v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
তাই জাতির এক বৃদ্ধের সুখী জীবনযাপন
2009-02-17 19:23:03
মেন ফেং গ্রাম ইউনান প্রদেশের দক্ষিণাংশের চিন পিং জেলায় অবস্থিত । গ্রামটি চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্তের চিন স্যুই নদীর সীমান্ত চেক পয়েন্ট থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে । দু'দেশের এ সীমান্ত চেক পয়েন্ট ভিয়েতনামের লান চৌ প্রদেশের অধিবাসীদের কাছে খুব পরিচিত । চিন স্যুই হো - মা লু থাং নামে দু'দেশের মৈত্রী সেতু দু'দেশের সীমান্ত বাণিজ্য ও বন্ধুত্ব উন্নয়নের পরিচায়ক ।

মেন ফেং গ্রাম পাহাড় ও নদ-নদীতে ঘেরা । গ্রাম একটি মহাসড়কের কারণে দুই অংশে বিভক্ত । নদী ও মহাসড়কের ধারে এবং পাহাড়ের উপত্যকায় সর্বত্রই কলা ও রাবাব বাগান দেখা যায় ।

সকাল বেলায় যখন সংবাদদাতা গ্রামের সামনে এলেন , তখন ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে । বাইরে যেখানে সেখানে কলা ও রাবাবের সুগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ।

গ্রামের মুরগির আওয়াজ সর্বত্রই শোনা যাচ্ছিল । গ্রাম ভোরের শান্তিতে ভরা । সড়কের দু'পাশে সদ্য কাটা সবুজ কলার কাদি থরে থরে সাজানো রয়েছে । এ সব কলা পেইচিং ও শাংহাইয়ে বিক্রি করা হবে ।

সংবাদদাতা সড়কের পাশে অবস্থিত দু'তলা একটি বাড়ির সামনে এলেন । বাড়িটি সুন্দর , ইউরোপীয়ান স্টাইলের ডিজাইন । বাড়ির বাইরের কয়েকটি রেলিং এ সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছাপ । দশ বারোটি ধাপের ভিত্তিতে নির্মিত বাড়িটি মাটির উপরে দু' মিটারেরও বেশি উঁচুতে । বাড়ির নীচে একটি ভান্ডার রয়েছে ।

কালো রঙের একজন বৃদ্ধ দরজার সামনে বসে বাঁশের পিঁড়ি বানাচ্ছেন । তার কাছে বেশ কয়েকটি রঙ্গিন বাঁশের পিঁড়ি বানানো রয়েছে । বৃদ্ধের নাম তাও চিয়া চিন , তার বয়স ৫৫ । তাই জাতির । তার বাড়িতে তিন প্রজন্মের মোট ৬জন বাস করছে ।

বৃদ্ধের সঙ্গে সংবাদদাতার কথাবার্তা শুরু হয় । বাড়িটি ২০০৫ সালে নির্মিত । তা নির্মাণের জন্য ৩ লাখ ইউয়ান ব্যয় হয়েছে । এটা সাধারণ কৃষক পরিবারের জন্য সত্যিই সহজ নয় । বাড়িটি একেবারে বৃদ্ধ ও তার ছেলের নিজের ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে । বৃদ্ধ তাও চিয়া চিন বলেন ,

তিনি দক্ষিণ পূর্ব চীনের ফু চিয়ান প্রদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন । এ প্রদেশের রাজধানী ফু চৌ ও সিয়া মেন শহরে প্রচুর ইউরোপীয়ন স্টাইলের বাড়িঘর দেখা যায় । ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর ভিত্তিতে তাই জাতির নতুন ধরনের বাঁশের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে । তিনি বলেন , আগে তাই জাতির বাড়ির নীচের কক্ষে প্রধানতঃ হাঁস ও মুরগি পালন করা হতো । এখন তার বাড়ির নীচের কক্ষ গাড়ি রাখার ভান্ডারে পরিণত হয়েছে ।

