
2009-03-09 18:27:10
দক্ষিণ পূর্ব চীনের ফু চিয়েন প্রদেশে একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেখানকার পরিবেশ চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর বলে সুপরিচিত। এর পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিভাগ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষাদানের মানের সুনাম রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে ৮০ বছরেরও বেশি পুরোনো ঐতিহাসিক সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।

১৯২১ সালে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে চীনের ইতিহাসে প্রবাসী চীনাদের প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য উ তা গুয়াং বলেছেন, (১)

সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বিখ্যাত প্রবাসী চীনাদের নেতা ছেন চিয়া কেং প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সহজেই দেখা যাবে যে, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিমান ও মহাকাশ বিভাগ, যন্ত্র ও বিদ্যুত্ বিভাগ ও স্থাপত্যবিজ্ঞান বিভাগসহ অনেক বিভাগ গড়ে তোলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এ পর্যন্ত সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় দু'শো'রও বেশি বিভাগ থাকার এটি একটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এ যাব্য এক লাখ পঞ্চাশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এখানে স্নাতক হয়েছে।

তাছাড়া সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের প্রথম দফার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। গত শতাব্দীর ৫০ দশকে প্রবাসী চীনা ও চীনা বংশোদ্ভুত বিদেশীর জন্য শিক্ষাদানের কাজ শুরু হয়েছে। ১৯৮১ সালে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির কাজ চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় ১০ হাজার বিদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দু'হাজার। এসব ছাত্র-ছাত্রী ৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছে।

সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জান সেন লি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বর্তমানে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য ইংরেজী ভাষা শিক্ষাদানের আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর প্রকল্প চালু করেছে। তিনি বলেন, (২)

চলতি বছর এ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত অনুসারে এক শো' বিদেশী স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। এ প্রকল্পে আটটি বিভাগ রয়েছে। যেমন চীনের সংস্কৃতি, চীনের অর্থনীতি, চীনের আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জীবানুবাহী ও রাসায়নিক শিল্প।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল থেকে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় সৌদী আরবের বৃহত্তম তেল কোম্পানি---আরামকো তেল কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতা করে সৌদী আরবের ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দু'বছরের চীনা ভাষা কোর্স সম্পন্ন করার পর কৃষিসার, যন্ত্র ও বিদ্যুত্ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিভাগে লেখাপড়া করার বিষয় বাছাই করতে পারবে। ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও সৌদী আরব এ কোম্পানি পরিদর্শন করেছেন। এ কোম্পানির দু'জন স্টাফ চমত্কার চীনা ভাষা বলতে পারেন, প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও তা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ দু'জন ভাগ্যবান বলেছেন, আমরা সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মান উন্নত করার লক্ষ্যে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের কাজ জোরদার করেছেন। জান সিন লি বলেন, (৩)

বর্তমানে প্রতি বছর দু' এক দফায় শিক্ষকরা ব্রিটেন ও কানাডায় স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। যাতে শিক্ষকদের বিদেশী ভাষা শিক্ষাদানের যোগ্যতা উন্নত করা যায়। আরো বেশি শিক্ষক বিদেশে প্রশিক্ষণের পর ইংরেজী ভাষার ওপর ডক্টরেট ডিগ্রীর শিক্ষাদান করা হবে।

জানা গেছে, প্রতি বছর সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা ও বিবিধ ফি ১৮ হাজার ইউয়ান । স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীর ফি ২০ হাজার। ডক্টরেট ছাত্র-ছাত্রীর ফি ৩০ হাজার ইউয়ান। তাছাড়া, প্রতি বছর আবাসিক হল থাকার ফি প্রায় ১০ হাজার ইউয়ান। বিদেশে একই ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এ খরচ বেশি নয়।

ক্যাম্পাসে আমাদের সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অংগরাজ্যের ওরভিলে সিটি থেকে আসা বিদেশী ছাত্র ডেভিড সিলভেরার সাক্ষাত্কার নিয়েছে। তিনি বিদেশী ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের চীনা ভাষা বিভাগে ছয় মাসব্যাপী স্বল্পকালীন শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি বলেছেন, (৪)

সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় খুব সন্দর। এখানের পরিবেশ চমত্কার। আমি বিশ্বাস করি, এখানে লেখাপড়া করা ছাত্র-ছাত্রীদের দুঃখ করার কোন কারণ নেই। সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার দিনটি আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। চীন একটি দ্রুত উন্নয়নের বিশাল দেশ। এখানে লেখাপড়া করে আমি যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।

এ পর্যন্ত সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাপানসহ অনেক দেশ ও অঞ্চলের ১৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ও বিনিময় বিভাগের মহাপরিচালক মাও থোং ওয়েন বলেছেন, ২০০৪ সালে সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ কোরিয়ার ইনহা বিশ্ববিদ্যালয়,ফ্রান্সের লে হাভরে বিশ্ববিদ্যালয় , ইসরাইলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অষ্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে "গ্লোবাল ইউ-৭ কন্সোর্টিয়াস" নামক যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে আরো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এ চুক্তিতে স্বাক্ষর দিয়েছে।

মাও থোং ওয়েন বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ছাত্র-ছাত্রীর সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার জন্য স্বাগত জানাচ্ছি। সিয়া মেন বিশ্ববিদ্যালয়ও বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের সুষ্ঠু লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আরও অব্যাহত চেষ্টা করবে।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China