v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
থাং শু পেইয়ের তাইওয়ানের প্রীতি
2009-02-20 20:42:10

    যারা তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্কের উপর দৃষ্টি রাখছেন তারা অবশ্যই থাং শু পেই এই নাম ভুলে যাবেন না। রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিচালক, তাইওয়ান প্রণালীয় দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতির উপ-সভাপতি হিসেবে থাং শু পেই যেমন দু'পারের সম্পর্কের সবচেয়ে ভালো ক্ষণ স্বচক্ষে দেখেছেন, তেমনি দু'পারের সম্পর্কের অস্থিতিশীলতা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি দু'পারের বিনিময় ও সংলাপের প্রথম ফ্রন্টে দাঁড়ান এবং এই ইতিহাসের অংশগ্রহণকারী।

    থাং শু পেই শাংহাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বার্তা সংস্থার সাংবাদিক এবং রেডিও ও বেতারের সম্পাদক ছিলেন। তিনি দশ'টিরও বছরের কূটনীতিবিদের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। জাপানে এবং যুক্তরাষ্ট্রে চীনের দূতাবাসে তিনি কাজ করেছেন। তখন থাং শু পেই মনে করছিলেন না যে, ভবিষ্যতে নিজের জীবন তাইওয়ানের সঙ্গে অনেক সম্পর্ক রয়েছে।

    এখন আগেকার ঘটনা স্মৃতি করে থাং শু পেই আবিষ্কার করেছেন যে, জাপানে চীনের দূতাবাসের কানসুলেটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের সময় তাইওয়ানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তখনই শুরু হয়েছে। ১৯৭৮ সালে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ জনগণকে মুল-ভূভাগে আত্মীয়দের সঙ্গে মিলনকামী জনতা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাইওয়ানের স্বদেশবাসীরা জাপানে সাহায্য প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়। মুল-ভূভাগের আত্মীয়দের সঙ্গে মিলনকামী জনতা করার জন্য তারা জাপানে চীনের দূতাবাসের প্রতি আইডি আবেদন করার অনুরোধ জানায়। থাং শু পেই বলেন,

    তখন তাইওয়ানী জনগণ মুল-ভূভাগের আত্মীয়দের সঙ্গে মিলনকামী জনতা করার জন্য ঝুঁকি নিতে হবে। তাঁরা আইডি আবেদন জন্য জাপানে চীনের দূতাবাসে এসেছে। আমরা তাদের জন্য গোপনে আইডি করতাম।

    ১০ বছরের পর তাইওয়ানের সঙ্গে থাং শু পেইয়ের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের মহা-পরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। তাইওয়ান সম্পর্কিত সকল সমস্যা মোকাবিলা করা ছিল তাঁর দায়িত্ব। এক বছরের পর থাং শু পেই রাষ্ট্রীয় পরিষদের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

    তখন দু'পারের ৩০ বছরের অন্তরণ খুলতে শুরু হয়। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ সৈন্যদেরকে মুল-ভূভাগে আত্মীয়দের সঙ্গে মিলনকামী জনতা করার অনুমতি দিয়েছে। দু'পারের বিনিময় নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এর পাশাপাশি দু'পারের বেসরকারী বিনিময়ও দিন দিন ঘন ঘন হচ্ছে। তাই দু'পারে মনে করে, বেশ কয়েক সমস্যা নিয়ে সংলাপ করতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তাইওয়ান ও মুলভূভাগ পৃথক পৃথকভাবে কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি পাওয়া বেসরকারী এজেন্সি সংস্থা, অর্থাত্ তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিনিময় বিষয়ক তহবিল প্রতিষ্ঠান এবং তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতি স্থাপন করেছে। এ দু'টি সংস্থার দায়িত্ব হলো পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করা এবং কর্তৃপক্ষের জন্য কিছু অসুবিধাজনক সমস্যা মোকাবিলা করা। ১৯৯২ সালে তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। থাং শু পেই এই সমিতির স্থানীয় উপ-সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দু'পারের সংলাপের প্রথম ফ্রন্টে দাঁড়িয়ে শুরু করেন।

    থাং শু পেই বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতি প্রতিষ্ঠার শুরুতে তিনি প্রতিদিন একটি সমস্যার কথা বিবেচনা করেন। দু'পারের মধ্যে যোগাযোগ ও আলোচনা করার জন্য প্রথমে তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিনিময় বিষয়ক তহবিল প্রতিষ্ঠান এবং তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতি এ দ'টি সংস্থার কী কী ধরণের ভিত্তিতে সংলাপ করা যায়? মু-ভূভাগের মতামত এই যে, মুল-ভূভাগ এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। তাই দু'পারের মধ্যে আলোচনা করার জন্য অবশ্যই একচীন নীতিতে অবিচল থাকতে হবে। কিন্তু থাং শু পেই এই ধারণা উত্থাপন করার সময় তাইওয়ান তার অস্বীকার করে। থাং শু পেই অবাক হয়ে গেছেন। তিনি বলেন,

    তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। আমি মনে করছিলাম যে, তাইওয়ান বারবার একচীন নীতির কথা ঘোষণা করে। কিন্তু তারা কেন আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নি?

