v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
ছোট জায়গা থেকে বড় পৃথীবিতে প্রবেশ করা: লুং ইয়ুং থু
2009-02-16 20:54:28

    লুং ইয়ুং থু , এ নাম চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত । বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার আলোচনার শীর্ষ প্রতিনিধি হিসেবে এ নাম চীনে সবাই জানেন । যদিও অধিকাংশ চীনাদের চোখে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদান করা হল লুং ইয়ুং থুয়ের জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা , তবে লুং ইয়ু থুয়ের জন্য বিশ্ব মঞ্চে তার অভিনয় শেষ হয় নি ।

    লুং ইয়ুং থু ১৯৪৩ সালে ছাং শা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন । কুই চৌ প্রদেশে তিনি বড় হন । তিনি নিজেকে পাহাড় থেকে আসা দরিদ্র ছেলে হিসেবে পরিচয় দেন । তিনি বলেন

    আমি যখন ক্ষুধা বোধ করতাম , তখন অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতাম । ছোটবেলায় পর্যাপ্ত খাবারও পেতামনা । তাই কুমড়া খেতাম । সবসময় কুমড়া খাওয়ার কারণে পরে কুমড়ার গন্ধ পেলেই আমার বিরক্তি লাগতো ।

    তবে তিনি সারা জীবন পাহাড়ে বন্দী থাকেন নি । আস্তে আস্তে তিনি বাইরের পৃথীবিতে এসেছেন ।

    তার ভাগ্য পরিবর্তনের কারণ হল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রধান সাবজেক্টের পরিবর্তন । কুই চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় লুং ইয়ুং থু চীনা ভাষার মাধ্যমে অধ্যায়ন করছিলেন । তবে শিক্ষকের প্রস্তাবে তিনি ইংরেজী ভাষা বিভাগে পরিবর্তন করেন । তিনি বলেন :   

    আমার একজন ইংরেজী ভাষা শিক্ষক জানেন আমার ইংরেজী ভালো এবং সাহিত্য পছন্দ করি । তিনি আমাকে বলেন , যদি তুমি ইংরেজী বিভাগে লেখাপড়া করে , তাহলে ভিলিয়াম শেক্সপিয়ার ও চারলস ডিকেনস-এর বই পড়তে পারববে । তা তোমার সাহিত্য গবেষণার জন্য অনেক সহায়ক হবে । তাই আমি ইংরেজী ভাষা বিভাগে লেখাপড়া করতে শুরু করি । পরে ইংরেজী হয়ে যার আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতিয়ার । আমার ব্রত সম্প্রসারণের জন্য ইংরেজীও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ।

    ইংরেজী ভাষা শিখেছেন বলে ১৯৬৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেয়ার পর তাকে বিদেশি বাণিজ্য ও অর্থনীতি সহযোগিতা বিভাগে পাঠানো হয় । তখন এ বিভাগের জন্য বিদেশি ভাষার লোকের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ।

    ঠিক ইংরেজী ভাষার সুবিধার কারণে ১৯৭৩ সালে লুং ইয়ুং থু নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দফা পশ্চিমা দেশে লেখাপড়ার সুযোগ পান । তিনি ব্রিটেনের লন্ডন অর্থনীতি ইন্সটিটিউটে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর অধ্যায়ন করেন । তিনি বলেন :

    তখন আমার সময়ের লোকেরা বেশি জ্ঞান শিখতে পারতেন না । তবে আমরা মনোযোগ দিয়ে বিদেশে সতর্কতার সঙ্গে পশ্চিমা দেশের অর্থনীতিবিদ্যা শিখতে পেরেছি , পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন জানতে পেরেছি , বাজার অর্থনীতি সম্পর্কিত বিদ্যা শিখতে পেরেছি । যা পরে আন্তর্জাতিক তত্পরতায় আমাদের অংশ নেয়ার জন্য খুবই সহায়ক হয় ।

    লুং ইয়ুং থু বলেন , আমি গল্পনা করে পারি না যে , পরে চীনের বাজার অর্থনীতির বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের যোগ দেয়া ত্বরান্বিত করা আমার চিরদিনের ব্রত হতে পারে ।

