চীনের একাদশতম জাতীয় গণ কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন ৫ই মার্চ পেইচিংয়ে উদ্বোধন করা হবে । চৌঠা মার্চ সকালে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের মুখপাত্র লি চাও সিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় ও প্রস্তুতি সম্পর্কে দেশবিদেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ।
মুখপাত্র লি চাও সিন বলেন , এ বছরের বার্ষিক অধিবেশন সাড়ে আট দিন স্থায়ী হবে । অধিবেশনে সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কিত রির্পোট , অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার রির্পোট ও বাজেট রির্পোট পর্যালোচনা ও অনুমোদন করা হবে এবং জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির কর্ম রির্পোট পর্যালোচনা করা হবে ।
বর্তমান বার্ষিক অধিবেশন বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে । বিশ্ব আর্থিক সংকট চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে । অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন বজায় রাখার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চীন সরকার চার ট্রিলিয়ন ইউয়ানের অর্থনীতি চাংগা করার একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে । একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন , এ পরিকল্পনা কি জাতীয় গণ কংগ্রেস বা গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির অনুমোদন দরকার ? অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাদ দেয়ার জন্য জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি কিভাবে তত্ত্বাবধানের ভূমিকা পালন করবে ? এ প্রশ্নের উত্তরে লি চাও সিন বলেন , চার ট্রিলিয়ন ইউয়ানের মূল্যের কেন্দ্রীয় সরকার দু' বছরের মধ্যে ১.১৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করবে , বাকি অর্থ স্থানীয় সরকার বরাদ্দ করবে । কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং অনুমোদনের জন্য জাতীয় গণ কংগ্রেসের কাছে পেশ করা হবে । চীনের একাদশ জাতীয় গণ কংগ্রেসের ৫ই মার্চের দ্বিতীয় অধিবেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ২০০৯ সালের জাতীয় আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা । এ বছর জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি অর্থনীতির উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটের কার্যকর তত্ত্বাবধানের কাজ জোরদার করবে ।
লি চাও সিন আরো বলেন , চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সংস্থা ও আইন প্রনয়ন সংস্থা হিসেবে জাতীয় গণ কংগ্রেস বিজ্ঞানসম্মতভাবে ও গণতন্ত্রের ভিত্তিতে আইন প্রনয়নে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে । এ বছরের জানুয়ারী মাসের শেষ নাগাদ চীনে মোট ২৩১টি আইন কার্যকর করা হয় । চীনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক আইন ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । প্রশাসনিক ক্ষমতার ওপর তত্ত্বাবধান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে ।
লি চাও সিন মনে করেন , চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারেও লক্ষনীয় অগ্রগতি হয়েছে । এ ধরনের সংস্কার চীনের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে খাপ খায় এবং চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে সক্ষম । তিনি বলেন , আমাদের ধারণা , গণতন্ত্র ছাড়া সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ বাস্তবায়ন কার্যকর করা সম্ভব হবে না । তবে আমরা পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদদের কাংখিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করি নি , আমরা চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রিক ব্যবস্থা আরো যুক্তিযুক্ত ও নিখুঁত করার চেষ্টা করছি।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন , বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে অন্যান্য দেশের জন্য চীনের সাহায্য কি আগের চেয়ে কম হবে ? মুখপাত্র লি চাও সিন বলেন , বৈশ্বিক আর্থিক সংকট উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে । এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সংহতি ও সহযোগিতাকে চীন আগের চেয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে । তিনি বলেন , চীনে একটি প্রবাদ রয়েছে , অসুবিধার সময়েন বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু । চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি সাহায্য কমিয়ে দেয় নি এবং তাদের সঙ্গে সহযোগিতাও কমাবে না , বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাধ্যমতো সাহায্য দেবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অব্যাহতভাবে কার্যকর করবে ।
লি চাও সিন আরো বলেন , এ বছর জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনও তথ্য মাধ্যমগুলোর জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে । অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে । এ সব সাংবাদিক সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বৈশ্বিক আর্থিক সংকট , অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়ন , চীনের পররাষ্ট্র নীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক সম্বন্ধে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন । অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও দেশবিদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন । |