বৈশ্বিক আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য চীন ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের অর্থনীতি চাংগা করণ পরিকল্পনা এবং মোটর গাড়ি ও লৌহ-ইসপাতসহ দশটি শিল্পের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি পেশ করেছে । অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো ও নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার ৯৫০ বিলিয়ন ইউয়ান বাজেট ঘাটতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য চীন সরকার এ সব ব্যবস্থা নিয়েছে । এ সব ব্যবস্থা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা নয় , চীনের ভবিষ্যত উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ সব ব্যবস্থার সূদুরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে ।
৫ই মার্চ চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও তার সরকারের কর্মকান্ড সম্বলিত রিপোর্টে বলেছেন , এ বছর চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ বজায় রাখা হবে , শহরাঞ্চলে আরো ৯০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধান হবে , নাগরিকদের ভোক্তা মূল্য সূচক বৃদ্ধিহার ৪ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে । এ বছর চীন অর্থনীতির উন্নয়নকে সরকারের প্রধান কাজ হিসেবে নিয়েছে । অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করার ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো , বিশেষ করে ভোক্তাদের ব্যয় বাড়ানোকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয় । যারা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে বেশি পরিচিত , তারা জানেন, দীর্ঘ দিন ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহুলাংশে বিনিয়োগ ও রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল ছিল । দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল । অর্থনীতির প্রতি ভোক্তার ব্যয়ের ভূমিকা ৪০ শতাংশের নীচে ছিল , এক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনুপাত হল ৬০ শতাংশের বেশি ।
তাই দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর জন্য ভোক্তার ব্যয় বাড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত । চীনের অর্থনীতি চাংগাকরণ পরিকল্পনা ও কর হ্রাস করার মূল লক্ষ্যই নাগরিকদের আয় বাড়ানো এবং তাদের বোঝা লাঘব করা । এ সব ব্যবস্থার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগ ও রপ্তানির উপর চীনের অর্থনীতির নির্ভরশীলতা কমানো ।
গত ৩০ বছরে চীন সংস্কার নীতি কার্যকর করার মাধ্যমে অর্থনীতি ও সমাজের দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে । অর্থনীতির গড়পড়তা বার্ষিক বৃদ্ধিহার ৯ শতাংশের উপর ছিল । কিন্তু উন্নয়নের পথে কিছু সমস্যাও দেখা দেয় । এবারের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট চীনের অর্থনীতিতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে । চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কম কার্যকারিতা , শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্জলের উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা ও আয়ের বড় ব্যবধানসহ বিভিন্ন সমস্যা আর্থিক সংকটে প্রভাবে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে ।
কিছু দিন আগে চীন সরকার দশটি শিল্পের উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি পরিকল্পনা পেশ করেছে । এ দশটি শিল্পের মধ্যে যেমনি লৌহ-ইসপাত , পেট্রো-রসায়ন ও অলৌহ ধাতুসহ ঐতিহ্যিক শিল্প রয়েছে , তেমনি রয়েছে বৈদ্যুতিক তথ্য শিল্প ও আধুনিক পন্য সরবরাহের মতো নতুন শিল্প । এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্য আর্থিক সংকট মোকাবেলা ছাড়া অর্থনীতির কাঠামো আরো শক্তিশালী করা ।
আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা , গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণ এবং নাগরিকদের আয় বাড়ানো ক্ষেত্রেও সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে । কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের বাজেটে ৯৫০ বিলিয়নের ঘাটতির কিছু অংশও এ সব কাজে ব্যয় করা হবে ।
বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রভাবে অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত এবং সামাজিক উন্নয়নের জরুরী সমস্যা সমাধানের জন্য চীন সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । তবে সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে দেখতে গেলে এ সব ব্যবস্থার কল্যানে নাগরিকদের থাকা , চিকিত্সা , কর্মসংস্থান ও অবসর পরবর্তী জীবনের নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সমস্যা আগের চেয়ে কম হবে , তাদের ব্যাংকের টাকা খরচ করার সাহস আগের চেয়ে বাড়বে । গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ফলে তাদের বাজারের জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য বাড়বে । তাই চীন সরকারের নেয়া ব্যবস্থাগুলো বাহ্যতঃ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন , তবে সার্বিকভাবে উপর বলতে গেলে এ সব ব্যবস্থা চীনের শহর ও গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের ভারসাম্যহীনতা কমানো এবং চীনের অর্থনীতি ও সমাজের টেকসই উন্নয়ন তরান্বিত করবে । এ সব ব্যবস্থা জরুরী সমস্যা নিষ্পত্তির পাশাপাশি স্থায়ী ভূমিকাও পালন করতে থাকবে ।
|