v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
মা'র লেখা প্রেমপত্র
2009-02-24 21:56:14
    যখন ছেলে ইউরেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজের প্রান শেষ করতে চাচ্ছিল তখন মা ছেলের সহপাঠিনীর ছদ্মবেশে একটার পর একটা প্রেম-চিঠি লিখে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ।মা চিঠিগুলোতে কি লিখেছেন আর ছেলে চিঠিগুলো পড়ে জীবিত থাকার সাহস পেয়েছে কি এবং মায়ের উদ্দেশ্য জেনে ছেলে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ?

    সিয়ে মোমেইর বয়স ৫৩ বছর , এক ছোট দোকান খুলে উপার্জন করে সংসার চালান । ধনী না হলেও তারা শান্তিতে ও আনন্দে জীবনযাপন করে দিন কাটান । হঠাত ১৯৯৯ সালের শরত্কালে এক ঘটনা ঘটে,যার ফলে তাদের শান্তি আর সুখের জীবন চুর্নবিচুর্ন হয় । তার বড় ছেলে মা সিছেংয়ের একটানা ভীষণ জ্বর হয় এবং পরীক্ষায় জানা যায় সে ইউরেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ।নিষ্ঠুর বাস্তবতার সম্মুখীন ছেলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে ।

    ইউরেমিয়া রোগটি চিকিত্সা করার জন্যে যে খরচ লাগবে তা সিয়ে মোমেইর পরিবারের জন্যে এক অকল্পনীয় অংক ।ছেলেকে বাঁচানোরজন্যে তিনি বাড়িঘর বন্ধক দেন এবং পরিবারের সব দামী জিনিস বিক্রি করেন । কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি যে , যখন তিনি ছেলেকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা চালান তখন তিনি উপলব্ধি করেন , ছেলে স্বেচ্ছায়প্রান ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ।মার অশ্রু আর তাগাদার সামনে ছেলে নিজের সিদ্ধান্তের সামান্য পরিবর্তন করতে চায় না । ছেলে মাকে বলল, মা আমি আর বাচতে চাই না , যদি আপনাদের জন্য বাঁচব , আমি শুধু অপনাদের বোঝা হয়ে থাকতে পারি । আমার কোনো আশা আর থাকবে না ,কিন্তু এ জীবনে আমার সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হল , আমি কখনো প্রেমালাপ করিনি ।

    ছেলের কথা শুনে মা বুঝেছেন , ছেলের মনের এই কথা তার জীবিত থাকার আশা। যদি এ সময়ে ছেলের পছন্দনীয় এক মেয়ে উপস্থিত হয় তাহলে ছেলে বাঁচবে। এসময়ে মার মনে ভেসে আসে এক মেয়ের সুন্দর চেহারা -ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সহপাঠিনী লিন সিয়াওচিয়ে। কিন্তুমেয়েটি বাইরে কাজ করতে গেছে, যোগাযোগের ঠিকানা নেই । ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে মা লিন সিয়াওচিয়ের নামে ছেলেকে চিঠি লেখার এক অসাধারন সিদ্ধান্ত নেন ।

    লিন সিয়াওচিয়ের নামে প্রথম চিঠিতে মা লিখেছেন ,তোমার খবর পেয়ে আমি খুশী হয়েছি , কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়েছ শুনে আমি খুব চিন্তিত, মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে আমি এখন তোমাকে দেখতে যেতে পারি না , যখন মা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বের হবেন তখন আমি তোমাকে দেখতে যাব। কিছুন দিন পর ছেলে লিন সিয়াওচিয়ের প্রথম চিঠি পেলো ,চিঠি পেয়ে ছেলে বিস্মিত হয়, কে তাকে চিঠি লিখতে পারে ?চিঠি পড়ে ছেলে জানল এটা তার সহপাঠিনীর লেখা চিঠি ,ছেলে বারবার চিঠিটা পড়ে । ছেলের মনটা অনেক ভাল হয় এবং মাকে বলে , আমি সহযোগিতা করব, আমি চিকিত্সা গ্রহন করব ।

    ছেলে সিয়াওচিয়ের চিঠির উত্তর দেয় । মা ছেলের জন্যে চিঠি পাঠানোর ভান করেন এবং দ্বিতীয় চিঠিতে কি লিখবেন ভাবতে শুরু করেন । মা ভাবলেন, এক সহজ মেয়ে নিজের পছন্দসই লোক গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে চিন্তিত হওয়া তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত । তাই দ্বিতীয় চিঠিতে মা লিখেছেন , তোমার রোগের জন্য আমি এত চিন্তিত ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম । যদি মার অসুখ না হত তাহলে আমি এখুনি তোমার বাসায় যেতাম । তোমার এই রোগ চিকিত্সাকরা যায় ,এ দৃঢসংকল্প তোমার থাকতে হবে । যেদিন আমার মা হাসপাতাল থেকে বেরুবেন ,সেদিন তোমাকে দেখতে যাব আমি ।

    'মেয়েটি ' চিঠিতে লিখেছে , এখন সবসময় তোমার কথা আমার মনে পড়ে । রান্নার সময়ে আমি ভাবতে পারি ,তোমার সবচেয়ে পছন্দের তরকারি কি ? যাওয়ার সময়ে আমি ভাবতে পারি এখন তুমি কী করছ ?মার পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে নিয়মিতভাবে 'মেয়েটির ' সঙ্গে চিঠি বিনিময় করে ।মায়ের চিঠিতে ছেলে যেনো সত্যি প্রেমের অনুভূতি পেলো । মায়ের চিঠিতে ছেলে পুনরায় জীবনের আশা দেখতে পায় ।

    কিন্তু হঠাত অপারেশনের ক'দিন আগে ছেলের মেজাজের পরিবর্তন হয়, আগের মতো খুশী নয় ,মাঝেমাঝে একা স্তব্ধ হয়ে ঘরে বসে এবং যেনো মনেমনে কি সিদ্ধানত নিচ্ছে ।সিয়াওচিকে পাঠানো চিঠিতে মা কারণটা জানলেন ।নিজের রোগ চিকিত্সার জন্যে বিরাট খরচ হবে, লিন সিয়াওচিয়ের মতো শ্রেষ্ঠ মেয়ে যদি নিজের সংগে প্রেম করে তাহলে সে বেশী দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে ,কথাটা ভেবে ছেলে চিঠিতে নরমভাবে সিয়াওচিয়ের প্রেম প্রত্যাখ্যান করে এবং পরে আর চিঠি না লেখার কথা ব্যক্ত করে ।ছেলের হতাশা মাকে অসুবিধার অবস্থায় ফেলে । কি করব ? অনেক ভেবে চিন্তেতিনি সিয়াওচিয়ের নামে ছেলেকে আর-একটা চিঠিতে লিখেছেন , সিছেং , রোগের কারণে তুমি আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়া বেছে নিয়েছো, আমি বুঝতে পারি বটে, কিন্তু এটা আমাকে কত দুঃখ দেবে তুমি জানো ? তুমি জানো না ,এটা আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে এবং আমার জীবনে অন্ধকার ডেকে আনবে ।তুমি আশ্চর্যহতে পারবে , কারণ তুমি বুঝতে পার না যতই কষ্ট আর অসুবিধা থাকনা কেন তোমার পাশে থাকলেই কেবল আমি সুখী হতে পারি। চিঠিটা পড়ে ছেলের মেজাজ ভাল হল এবং অপারেশনের প্রস্তুতির অপেক্ষায় রইল।

    মার শেষ চিঠিতে ছেলে টের পেলো চিঠিগুলো লিন সিয়াওচিয়ের লেখা নয়। কারণ কাছের লোক না হলে তার বিস্তারিত অবস্থা সিয়াওচিয়ে কিভাবে জানতে পারে ?এ মিথ্যার আঘাত সিছেং সহ্য করতে পারে না বলে সে চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে ছিড়ে দিল ।সেই রাতে মা ও ছেলে কারোইভাল ঘুম হয়নি । দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে ছেলে মাকে বলল, মা , আমাকে ক্ষমা করুন , আমি ভুল বুঝেছি , আমি জানি , আমার জন্যেই আপনি এসব করেছেন ।এখন আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন , আমি আর বোকামি করব না , আমি ভালভাবে চিকিত্সা গ্রহন করব।

    ছেলের অপারেশন অত্যন্ত সাফল্যমন্ডিত হয়েছে ।কিস্তু সে জানে ,তার শারিরিক অবস্থার কারণে সে সম্ভবত কোনো ইউনিটে চাকরি পাবে না । সে এক ছুংছিং হোকো তিয়েন খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং হোকো তৈরির কৌশল শিখতে শুরু করেছে।

    মা ও ছেলের এ গল্প সংবাদমাধ্যমে কল্যানে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।সঙ্গেসঙ্গে অজস্র চিঠি মা ও ছেলের কাছে আসে , এর মধ্যে লিউছিন নামে এক মেয়ের চিঠি , চিঠিতে লিউছিন ছেলে সিছিংয়ের কাছে তার ভালবাসার কথা ব্যক্ত করে । এখন ছেলে সিছিং তাকে পছন্দসই সুন্দরী মেয়ে-বন্ধুহিসেবে পেয়েছে এবং শিগ্গিরই তার হোকো তিয়েন রেস্তরাঁ খোলা হবে । এখন সে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China