v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
হৌ ল্য গ্রামের সমৃদ্ধি হওয়ার পথ
2009-02-24 15:58:28

চীনের চেচিয়াং প্রদেশের ই উ শহরের আর সি সান লি এলাকার হৌ ল্য গ্রামটি ত্রিশ বছর আগে খুব দরিদ্র গ্রাম ছিল । এখন দশ কোটি ইউয়ানের গ্রাম নামে পরিচিত এই গ্রামটি বিখ্যাত শিল্পপ্রধান গ্রামে পরিণত হয়েছে । গ্রামে মাত্র ২৬২টি পরিবারের মধ্যে ৬০শতাংশ পরিবার ব্যবসা করছে ।

৫৬ বছর বয়সী ছেন ফুছাং হৌ ল্য গ্রামের চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির শাখা কমিটির সম্পাদক । তিনিই গ্রামকে সমৃদ্ধিশালি হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়েছেন । তিনি গ্রামে বৃহত্তম পোশাক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা চালাচ্ছেন । এই কারখানর বার্ষিক উত্পাদনমূল্য ৫ কোটি রেনমিনপি । ছেন ফুছাং গৌরবের সঙ্গে হৌ ল্য গ্রামের কথা বর্ণনা করে বলেন, নব্বইর দশকের মাঝামাঝি সময়েই আমাদের এ গ্রাম কোটি ইউয়ানের গ্রামে পরিণত হয়েছে । আমাদের গ্রামবাসীরা পরিশ্রমের মাধ্যমে সমৃদ্ধিশালী হতে পেরেছেন । আমার নিজের কথাই ধরা যাক । বিশ-বাইশ বছর পরিশ্রমের পর আমার এ কারখানার বার্ষিক উত্পাদনমূল্য ৫ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে ।বছরে আমি সরকারকে ২০ লাখ ইউযানেরও বেশি কর দেই ।

হৌ ল্য গ্রামে মাত্র ২৬২টি পরিবার ৯৫৩জন অধিবাসী রয়েছেন । তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি লোক ব্যবসা করছেন । বলা যায় , হৌ ল্য গ্রামে শুধু জমি চাষ করার ওপর নির্ভর করে সংসার চালান এমন লোক নেই ।হৌ ল্য গ্রামে প্রবেশ করলে সর্বপ্রথমে চোখে পড়বে প্রশস্ত ও সমতল রাস্তা ,একটার পর একটা দো-তলা বা তিন তলা বাড়ি । এ গ্রামের অনেকেই এখন"bmw" বা "benz "গাড়ি চালান ।

হৌ ল্য গ্রামের ইতিহাস থেকে বোঝা যায় যে,এ গ্রাম আগে ধনী গ্রাম ছিল না । গ্রামের এক পরিসংখ্যান তালিকা থেকে জানা গেছে , ১৯৮৩ সাল আগে গ্রামের মাথাপিছু আয় ১০০ ইউয়ানের চেয়ে কম ছিল । ছেন ফুছাং জানান, দারিদ্র্যের কারণে গ্রামবাসীরা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসার কাজ শুরু করেন ।

হৌ ল্য গ্রামের ধনী হওয়ার কথা বলতে গেলে "মুর্গির লোমের বিনিময়ে মিষ্টি"এ কথা বলা দরকার ।তথাকথিত "মুর্গির লোমের বিনিময়ে মিষ্টি"এর অর্থ হল, আখের গুড় দিয়ে মুর্গির লোম যা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় তা বিনিময় করা । আগে গ্রামের প্রায় সকল বয়স্ক পুরুষ অবসর সময়ে বাইরে গিয়ে আখের গুঁড় দিয়ে মুর্র্গির লোম বিনিময় করতেন ।৬০ বছর বয়সী ছেন হোংছাই সেই কঠিন সময় অতিক্রম করেছিলেন । ফেরিওয়ালা হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আখের গুঁড় দিয়ে মুর্গির লোম বিনিময় করার দৃশ্য এখনো বারবার তার চোখের সামনে ভেসে আসে । তিনি বলেন, আমাদের জমি অনুর্বর ছিল । রাসায়নিক সার ছিল না বলে আমরা জমি পরিবর্তনের জন্য মুর্গির লোম ব্যবহার করতাম । ০.১৬৫ একর জমিতে প্রায় ৫০ কেজি মুর্গির লোম দরকার । কিন্তু প্রতি বছর প্রতিটি কৃষক পরিবার মাত্র দু-একটা মুর্গি জবাই করত বলে মুর্গির লোমের পরিমান যথেষ্ট ছিল না । তাই সে সময় কৃষকরা বাইরে গিয়ে আখের গুঁড় দিয়ে মুর্গির লোম বিনিময় করতেন ।