    ১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হয়েছে । লুং ইয়ুং থুকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে । পরের সাত বছরে তিনি চীনা প্রতিনিধি দলের দোভাষী ছিলেন , জাতিসংঘের উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তাও ছিলেন । বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে , তিনি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে সমস্যা গবেষণা করতে শিখেছেন । তিনি বলেন :  

    প্রতিবার আমি বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার আগে সে দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর জ্ঞান অর্জন করি , পরে সে দেশের আলোচনা প্রতিনিধির চরিত্র গবেষণা করি । এভাবেই আলোচনা করলে সংস্কৃতি , চরিত্র ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রের অনেক বাধা এড়ানো যায় , ফলে বিস্তার বিষয় নিয়ে আরো গভীরভাবে আলোচনা করা যায় ।

    ১৯৯২ সালে লুং ইয়ুং থু চীনের বিদেশি আর্থ-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান হিসেবে শুল্ক হার বাণিজ্য চুক্তিতে চীনের স্বাক্ষরিত দেশের অবস্থান পুনরুদ্ধারের আলোচনা দলে যোগ দেন । তখন সে আলোচনা ৬ বছর ধরে স্থায়ী ছিল ।

    শুল্ক হার বাণিজ্য চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উত্স হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বিশ্বের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক সমন্বয় করার তিনটি প্রধান সংস্থা হিসেবে বলা হয় । চীন আসলে শুল্ক হার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দেশ ছিল । তবে ১৯৫০ সালের মার্চে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে চীনের নামে সে চুক্তি প্রত্যাহার করে । ১৯৮৬ সালে চীন শুল্ক হার বাণিজ্য চুক্তি সংস্থাকে দেশের অবস্থান পুনরুদ্ধারের আবেদন করে । তবে সংশ্লিষ্ট আলোচনা শুরুর পর দীর্ঘসময় অচলাবস্থায় পড়ে । এর প্রধান কারণ হচ্ছে যদিও চীন কয়েক বছরের সংস্কার করেছে , তবে বাজার অর্থনীতি করার কথা স্বীকার করে নি । ঠিক লুং ইয়ুং থু আলোচনাকারী দলে যোগদানের বছরে চীন অবশেষে স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে যে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি উন্নয়ন করবে ।

    বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ১৯৯৬ সালের পয়লা জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শুল্ক হার বাণিজ্য চুক্তি সংস্থার স্থলাভিক্তি হয়েছে । তাই সে সংস্থায় চীনের স্বাক্ষরিত দেশের অবস্থান পুনরুদ্ধারের আলোচনাও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার আলোচনায় পরিণত হয়েছে । লুং ইয়ুং থুকে এ আলোচনায় শীর্ষ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে । পরের ছয় বছরে লুং ইয়ুং থু চীনের পক্ষ থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ৩৭টি সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছেন । এ প্রক্রিয়া বললে যেন একটি বড় বই পড়ার মত হবে ।  

    ২০০১ সালের নভেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চতুর্থ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের চেয়ারম্যান , কাতারের অর্থ , অর্থনীতি ও বাণিজ্য মন্ত্রী ইউসুফ হুসেন কামাল চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৪৩টি সদস্য হওয়ার কথা ঘোষণা করেন । লুং ইয়ুং থু বলেন , সে মুহুর্তে তিনি স্বাস্তির নিঃস্বাস ফেলেছেন ।  

    ২০০১ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে । উন্মুক্তকরণের বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে । বিশেষ করে বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার আলোচনার মাধ্যমে অনেক শিল্পের সংস্কার করা হয়েছে । তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার আগে আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি ।

    এখন বিশ্বের বড় মঞ্চে লুং ইয়ুং থু খুব উজ্জ্বল একটি তারকার মত । সাফল্যের কারণ সম্পর্কে লুং ইয়ুং থু বলেন , ছোট জায়গা থেকে আসা লোকেরা সফল হতে চাইলে দশ গুণের বেশি চেষ্টা করতে হবে । তার সারা জীবনে তিনি এভাবেই ধাপে ধাপে ছোট জায়গা থেকে বড় পৃথীবিতে প্রবেশ করেছেন।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China