যখন স্বাগতিক ও অতিথির মধ্যে কথাবার্তা চলছিল , তখন দু'জন অল্পবয়সী বাইরে থেকে ঘরে এলেন । তারা বৃদ্ধের ছেলে ও ছেলের বউ । কলা বাগানে কাজ শেষে তারা সদ্য ফিরে এসেছেন । বৃদ্ধের ছেলে ফ্যাশন্যবল কাপড় পরছেন ।

তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , এখন তার পরিবারের কলা ও রাবাব বাগানের কাজ বাইরের শ্রমিকরা করছে । তিনি শুধু দেখাশুনা করছেন ।

বৃদ্ধের বাড়ি উত্সাহব্যঞ্জক পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠল । তিনি বলেন , এখন তাদের পরিবারের উপার্জন কলা ও রাবার চাষের ওপর নির্ভর করে । গত বছর তার পরিবারের খামারে ১০ হাজারেরও বেশি কলা এবং ৩ হাজারটি রাবার গাছের মাধ্যমে তারা ২ লাখ ইউয়ানেরও বেশি আয় করেছেন । এ ছাড়াও তারা কাছের গ্রামেও তিন হাজার রাবার গাছের একটি বাগান গড়ে তুলেছে । এখন এ সব গাছ থেকে রাবার উত্পাদিত হতে শুরু হয়েছে । বাম্পার ফসল অর্জন করা হবে এবং আর্থিক সংকট শিগগিরি চলে যাবে বলে তিনি আশা করছেন । ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ রাবারের মূল্য অনেক হ্রাস পেয়েছে । সীমান্তে বসবাসকারী তাই জাতির গ্রামবাসীরা আর্থিক সংকটের জন্য খুব চিন্তিত । এখন তাই জাতির গ্রামে অনেকেই সচ্ছল হয়ে উঠেছেন । এক পরিবারের ২ লাখ ইউয়ানেরও বেশি বার্ষিক আয় সাধারণ ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছে । তাই জাতির গ্রামে মোট ১৫০টি পরিবার আছে । তাদের মধ্যে অনেকের বার্ষিক আয় ২ লাখ ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে ।

সচ্ছল হয়ে উঠার অভিজ্ঞতা প্রসংগে বৃদ্ধ তাও বলেন ,

তাই জাতির লোকজন যে সচ্ছল হয়ে উঠেছে , তার মূলে রয়েছে সরকারের সাহায্য এবং গ্রামবাসীদের নিজেদের প্রচেষ্টা । প্রথম দিকে ব্যবসার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না । তারা কৃষি ও পার্শ্ব শিল্পের মাধ্যমে সচ্ছল হয়ে উঠার জন্য খুব গৌরব অনুভব করেছেন ।

বৃদ্ধ তাওয়ের স্ত্রী লু সু ফাং একজন কর্মঠ মহিলা । পরিবারের উপার্জন করা এবং সচ্ছল হয়ে উঠার ব্যাপারে তিনি গত ৩০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে নিজের স্বামীকে সমর্থন করে এসেছেন । ১৯৯৫ সালে তিনি জেলার একজন দক্ষ মহিলা বলে নির্বাচিত হন ।

১৯৮৪ সালে বৃদ্ধ তাও গ্রামে সর্বাগ্রে কলা ও রবাব চাষ করতে শুরু করেন । সে বছর ১ শ'টি কলা গাছ তার পরিবারের জন্য ৫ হাজার ইউয়ান আয় দিয়েছে ।

এখন বৃদ্ধের পরিবারে তার ছেলে ও ছেলের বউ কৃষি কাজ করছেন । বৃদ্ধ ও তার স্ত্রী প্রতি দিন বাঁশের পিঁড়ি বানান । এ ভাবে তারা প্রতি দিন ৩০ ইউয়ান আয় করতে পারেন ।

বৃদ্ধ তাও বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন । যখন তাই জাতির উত্সব পালিত হয় , তখন তিনি লোকজনের নাচ গান পরিবেশনের জন্য আনন্দের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজান ।

(থান ইয়াও খাং)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China