
মুরাদ
আমার নাম মুরাদ , ছোটবেলা থেকেই রেডিওয়ের অনুষ্ঠান শোনাই আমার সখ। একদিন রেডিওসেট খুলতে যে একটি বাংলা গান কানে এলো তা বাংলা দেশের শিল্পীদের গাওয়া বাংলা গান থেকে আলাদা । গানের কথা তেমন পরিস্কার নয়। গান শেষে উপস্থাপক যখন বললেন এতক্ষণ আপনারা চীনা শিল্পীদের কন্ঠে গাওয় একটি বাংলা গান শুনলেন তখন বুঝলাম, এটা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান । এরপর আমি হলাম চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিয়মিত শ্রোতা ।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে বৃত্তি পেয়ে আমি চীনে আসি উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করতে । আমি তবলা বাজাতে জানি , তাই বাংলাদেশের দূতাবাসে নাচগানের আসর হলে তবলা বাজাতে আমার ডাক পড়ে । সি আর আইয়ের বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সি আর আই ও বাংলাদেশর দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে সি আর আইয়ের অফিসভবনে একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । আমি শিল্পকলা বিভাগের ছাত্র , মঞ্চ ডিজাইন আমার শিখার বিষয় ।তাই বাংলাদেশর দূতাবাসের অনুরোধে রাতে জেগে আমি একটি লাল ব্যানারের উপরে বাংলায় শ্লোগান লিখলাম। পরদিন অভিনয়ের বেশভূষা ও উপকরণ নিয়ে প্রথম বাসে তারপর টিওবে করে সি আর আইয়ের অফিসভবনে গিলাম এবং সুন্দর ভাবে মঞ্চ সাজালাম ।
বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সি আর আইয়ের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন । আমি মঞ্চে বসে শিল্পীদের জন্য তবলা বাজালাম । কিছুক্ষণ পর মুখ আমার ঘামে ভিজে গেল । তা দেখে বাংলা বিভাগের পরিচালক জংসাওলি গভীরভাবে মুগ্ধ হলেন । অনুষ্ঠান শেষে তিনি আমাকে নিয়ে ২০ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব দিলে আমি আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করলাম । দিনখানেক পর বাংলা বিভাগের স্টুডিওতে বেতার-তরঙ্গের সাহায্যে আমি আমার মা-বাবা , আত্মীয়সজন শিক্ষক- সহপাঠী এবং বন্ধুবান্ধবদের পেইচিয়ে আমার লেখাপড়া ও জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে বললাম । এই ভাবে সি আর আইয়ের সংগে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।

মুরাদ ও প্রেমার বিয়ের অনুষ্ঠান
২০০৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের দূতাবাসের আয়োজিত সুস্বাদু খাবার উপভোগের একটি অনুষ্ঠানে শাড়ি পরা জনখানেক চীনা মেয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল । তাদের মধ্যে একটি মেয়ের চেহারা হুবহু ১২ বছর আগে আমার আঁকা মেয়ের ছবির মত। আমার বুকে আবেগের তবলা মুহুর্তের মধ্যে বেজে উঠল। মনের ব্যাকুলতা সামলে তার সংগে আলাপ করে জানলাম ,তার নাম খং জিয়া জিয়া , সি আর আইয়ের বাংলা বিভাগের কর্মী । এরপর তার সংগে মাঝে মাঝে আমার দেখা-সাক্ষাত হয়। অবশেষে আমি তার কোমল হৃদয় জয় করতে সক্ষম হলাম । আমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে , খং জিয়া জিয়া বাংলায় কথা বলতে পারে বলে ও আমার মায়েরও পছন্দ হয়েছে , আমার মা খং জিয়া জিয়াকে যে একটি বাংলা নাম দিয়েছে তা হলে নুর জাহান প্রেমা । খং জিয়া জিয়ার সংগে আমার বিয়ে হবার পর তার সহকর্মীরা আমাকে সি আর আইয়ের জামাই বলে ডাকে। আমার স্ত্রী খং জিয়া জিয়া এখন প্রতি সপ্তাহ বৃহস্পতিবার চলুন বেড়িয়ে আসি নামে পর্যটন বিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে । আমার মা-বাবা ও আত্মীয়সজন এখন নিয়মিত তার পরিবেশিত অনুষ্ঠান শুনে । প্রতিসপ্তহে তার অনুষ্ঠান শুনতে শুনতেই যেন চীনের দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করে ।
কালক্রমে সি আর আই বাংলাবিভাগের সংগে আমার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগল ।
বাংলাদেশের "শান্ত মারিয়াম" চীনা ভাষা পড়াতে আগ্রহী ।"শান্ত মারিয়াম"এর ডিরেক্টর হিসেবে আমি চীনের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের চীনা ভাষা প্রচলন বিভাগ ও সি আর আই বাংলা বিভাগের সংগে "শান্ত মারিয়াম "এ কনফুসিয়াস ক্লাসরুম চালু করার বিষয়ে আলোচনা করে গত মাসের শেষ দিকে একটি ত্রিপক্ষীয় সহযোগিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছি । এ চুকি অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চ মাসে "শান্ত মারিয়াম "এ চীনা ভাষার শিক্ষাকোর্স শুরু হবে ।
আগামী পয়েলা জানুয়ারী সি আর আইয় বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। আমি ঐকান্তিকভাবে আশা করি , সি আর আইয়ের বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান দিন দিন আরো চিত্তাকর্ষক হবে এবং বাংলা বিভাগের শ্রোতাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে। |