আখের গুঁড় দিয়ে মুর্গির লোম বিনিময় করার ঐতিহ্য হৌ ল্য গ্রামে শতশত বছর ধরে প্রচলিত ছিল । কিন্তু গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে । "আখের গুঁড়ের বিনিময়ে মুর্গির লোম" হৌ ল্য গ্রামের অধিবাসীদের জন্য ব্যবসা চালানোর পথ সুগম করেছে । এসম্পর্কে ছেন হোংছাই স্মরণ করে বলেন, প্রথম দিকে গ্রামবাসীরা আখের গুঁড়ের বিনিময়ে মুর্গির লোমকে সার হিসেবে ব্যবহার করত ।১৯৫৮ সালের পর আমাদের পালকের ডাস্টার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । " আখের গুঁড়ের বিনিময়ে মুর্গির লোম " মুনাফা লাভ করতে সক্ষম হয় । আমরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে " আখের গুঁড় দিয়ে মুর্গির লোম বিনিময় করার " মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কিত অনেক তথ্য পেতাম । এর পর আমরা আখের গুঁড় দিয়ে শুধু মুর্গির লোম বিনিময় করি তা নয় আমাদের ই উ শহরে যে নিত্যব্যবহার্য ছোট ছোট পণ্যদ্রব্যের অভাব ছিল তা বিনিময়ও শুরু করি এবং গ্রামেগ্রামে ঘুরে তা বিক্রি করি । যে খানে যাই সেখানেই আমরা সমাদর পাই ।

বিংশশতাব্দীর আশির দশকের শুরুতে হৌ লোগ্রামে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হয় । ১৯৮৩ সালে ই উ শহরের গণ সরকার কৃষককে ব্যবসা করতে,দীর্ঘব্যবধানে কেনা-বেচা করতে,শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাজার উন্মুক্ত করতে এবং নানা ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি অনুমোদন করেছে । এ বছরে ই উতে ক্ষুদ্র পণ্যদ্রব্যের প্রথমটি সরকারী বাজার খোলা হয়েছে । ছেন ফুছাংয়ের ভাগ্যও পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায় ।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সারা দেশে ই উ শহরের ক্ষুদ্র পণ্যদ্রব্য বাজারের স্থান প্রথম । এর পাশাপাশি ছেন ফুছাংয়ের ব্যবসাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে । নব্বইয়ের দশকে তিনি সরকারের পরিচালনায় কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে পোশাক প্রক্রিযাকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন । কারখানা পেছনের অংশে পোশাক প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে আর সামনের দোকানে নিজের কারখানায় তৈরী পোশাক বিক্রি করেন । ছেন ফুছাংয়ের পোশাক প্রক্রিয়াকরণ কারখানা দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে ।

কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ,সম্প্রসারিত হয়েছে এবং গ্রামবাসীরা ধনী হতে শুরু করেছেন । এ সময় ছেন ফুছাং নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেন । গ্রামের প্রতিটি কারখানা তিন-চারটি বাড়িঘর নিয়ে গঠিত । কারখানাগুলোর ঘনত্ব গ্রামবাসীদের দৈনদিন জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং কারখানার উন্নয়নকে সীমিতকরণ করেছে । এটা পরিচালনা কাজের পক্ষে অনেক নেতিবাচক । সুতরাং ছেন ফুছাং গ্রামবাসী কমিটির চেয়ারম্যান ছেন চিউইয়ুনের সঙ্গে গ্রামে শিল্প উদ্যান প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । এ সম্পর্কে স্মরণ করে ছেন চিউইয়ুন বলেন, আমাদের গ্রামে ষাটেরও বেশি পরিবারের নিজেদের কারখানা আছে । গ্রামে প্রবেশ করলে একটার পর একটা ক্ষুদ্র কারখানা দেখা যায় । কারখানার ঘনঘন বিন্যাস গ্রামবাসীদের ওপর কিছু প্রভাব ফেলেছে । স্থানীয় সরকারের সমর্থনে আমরা ২ হেক্টর জমিতে গ্রামীণ শিল্প উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেছি । গ্রামের অনেক কারখানা শিল্প উদ্যানে স্থানান্তর হয়েছে । এখন ই উ শহরে শিল্প উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । সব ক্ষুদ্রাকার কারখানা এখন সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে । সরকারের সমর্থন ছাড়া আমাদের কারখানার উন্নয়ন কখনই এত দ্রুত হত না ।

ভাল নীতি ও সরকারের সমর্থন থাকায় হৌ ল্য গ্রামবাসীদের ব্যবসা ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়েছে । তারা প্রধানতঃ পোশাক, স্টেশনারী মাল ও হস্তশিল্প প্রক্রিয়াকরণের কাজ করেন । হৌ ল্য গ্রাম আজ সত্যিই " কোটি ইউয়ানের গ্রামে পরিণত হয়েছে । ছেন ফুছাংয়ের নেতৃত্বে হৌ ল্য গ্রাম স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমৃদ্ধিশালী হওয়ার পথে পদার্পন করেছে । কিন্তু তারপরও তারা এতে সন্তুষ্ট নন । নতুন এবং আরও আধুনিক গ্রাম নির্মাণে তারা নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China