    পরে তাইওয়ান জবাব দিয়েছে যে, তাদের মুল-ভুভাগের প্রস্তাব অস্বীকার করার কারণ ছিলো, তারা মনে করে, এ দু'টি সংস্থার আলোচনা শুধুমাত্র বেসরকারী আলোচনা, রাজনৈতিক সমস্যা নয়। এই উত্তর প্রসঙ্গে থাং শু পেই বলেন,  

    এটা রাজনৈতিক সমস্যা নয়, কিন্তু তা হচ্ছে আমাদের এ দু'টি সংস্থার কাজ চালানোর ভিত্তি।

    তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ ১৯৯২ সালের পয়লা আগষ্ট মাসে একচীনের অর্থ ব্যাখ্যা করে। তারা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছে, তাইওয়ান প্রণালীর দু'পার উভয়েই একচীন নীতিতে অবিচল থাকে। কিন্তু "একচীন" প্রসঙ্গে দু'পারের অর্থ একটু ভিন্ন। তাইওয়ান চীনের একটি অংশ, মুল-ভূভাগও চীনের একটি অংশ। তাইওয়ানের এ কথা শুনে থাং শু পেই নিশাস ফেলেছেন। তিনি বলেন,

    তখন আমরা তাইওয়ানের কথা শুনে মনে করছিলাম যে, তাদের এ কথা যথেষ্ট।

    এরপর তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিনিময় বিষয়ক তহবিল প্রতিষ্ঠান এবং তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের সম্পর্ক বিষয়ক সমিতি পৃথক পৃথকভাবে মৌখিক পদ্ধিতে দু'পারের একচীন নীতিতে অবিচল থাকার মতৈক্য পৌঁছেছে। তা হচ্ছে "৯২ সালের মতৈক্য"। এখন পর্যন্তত এই মতৈক্যকে দু'পারের মধ্যে সকল আলোচনার ভিত্তি বলে মনে করা হয়।

    তাইওয়ানের সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কিত মুল-ভূভাগের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে থাং শু পেই গত শতাব্দীর ৯০'দশকে ঘন ঘনভাবে তাইওয়ান ও মুল-ভূভাগে চলাচল করেন। তিনি তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিনিময় বিষয়ক তহবিল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনা করেন। তাঁর আচরণ তাইওয়ানী জনগণের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

    ১৯৯৪ সালে থাং শু পেই তাইওয়ান সফর করেন। তাইওয়ানের মাটিতে দাঁড়াতেই তাঁর প্রতি স্বাধীন তাইওয়ানবাদী প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু তিনি শান্তভাবে বললেন যে, তা অতিথেয়তার পদ্ধতি নয়। তিনি বলেন,ৱ

    আমি সংযমে বজায় রেখেছিলাম। আমি অনেক আগে জেনেছিলাম যে, তাইওয়ানের এই বিভিক্তিমূলক শক্তি রয়েছে। যদিও তারা আমার ওপর গালাগালি দিচ্ছিল, আমি স্থিরভাবে সামনে যাচ্ছিলাম।

    যারা থাং শু পেইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা সবাই তাঁকে ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিনিময় বিষয়ক তহবিল প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহা-পরিচালক চিয়াও রেন হো যথাক্রমে থাং শু পেইয়ের সঙ্গে চারবার করে আলোচনা করেন। তাঁর চোখে থাং শু পেই খুব চতুর এবং কথা বলার সময় থাং শু পেইয়ের কৌশল আছে। তিনি বলেন,  

    প্রতিদিন সকালে থাং শু পেই বিছনা থেকে উঠার পর তাইওয়ানের রেডিও অনুষ্ঠান শুনেন এবং তাইওয়ানের টিভি অনুষ্ঠান দেখেন। তিনি নিজেকে পুরোপুরিভাবে তাইওয়ানের সমাজের পরিবেশ রাখেন। আমি তাঁকে শ্রদ্ধ করি।

   ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে আমাদের সাংবাদিক থাং শু পেইকে সাক্ষত্কার নেয়ার সময় তিনি দেখতে একজন স্বাধারণ পন্ডিত। ৮ বছর আগে তিনি অবসর নিয়েছেন।

    কিন্তু থাং শু পেই জনগণের চোখের সামনে হারিয়ে যায়নি। তাঁর নাম মাঝেমাঝে নানা ধরণের পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে দেখা দেয়। দু'পারের সম্পর্কে কোন পরিবর্তন দেখা দিলে সাংবাদিকরা তাঁর মতামত শুনতে ইচ্ছুক।

    থাং শু পেই কী তাঁর তাইওয়ানের প্রীতি ত্যাগ করতে পারেন? তিনি বলেন, অবসর নেয়ার পর তিনি অর্ধেক সময় ব্যবহার করে দু'পারের সম্পর্কে রাখেন। মাঝামাঝে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য তাইওয়ানের সমস্যা ব্যাখ্যা করেন, মাঝেমাঝে তিনি দু'পারের সম্পর্ক বিষয় সেমিনারে অংশ নেন। প্রতিদিন সকালে তিনি সময়মত টিভির মাধ্যমে তাইওয়ানের অনুষ্ঠানে দেখেন। পত্রিকা দেখার সময় দু'পারের সম্পর্ক সম্পর্কিত খবরগুলো হচ্ছে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়।

    তাইওয়ান সমস্যা প্রসঙ্গে থাং শু পেইয়ের অনেক অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান তিনি একটি স্মৃতিকথা লিখছেন। এ স্মৃতিকথায় তাঁর ২০ বছরের অভিজ্ঞতা লিবিবদ্ধ করা হয়। তিনি বলেন,

    তাইওয়ান সমস্যা সমাধান করা এবং দেশের একীকরণ বাস্তবায়ন হচ্ছে চীনাদের একটি পবিত্র ব্যাপার। আমি খুব খুশি যে এই কাজে অংশ নিতে পারি। (লিলি)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China