৫ই মার্চ চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন পেইচিংয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অধিবেশনে সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কিত একটি রির্পোট পেশ করেছেন । তিনি তার রিপোর্টে দেশবিদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করাকে এ বছর সরকারের প্রধান কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন । প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও তার রিপোর্টে বলেন , চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মৌলিক অবস্থা ও প্রবণতা পরিবর্তিত হয় নি । অসুবিধা কাটিয়ে উঠে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী ।
গত বছর চীন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে লক্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে । বৈশ্বিক আর্থিক মন্দাভাব ও সি ছুয়ান প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও চীন অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে । গত বছর চীনের জি ডি পির মোট মূল্য তিন শ' কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে , এটা তার আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি । তা ছাড়াও চীন সরকার ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে । গত বছরের দ্বিতীয়ার্থে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট মোকাবিলার জন্য চীন সরকার সময়মত অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয় । চীন সক্রিয় আর্থিক নীতি ও শিথিল মুদ্রা নীতি কার্যকর করে ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের অর্থনীতি চাংগা করন পরিকল্পনা পেশ করেছে । এ সব ব্যবস্থা থেকে চীন সরকারের আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে । এ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা থেকেও সরকারের আস্থার প্রমান মেলে । বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের অর্থনৈতিক মন্দাভাবের পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার এ বছর অর্থনীতির আট শতাংশের উন্নয়ন লক্ষ্য পেশ করেছে । প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেন , উন্নয়নের চাহিদা ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে চীন সরকার ৮ শতাংশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পেশ করেছে । চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ , চীনের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি । চীনের মতো একটি বড় দেশে নাগরিকদের কর্মসংস্থান , আয় বৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অর্থনীতির অপেক্ষাকৃত দ্রুত উন্নয়ন বজায় রাখা প্রয়োজন । আমরা বিশ্বাস করি , আমাদের নীতি ও ব্যবস্থা উপযুক্ত হলে এ লক্ষ্যের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে ।
বর্তমান কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতির ৮ শতাংশ উন্নয়ন বাস্তবায়ন সহজ ব্যাপার নয় । এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেন , এ বছর হবে একাদশ পাঁচ শালা পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ বছর এবং নতুন শতাব্দীতে প্রবেশের পর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে কষ্টকর একটি বছর হবে । চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করেছে যে অর্থনীতির অপেক্ষাকৃত উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য সরকারী ব্যয়- বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । এ বছর সরকারের ব্যয়- বরাদ্দ বিপুল পরিমান বাড়ানো হবে । এটা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর একটি সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা । এ বছর প্রধান প্রধান ক্ষেত্রের ব্যয় বরাদ্দ নিশ্চিত হয়েছে , বরাদ্দের মোট পরিমান ৯ শ' বিলিয়ন ইউয়ান হবে । তা ছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের বোঝা লাঘবের জন্য সরকার কর হ্রাসসহ নানান ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে তাদের ৫ শ' বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
বিপুল পরিমানের ব্যয় বরাদ্দ ও কর হ্রাসের কারণে চীনের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘাটতি দেখা দেবে । সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কিত রিপোর্টে বলা হয়েছে , এ বছর কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে ৭৫০ বিলিয়ন ইউয়ানের ঘাটতি দেখা দেবে , এটা গত বছরের চেয়ে ৫৭০ বিলিয়ন ইউয়ান বেশি । প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেন , আর্থিক ঘাটতির পরিমান বেশি হলেও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও তার সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কিত রিপোর্টে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন । তিনি বলেন , সংকটের সময় দেশের জনগণের জীবন মানের ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত । চীন সরকার আরো সক্রিয় কর্মসংস্থান নীতি কার্যকর করবে ,কৃষক –শ্রকিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাবে , সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা আরো যুক্তিযুক্ত ও পরিপূর্ণ করবে এবং শিক্ষা ও চিকিত্সাসহ অধিবাসীদের বাস্তব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানের জোর চেষ্টা চালাবে ।
অধিবেশন চলাকালে চীনের বিভিন্ন স্থান ও কর্মক্ষেত্র থেকে আসা প্রতিনিধিরা সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কিত রিপোর্ট পর্যালোচনা করবেন এবং চীনের উন্নয়নের মূলনীতি নির্ধারণ করবেন ।
|